(বাঁ দিক থেকে) শৌনক কর, অর্ঘ্যদীপ দত্ত, উজান চক্রবর্তী,তন্নিষ্ঠা দাস এবং শতপর্ণা মিল (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকে জেলাভিত্তিক ফলাফলে পঞ্চম কলকাতা। কলকাতার পাশের হার ৯২.১৩ শতাংশ। মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে শহরের পাঁচ পড়ুয়া। সেই খবর সামনে আসতেই বদলে গিয়েছে তাদের প্রতিদিনের রুটিন। ফোনে একের পর এক অভিনন্দন, মিষ্টিমুখ, সংবাদমাধ্যমের ছবি তোলার হিড়িকে হয়ে গেল সাফল্যের উদ্যাপন। ওদের কথায়, পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের এখানেই শেষ নয়। লক্ষ্যপূরণ এখনও বাকি।
উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম দশে স্থান পেয়েছে সারা রাজ্যে ৫৮ জন। মেধা তালিকার পাঁচ জন কলকাতার। স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের শৌনক কর ৪৯২ নম্বর পেয়ে পঞ্চম হয়েছে। ৪৮৯ নম্বর পেয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে হিন্দু স্কুলের অর্ঘ্যদীপ দত্ত। ৪৮৮ নম্বর পেয়ে নবম হয়েছে পাঠভবন থেকে উজান চক্রবর্তী। ৪৮৭ নম্বর পেয়েছে পাথফাইন্ডার এইচএস পাবলিক স্কুল থেকে তন্নিষ্ঠা দাস। টাকি হাউস মাল্টিপারপাস গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী শতপর্ণা মিল দশম স্থানে রয়েছে।
মেধা তালিকায় পঞ্চম তথা কলকাতায় প্রথম শৌনক জানাচ্ছে, ভাল ফল হবে ভাবলেও প্রথম দশে থাকার আশা করেনি সে। বিরাট কোহলির ভক্ত শৌনক অঙ্ক নিয়ে গবেষণা করতে চায়। তার মতে, উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল করতে
টি-২০ নয়, খেলতে হবে টেস্ট খেলার মানসিকতা নিয়ে। টেস্টে যেমন, সারা দিন ভাল খেলে দিনের শেষে সেঞ্চুরি আসে, সে রকমই দু’বছর টানা পড়লে ভাল ফল হবেই। মায়ের হাতের রান্না প্রিয় শৌনকের। রাতে মায়ের স্পেশ্যাল রান্না খেয়েই জয়ের উদ্যাপন হবে।
হিন্দু স্কুলের অর্ঘ্যদীপ দত্তের নাম মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় ছিল না। উচ্চ মাধ্যমিকে সেই স্বপ্ন পূরণে আরও বেশি পরিশ্রম করে সে। মেধা তালিকার প্রথম পাঁচে নিজের নাম শুনতে না পেয়ে, কিছুটা হতাশ হয়। অবশেষে মা-বাবার কাছ থেকে জানতে পারে, অষ্টম স্থানে আছে সে। অর্ঘ্যদীপ বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায়। পাশাপাশি, চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণাও করতে চায়। নিট পরীক্ষায় ভাল ফল হয়েছে অর্ঘ্যদীপের। পড়ুয়াদের জন্য তার পরামর্শ, খুঁটিয়ে পাঠ্যবই পড়তে হবে। সঙ্গে টেস্ট পেপার সমাধানও করতে হবে। উত্তর লিখে অনুশীলন করতে হবে। হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘অর্ঘ্যদীপ এতটাই ভাল ছাত্র যে, আমরা ভেবেছিলাম, ও মেধা তালিকার প্রথম তিনে থাকবে।’’
নবম স্থানে থাকা উজান আবার বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়ে শিক্ষক হতে চায়। তার মতে, ‘‘শিক্ষক পেশার মতো মহৎ পেশা নিয়ে বর্তমানে বিতর্ক চলছে। এতে অনেক শিক্ষকের সম্মানহানিও হচ্ছে। আমি এই পেশাতেই আসতে চাই।’’ রবীন্দ্রনাথ, শঙ্খ ঘোষ, জয় গোস্বামী, শ্রীজাত-র কবিতা ভালবাসে উজান। অবসরে গান, গল্পের বই সঙ্গী। তার কথায়, ‘‘মন ভাল না থাকলে পড়ায় মন বসবে না।’’ মায়ের হাতের মাটন বিরিয়ানি উজানের প্রিয়। বুধবার রাতে অবশ্য হয়নি। তবে খুব শীঘ্রই হবে।
উচ্চ মাধ্যমিকে দশম স্থানাধিকারী তন্নিষ্ঠা মাধ্যমিকেও দশম হয়েছিল। সে বার মাধ্যমিকে মেধা তালিকার প্রথম দশে ছিল একশোর বেশি পরীক্ষার্থী। এ বার ৫৮ জন প্রথম দশে শোনার পরে তাই সন্দিগ্ধ ছিল সে। মেধা তালিকার ঘোষণা শুনতে শুনতে উঠেও যায়। কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়তে চাওয়া তন্নিষ্ঠা সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্সেও ভাল ফল করেছে। কলকাতায় হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছিল তন্নিষ্ঠা। তার মতে, হস্টেলে পড়লে গ্রুপ স্টাডির বাড়তি সুযোগ মেলে। অবসরে বন্ধুদের সঙ্গে লুডো খেলা, আড্ডা বা পড়ার নানা বিষয়ে মত বিনিময়ের সুযোগ মেলে।
আরও এক দশম স্থানাধিকারী শতপর্ণা মিল রাশিবিজ্ঞান নিয়ে পড়ে ডেটা সায়েন্স পড়তে চায়। মেধা তালিকায় স্থান পাওয়ার আশা ছিল তার। ছুটি থাকলেও শিক্ষিকাদের ডাকে এ দিন টাকি স্কুলে যায় শতপর্ণা। আনন্দে তাকে প্রায় কোলে তুলে নেন শিক্ষিকারা। শতপর্ণা বলে, ‘‘স্কুলের সাহায্য ছাড়া এই ফল হত না। শিক্ষিকাদের থেকে উপহার
পেয়েছি প্রচুর। অনেক আশীর্বাদও।’’ প্রধান শিক্ষিকা শম্পা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওর হাতের লেখা থেকে শুরু করে উত্তর লেখার ধরন, সবার থেকে আলাদা ছিল। যথাযথ উত্তর লেখে। ও যে খুব ভাল কিছু করবে, আমরা জানতাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy