Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
21 July TMC Rally

বৃষ্টিতেই বিপত্তি সভায়, মাঝপথেই বাড়ির দিকে অনেকে

সভার মাঝপথেই ফেরার চিত্র নতুন নয়। নানা সভা-সমাবেশেই এমন অনেককে আগেভাগে বাড়ির পথ ধরতে দেখা যায়। কিন্তু অন্তত দলনেত্রীর বক্তৃতা শুরু হওয়ার অপেক্ষা করা হয় সে ক্ষেত্রে। তবে এ বার দলনেত্রী মঞ্চে ওঠার আগেই ফিরেছেন অনেকে।

সভামুখী: হাওড়া স্টেশন থেকে ধর্মতলার পথে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। রবিবার, ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুলে।

সভামুখী: হাওড়া স্টেশন থেকে ধর্মতলার পথে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। রবিবার, ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুলে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৪ ০৬:২৫
Share: Save:

বেলা সাড়ে ১২টার মেট্রো চ্যানেল। অনতিদূরেই মঞ্চের উপরে তখন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে স্লোগান দিচ্ছেন রাজ্যের এক মন্ত্রী। ঘোষণা হয়ে গিয়েছে যে, বক্তৃতা দিতে মঞ্চে উঠছেন মমতা। কিন্তু মেট্রো চ্যানেলের সামনের রাস্তায় দেখা গেল উল্টো ছবি। অনেকেই বিপরীত দিকে হাঁটছেন। মঞ্চের অভিমুখ কোন দিকে, বোঝা যাচ্ছে না। অনেকটা ফাঁকা হয়ে আসা সেই জায়গায় মুর্শিদাবাদ থেকে আসা একটি দলের এক জন বললেন, ‘‘দু’দিন তো কলকাতায় হল। এ বার ফিরতে হবে। নেতাদেরও বলা আছে। কেউ তাই আটকাননি।’’ একই রকম চিত্র ধর্মতলা মোড়ের কাছে সাবেক মেট্রো সিনেমা হলের সামনেও। সভামঞ্চের এত কাছের ওই জায়গাও কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা। তার মধ্যেও কেউ কেউ জমা জলে দাঁড়িয়ে দূর থেকে জায়ান্ট স্ক্রিনে চোখ রেখেছেন। ভিড় এমন অবিন্যস্ত কেন? সভায় আসা পুরসভার মেয়র পারিষদ বললেন, ‘‘বৃষ্টিতেই সব এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। তবে মঞ্চের কাছে কত লোক হল, সেটা বড় ব্যাপার নয়। ময়দান জুড়ে আজ সব দিদির লোক।’’

সভার মাঝপথেই ফেরার চিত্র নতুন নয়। নানা সভা-সমাবেশেই এমন অনেককে আগেভাগে বাড়ির পথ ধরতে দেখা যায়। কিন্তু অন্তত দলনেত্রীর বক্তৃতা শুরু হওয়ার অপেক্ষা করা হয় সে ক্ষেত্রে। তবে এ বার দলনেত্রী মঞ্চে ওঠার আগেই ফিরেছেন অনেকে। যা নিয়ে সভায় আসা দক্ষিণ ২৪ পরগনার নেতা সওকত মোল্লা বলছিলেন, ‘‘কাউকে তো জোর করে বসে থাকতে বলা যায় না। অনেকেই ফিরে গিয়েছেন। তবে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের উৎসাহে খামতি ছিল না।’’

এ দিন সকাল থেকেই দলে দলে শহরের নানা প্রান্ত থেকে ধর্মতলার দিকে গিয়েছেন সমর্থকেরা। কেউ নানা কায়দায় মোটরবাইক সাজিয়ে নিয়ে এসেছেন। কেউ বাড়ি থেকে বেরোনো ইস্তক প্রায় দশ ঘণ্টা হুইলচেয়ারে বসেই কাটিয়ে দিয়েছেন। সারা গায়ে সোনালি রঙ মেখে রাজ্য সরকারের কর্মসূচির প্রচার করতে যেমন দেখা গিয়েছে, তেমনই হাওয়াই চটি বুকে জড়িয়েও সভায় আসতে দেখা গিয়েছে কাউকে কাউকে। কলকাতা পুরসভার ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আবার ভাঁড়ের আদলে কাট আউট তৈরি করে আনা হয়েছিল। তাতে লেখা ‘লক্ষীর ভাণ্ডার’। ভাঁড়ের মুখে গুঁজে রাখা দুটো পাঁচশো টাকার নোট। চন্দ্রকোনা থেকে আসা তৃণাঙ্কুর পাল নামে এক জন আবার মশা সেজেছেন। তিনি বললেন, ‘‘বর্ষায় ডেঙ্গি বড় চিন্তার ব্যাপার। স্বাস্থ্য সচেতনতার বার্তা দিতেই মশা সেজেছি।’’ গায়ে সোনালি রঙ মেখে কুলপি থানা এলাকা থেকে আসা গোপাল মণ্ডল বললেন, ‘‘প্রতি বারই কিছু না কিছু সাজি। এত ভিড়ের মধ্যে আলাদা করে চোখে পড়তে চাই।’’

পুলিশ জানাচ্ছে, এই ভিড়ের আন্দাজ করে অনেকেই শনিবার রাত থেকে মঞ্চের কাছে এসে ঘুমিয়েছেন। সকালে দু’টি বড় মিছিলের একটি আসে শ্যামবাজারের দিক থেকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ হয়ে। অন্যটি আসে হাজরা মোড় থেকে জওহরলাল নেহরু রোড ধরে। এ ছাড়া, একাধিক ছোট মিছিল এসেছে শিয়ালদহ স্টেশন আর হাওড়া সেতুর দিক থেকে। তবে গত বারের মতো এ বার আর কোনও গাড়িই উঠতে দেওয়া হয়নি পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুলের উপরে। পার্ক স্ট্রিট মোড় থেকে মেয়ো রোড দিয়ে বেশির ভাগ গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে নেমে সভার দিকে গিয়েছেন অনেকেই। সভাস্থলে উপস্থিত কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রথমে জওহরলাল নেহরু রোডের দিকে মিছিল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সময়ে সমস্ত গাড়ি জওহরলাল নেহরু রোডের দিকে ঢোকা বন্ধ রাখা হয়। তার পরে মোটরবাইক আর ছোট গাড়ি ছাড়া হয়েছে। সব শেষে ছাড়া হয়েছে বাস আর লরি। ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত কিছু গাড়ি নিয়ে গিয়ে লোক নামিয়ে ঘুরিয়ে পার্ক স্ট্রিট দিয়ে পার্ক সার্কাসের দিকে বার করে দেওয়া হয়েছে।’’ এর মধ্যেই যাত্রিবাহী কয়েকটি বাস সভায় আসা গাড়ির মধ্যে আটকে পড়ে। একটি অ্যাম্বুল্যান্সকেও আটকে থাকতে দেখা যায় কিছু ক্ষণ। তবে পুলিশ সেটিকে বার করে নিয়ে যায়।

এ দিন ধর্মতলা চত্বরের মতোই ভিড় ছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, জাদুঘর, চিড়িয়াখানার মতো কলকাতার দ্রষ্টব্য স্থানগুলিতে। যা নিয়ে জওহরলাল নেহরু রোডের মুখে ম্যাপ বিক্রি করতে বসা এক যুবক বলছিলেন, ‘‘বাজার তেমন জমল না। দিদি অনেক দেরিতে বলতে উঠলেন। তার মধ্যে এই বৃষ্টি। অনেকে তো আবার চিড়িয়াখানা ছেড়ে এ দিকে এলেনই না।’’ মঞ্চে তখন বক্তৃতা করছেন কেন্দ্রে তৃণমূলের সহযোগী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক তথা সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। ওই যুবক ক্রেতা ধরতে ম্যাপ হাতে তুলে নিয়ে চিৎকার শুরু করলেন, ‘‘এই যে ভারত, ভারত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

21 July TMC Rally TMC TMC Rally Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE