মর্মান্তিক: অমিত দাস (ইনসেটে) নামে শিশুটির উপরে সোমবার ভেঙে পড়ে একটি জীর্ণ বাতিস্তম্ভের একাংশ (বাঁ দিকে)। মঙ্গলবার তার মা রুবিদেবীকে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
বাতিস্তম্ভের একাংশ মাথায় ভেঙে পড়ায় সোমবার দুপুরে মারা গিয়েছিল পাঁচ বছরের এক বালক। ওই ঘটনায় পুরসভার ভূমিকায় প্রবল ক্ষুব্ধ একবালপুরের হোসেন শাহ রোডের স্থানীয় বাসিন্দারা।
তাঁদের অভিযোগ, পরিত্যক্ত বাতিস্তম্ভগুলির উপরের অংশ দিনের পর দিন বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে থাকে। পুরসভা সব জেনেও কোনও ব্যবস্থা নেয় না। স্থানীয় বাসিন্দা জামিল হকের বক্তব্য, ‘‘সোমবারের ঘটনার পরে এলাকার অন্য কোনও বাতিস্তম্ভও ভেঙে পড়বে কি না, সেই আশঙ্কায় রয়েছি সকলেই। মাস কয়েক আগেই একটি ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের একাংশ ভেঙে পড়েছিল।’’ আর এক বাসিন্দা মহম্মদ সানির অভিযোগ, ‘‘পুরসভা বাতিস্তম্ভ বসানোর পরে সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের কোনও দায়িত্ব নেয় না। সোমবার পুর কর্তৃপক্ষের এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতারই খেসারত দিতে হল পাঁচ বছরের একটি শিশুকে।’’
খুড়তুতো দিদির বিয়ে উপলক্ষে সোমবার সকালেই মা, বাবা ও দুই দিদির সঙ্গে বিহার থেকে একবালপুরের হোসেন শাহ রোডে কাকার বাড়িতে এসেছিল পাঁচ বছরের অমিত দাস। সে দিনই বেলা ১২টা নাগাদ কাকার বাড়ির কাছে অমিত যখন খেলছিল, তখন একটি বাতিস্তম্ভের একাংশ ভেঙে পড়ে তার মাথায়। স্থানীয় দুই যুবক একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে একবালপুরের হোসেন শাহ রোডে গিয়ে দেখা গেল, এলাকায় একাধিক পুরনো বাতিস্তম্ভ বিপজ্জনক ভাবে রয়েছে। বেশির ভাগেরই মাথায় আলো নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই সমস্ত পুরনো বাতিস্তম্ভে দীর্ঘদিন ধরে মরচে ধরেছে। যে কোনও মুহূর্তে সেগুলি ভেঙে পড়তে পারে। মৃত শিশুটির কাকার ছেলে সুদীপ দাস বলেন, ‘‘পুরসভার কাছে আমাদের অনুরোধ, এলাকার পরিত্যক্ত বাতিস্তম্ভগুলি দ্রুত সরানো হোক। আমার ভাইয়ের মতো আর কারও যেন এই ভাবে মৃত্যু না হয়।’’
সুদীপ বলেন, ‘‘সোমবার রাতে বোনের বিয়ে ছিল। এই ভয়াবহ দুঃসংবাদের পরে অত্যন্ত অনাড়ম্বর ভাবেই বিয়েটা সেরে ফেলা হয়েছে।’’ ছেলের মৃত্যুতে অসুস্থ হয়ে পড়া রুবিদেবীকে একবালপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে মঙ্গলবার সকালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর স্যালাইন চলছে।
এলাকার বাতিস্তম্ভগুলির বেহাল দশার কথা মেনে নিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর নিজামউদ্দিন শামস। কিন্তু কেন সেগুলির ওই অবস্থা, তার কোনও ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি। এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (আলো) মনজর ইকবাল বলেন, ‘‘সোমবারের ঘটনার পরে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বাতিস্তম্ভগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখতে ইঞ্জিনিয়ারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভগ্ন বাতিস্তম্ভ দ্রুত সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy