প্রতীকী ছবি।
মাস চারেক আগের সেই সন্ধ্যায় যখন ফোনটা এসেছিল, তখন কাজে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। গঙ্গায় নিজের ছেলের তলিয়ে যাওয়ার খবর সেই ফোনে শোনার পর থেকে নিয়মিত থানা, পুলিশ, বিভিন্ন ঘাট চষে ফেলেছেন। কিন্তু খোঁজ মেলেনি তার। ছেলের দেহ না পেয়ে এত দিন পরেও তার মৃত্যু মেনে নিতে চান না পরিজনেরা। ক্ষীণ আশায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। সোমবার রাতে বানের তোড়ে গঙ্গায় তলিয়ে যাওয়ার খবরে ফের যেন টাটকা হয়ে উঠেছে কিশোর সৌম্যজিৎ সরকারের (১৪) নিখোঁজ হওয়ার সেই স্মৃতি।
দিনটা ছিল চলতি বছরের ২১ জুন। খেলতে যাওয়ার নাম করে বিপিন গাঙ্গুলি রোডের বাড়ি থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়েছিল অষ্টম শ্রেণির সৌম্যজিৎ। পাড়ার মাঠে ফুটবল খেলে দল বেঁধে স্নান করতে বাগবাজারের বিচালি ঘাটে চলে যায় ওই কিশোরেরা। সৌম্যজিতের বাবা বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, ‘‘পুলিশ বলেছিল, অন্য বন্ধুদের সঙ্গে স্নান করতে নেমেছিল ছেলে। কিছু ক্ষণ পর বাকিদের সঙ্গে পাড়ে উঠে আসে। এর পরে আবার ও জলে নামে। আর ওঠেনি।’’ ঘটনার পরে উত্তর বন্দর থানা এবং কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তল্লাশিতেও হদিস মেলেনি সৌম্যজিতের। ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি গঙ্গা তীরবর্তী বিভিন্ন থানাতেও সংবাদ পাঠানো হয়। কিন্তু কোনও খবর আসেনি।
খবর না আসার এমন ঘটনা ঘটেছিল ২০১৯ সালেও। সে বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি নিমতলা ঘাটে গিয়ে বানে ভেসে গিয়েছিলেন ৯ জন। সাত জনকে উদ্ধার করা গেলেও নিখোঁজ ছিলেন দু’জন। তল্লাশি চালিয়ে পরে উদ্ধার হয় এক জনের দেহ। কিন্তু তিন বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও খোঁজ মেলেনি সল্টলেকের বাসিন্দা মিতালি চৌধুরী নামে নিখোঁজ আর এক প্রৌঢ়ার।
কেন এমন হয়? বন্দর এলাকায় বিপর্যয় মোকাবিলার সঙ্গে যুক্ত পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘সাধারণ ভাবে তলিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেহ ভেসে উঠে। জলের তাপমাত্রা বাড়লেই দেহ ভেসে ওঠার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অনেক সময়ে দেহ ভেসে অন্য কোথাও চলে যায়। গঙ্গার নীচে কী আছে, কেউ জানে না! সেখানকার কোথাও এক বার আটকে গেলে দেহ পাওয়াকার্যত অসম্ভব।’’
তবু আশা ছাড়তে নারাজ সৌম্যজিতের বাবা। ছেলের খোঁজে নিয়মিত উত্তর বন্দর থানায় চলে যান তিনি। কোনও সপ্তাহে যেতে না পারলে থানায় ফোন করেন। ছেলের মৃত্যু হয়েছে, সে কথাও মানতে নারাজ সৌম্যজিতের গোটা পরিবার।
স্থানীয় স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সৌম্যজিৎ মা-বাবার একমাত্র সন্তান। বাড়িতে রয়েছেন কাকু-কাকিমা, ঠাকুরমা এবং অন্যেরা। ওই ঘটনার পরে স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারেনি গোটা পরিবার। পুজোয় কার্যত ঘরবন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন পরিবারের সদস্যেরা। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘কেউই এখনও ঠিক নেই! ওর মাকে আজও বোঝাতে পারি না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘নিজেদের উদ্যোগে গঙ্গার একাধিক ঘাটে খুঁজেছিলাম। দক্ষিণেশ্বর থেকে শুরু করে কোনও ঘাট বাদ দিইনি। পুলিশ জানিয়েছিল, এমন নিখোঁজের সংখ্যা অনেক।’’
তবুও এক বাবার আশা, ‘‘হতেও তো পারে, কেউ কোনও ঘাট থেকে ওকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। সেই খবর পুলিশ জানতেই পারেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy