Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

কলেজের মাঠে অন্য জীবনের গান

মঞ্চে অনুষ্ঠান বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের। রবিবার, সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

মঞ্চে অনুষ্ঠান বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের। রবিবার, সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:১৫
Share: Save:

ঝড় উঠেছে। নদীতে তখন বড় বড় ঢেউয়ের তোড়ে বেসামাল নৌকা। তার মধ্যেই শক্ত হাতে হাল ধরে নৌকা চালাচ্ছে ওরা। সঙ্গে গাইছে জীবনযুদ্ধ জয়ের গান। মিনিট চারেকের একটি নৃত্যনাট্য। তা শেষ হতেই দর্শকাসনে হাততালির বন্যা। মঞ্চে থাকা কুশীলবদের মুখে তখন অনাবিল হাসি।

রবিবার সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজের মাঠে সারাদিনব্যাপী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন কর্তৃপক্ষ। সেখানেই ওই নৃত্যনাট্যে অভিনয় করল রাজারহাটের একটি হোমের বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্নেরা। এ ছাড়াও সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজের ডিপার্টমেন্ট অফ সোশ্যাল ওয়ার্ক এবং ন্যাশনাল সোশ্যাল ইউনিটের উদ্যোগে আরও কয়েকটি হোমের বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন পড়ুয়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার আটটি প্রত্যন্ত গ্রামের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পড়ুয়াদের অংশগ্রহণে মেতে উঠল সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজের মাঠ। সেখানে নানা ধরনের মজার খেলায় মেতে উঠেছিল ওরা। শিশু নিগ্রহ রুখতে সচেতনতার বার্তা দিতে পথনাটিকাও ছিল এ দিন।

এ দিনের অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু ছিল ‘শিশু অধিকার এবং শিশু সুরক্ষা’। সেন্ট জ়েভিয়ার্সের অধ্যক্ষ ফাদার ডমিনিক স্যাভিও বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা এবং বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন পড়ুয়ারা কিন্তু পড়াশোনার পাশাপাশি খেলা এবং নাচগানেও পারদর্শী। ওদের একটু যত্ন এবং উৎসাহ দরকার। এই ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলে ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে।’’ কলেজের এক শিক্ষক জানান, প্রত্যন্ত গ্রামের এই সব পড়ুয়াদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন করার প্রয়াস ছিল এ দিনের অনুষ্ঠানে। পুরো চত্বর জুড়ে শিশুদের অধিকার এবং শিশু সুরক্ষা নিয়ে লেখা বিভিন্ন পোস্টার দেখা গেল ঘুরতে।

সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজের ৩০০ জন পড়ুয়া এই অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকায় ছিলেন। কলেজের বিভিন্ন বিভাগ থেকে এ দিন মাঠে স্টল খোলা হয়েছিল। সেই স্টলে ছিল নানাধরনের খেলার ব্যবস্থাও। পদার্থবিদ্যা বিভাগের এক ছাত্র সাগ্নিক রায় বলেন, ‘‘আমাদের স্টলে কিছু পাজ়েল গেম ছিল। ছোট ছোট পড়ুয়াদের উপস্থিত বুদ্ধি দেখে অবাক হতে হয়। উপহার হিসেবে সবার হাতেই টফি তুলে দেওয়া হয়েছে।’’ কলেজের অন্য পড়ুয়ারা জানান, বাইরে থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা পড়ুয়াদের সঙ্গে মিশে তাঁদের উপলব্ধি, ঠিক মতো প্রশিক্ষণ পেলে তারা বহু দূর পর্যন্ত এগোতে পারবে।

রাজারহাটের ওই হোমের এক আধিকারিক সুব্রত সরকার জানান, শুধু নাচ-গান-অভিনয়ই নয়, ওরা কেউ কেউ খুব সুন্দর আসন বুনতে পারে। কেউ আবার শাড়িতে ছবি আঁকতে এবং গামছা বুনতেও পারে। সুব্রত বলেন, ‘‘ওদের এই নৃত্যনাট্যের অভিনয়ে সড়গড় হতে অন্যদের থেকে একটু বেশি সময়ই লেগেছে। তবু শেখার আগ্রহ ছিল সকলের। একটু ধরে শেখালেই আর পাঁচ জন পড়ুয়ার মতো ওরাও যে পারে, তা এ দিন মঞ্চেই দেখাল ওরা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

ST. Xaviers College Dance Program
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE