Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
COVID-19

প্রিয়জন অন্য হাসপাতালে, খবর নিতেও কেন ব্রাত্য কোভিড-চিকিৎসক

চিঠি পেয়ে কী করা উচিত, এ নিয়ে খানিক ধন্দেও পড়ে গিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২১ ০৫:৫৪
Share: Save:

বর্ষীয়ান এক সরকারি চিকিৎসকের স্বাস্থ্য দফতরকে দেওয়া চিঠি কোভিড ওয়ার্ডের নিয়ম নিয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দফতরকে। চিঠি পেয়ে কী করা উচিত, এ নিয়ে খানিক ধন্দেও পড়ে গিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

নিয়মানুসারে, কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সঙ্গে নিকট পরিজনদের দেখা করার অনুমতি মেলে না। রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার, তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার একমাত্র উপায় মোবাইলে ফোন করা বা ভিডিয়ো কল করা। কিন্তু বহু রোগী ভেন্টিলেশনে থাকেন অথবা কথা বলার মতো অবস্থায় থাকেন না। সে ক্ষেত্রে, ওয়ার্ডের চিকিৎসক ও নার্সদের সময় ও মর্জির উপরেই নির্ভরশীল থাকতে হয় পরিবারকে। কারণ, ডাক্তার-নার্সদের আবার সব সময়ে পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে হামেশাই অভিযোগ ওঠে, রোগীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কোনও খবর মিলছে না। কিংবা রোগীর অবস্থার অবনতি হচ্ছে শুনে বাড়ির লোক চেষ্টা করেও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না।

এমন পরিস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী পত্রদাতা, নিজে রাজ্যের একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান। তাঁর অভিযোগ, অসংখ্য কোভিড রোগীকে পরিষেবা দেওয়ার পরেও সম্প্রতি তাঁর প্রিয়জনের চিকিৎসা নিয়ে একই রকম অন্ধকারে থাকার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

তিনি দফতরে চিঠি দিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, চিকিৎসকেরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে চরম ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত কোভিড ওয়ার্ডে কাজ করছেন। রোগীকে সুস্থ করার চেষ্টা করছেন। তা হলে তাঁদের কোনও নিকট আত্মীয় অন্য সরকারি হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি হলে সেখানকার চিকিৎসকের সঙ্গে কেন দেখা করতে দেওয়া হবে না রোগীর কোনও আত্মীয়-চিকিৎসককে?

মুর্শিদাবাদের বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান তুষারকান্তি সাহা গত ৭ মে এই মর্মে চিঠি দিয়েছেন রাজ্য স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষা মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে ৫ মে থেকে তাঁর স্ত্রী ভর্তি আছেন।

গত ৩৬ বছর ধরে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত তুষারকান্তিবাবুর বয়স এখন প্রায় চৌষট্টি। তাঁর স্ত্রীও ষাট পেরিয়েছেন। ২০১৪ সাল থেকে ওই চিকিৎসক বহরমপুরের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জানান, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়়ার পর থেকে তাঁর হাসপাতালে প্রচুর কোভিড রোগী আসছেন। শিশু বিভাগেও পজ়িটিভ রোগী ভর্তি হচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে তিনি ও তাঁর বিভাগের ৬-৭ জন ডাক্তার সংক্রমিত হন। তিনি করোনামুক্ত হওয়ার শংসাপত্র পান ২৯ এপ্রিল। এর পরেই তাঁর পরিবারের সদস্যেরা একে একে সংক্রমিত হন।

তুষারকান্তিবাবু বলেন, ‘‘স্ত্রীর অক্সিজেনের মাত্রা নামতে থাকলে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করি। ওর সঙ্গে মোবাইল ছিল, কিন্তু নিজে কথা বলার মতো অবস্থায় ছিল না। আমি যেহেতু সরকারি চিকিৎসক এবং কোভিড ওয়ার্ডে ডিউটি করি, তাই স্ত্রীর ওয়ার্ডে ঢুকে সেখানকার ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করব ভেবেছিলাম।’’

তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওই হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডের গেটেই চিকিৎসকদের আমার পরিচয় জানিয়েছিলাম। আই কার্ডও দেখিয়েছি। তাঁরা পরেও তাঁরা কার্যত আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। এমনকি তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলেন, ‘চলে যান। এখানে ঢোকার নিয়ম নেই!’ আমার প্রশ্ন, এত বছর কাজ করার পরে এবং কোভিডের ডিউটি করার পরে এটাই কি আমার প্রাপ্য?’’

বিষয়টি স্বাস্থ্যকর্তাদের ভাবিয়েছে। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কথায়, ‘‘ওঁর যুক্তি অকাট্য। কিন্তু আমরা নিয়মের জালে আটকে পড়েছি। তবে ওই প্রবীণ চিকিৎসকের বক্তব্যকে মর্যাদা দিয়ে আমরা তাঁকে কোভিড ওয়ার্ডে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার বিশেষ অনুমতি দিতেই পারি।’’

কিন্তু তুষারকান্তিবাবু বলছেন, ‘‘শুধু আমার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা চাই না। আমি চাই, নিয়ম সংশোধন করে সব সরকারি চিকিৎসকের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারে ছাড়়পত্র দিয়ে নতুন নিয়ম চালু হোক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy