প্রতীকী ছবি।
বাড়ির জল পরিশোধন যন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করছে তো? পরিস্রুত জল হিসেবে যা পান করা হচ্ছে, তা কি আদৌ পানের যোগ্য? পরিবারের একের পর এক সদস্য পেটের রোগে ভুগতেই সন্দেহ হয় গরফার এক ব্যক্তির। মনে পড়ে, দিন কয়েক আগেই তাঁদের বাড়ির জল পরিশোধনের যন্ত্রটি সারানো হয়েছিল। জলের ফিল্টার তৈরির একটি সংস্থার নাম করে পরিষেবা দিতে এসেছিলেন এক ব্যক্তি। দেখা গেল, ফিল্টার বলে যা লাগিয়েছেন, তা আদৌ ফিল্টারই নয়!
গরফা থানায় অভিযোগ করা হলে ৩০ জুন গ্রেফতার হয় অভিষেক রায়চৌধুরী এবং রাজু ঘোষ নামে দু’জন। ধৃতদের কাছ থেকে মেলে জলের ফিল্টার তৈরির একটি বহুজাতিক সংস্থার লোগো বসানো প্রচুর জাল যন্ত্রাংশ। সেই সূত্রেই তদন্তে নেমে সোমবার রাতে আরও তিন জনকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখা (ইবি)। ময়দান, হেয়ার স্ট্রিট এবং নিউ মার্কেট থানা এলাকার কয়েকটি জায়গায় হানা দিয়ে ওই সংস্থার নাম লেখা প্রচুর জাল যন্ত্রাংশও উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গরফা থানা এলাকার এই ঘটনার সূত্র ধরেই সোমবার ময়দান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে জলের ফিল্টার তৈরির ওই বহুজাতিক সংস্থা। তদন্তে নেমে ওই থানা এলাকা থেকে কার্তিক মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির গুদামে হানা দেয় পুলিশ। বেশ কিছু জাল যন্ত্রাংশ উদ্ধার হয়। সেগুলির কাগজ দেখাতে না পারায় সন্ধ্যায় কার্তিককে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রাতেই হেয়ার স্ট্রিট থানা এলাকার রঞ্জিত সিংহ জৈন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে হানা দেন ইবি-র গোয়েন্দারা। সেখান থেকেও ওই সংস্থার নাম লেখা জাল যন্ত্রাংশ উদ্ধার হয়। জেরায় রঞ্জিত জানায়, সে ভুয়ো যন্ত্রাংশ তুলে নিউ মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী সুকান্ত কুণ্ডু নামে এক ব্যক্তিকে দিত। রাতেই সুকান্তের বাড়ি ও দোকানে হানা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তে জানা গিয়েছে, দিল্লি এবং হাওড়ায় এমন জাল যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা রয়েছে। সেখান থেকে শহরে ওই সব নিয়ে আসার পরে তা রঞ্জিত এবং কার্তিকের মতো কয়েক জনের কাছে রাখা থাকত। তাদের কাছ থেকে যেত সুকান্তের মতো ব্যবসায়ীদের কাছে। যাদের সঙ্গে যোগাযোগে থাকে জল পরিশোধন যন্ত্র সারাই কর্মীদের একটি অংশ।
সাধারণত, যে সংস্থার জল পরিশোধন যন্ত্র কেনা হয়, ক্রেতারা তাদের নম্বরেই ফোন করেন। সংস্থা এক জন মিস্ত্রিকে কাজ করে দেওয়ার বরাত দেয়। ওই মিস্ত্রিদের মধ্যেই অসাধু কেউ কেউ এসে সহানুভূতি দেখিয়ে গৃহস্থকে বলে, “সংস্থা অনেক বেশি টাকা নিচ্ছে। আমি অনেক কম টাকায় লাগিয়ে দিতে পারি।” পুলিশ বলছে, সেই কম টাকায় কাজ মিটিয়ে দেওয়ার ফাঁদে পা দিলেই সমূহ বিপদ! শুধু সংস্থা থেকে পাঠানো কর্মীরাই নয়, বিভিন্ন শপিং মলের সামনেও এমন জাল যন্ত্রাংশের ফাঁদ পেতে রাখা লোকের ছড়াছড়ি।
এ ব্যাপারে গ্রাহকদের সতর্ক করতে জল পরিশোধন-সহ গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রের একাধিক সংস্থা জানাচ্ছে, লকডাউনে পরিষেবা দিতে দেরির সুযোগ নিয়ে ভুয়ো কারবারের রমরমা শুরু হয়েছে। সংস্থার নামে অনলাইনে পাওয়া নম্বরকে কখনওই ভরসা করা চলবে না। কেউ কোনও সংস্থার নাম করে বাড়িতে পরিষেবা দিতে এলে সচিত্র পরিচয়পত্র দেখে তবেই নিশ্চিত হবেন। গাফিলতির অভিযোগ থাকলে দ্রুত সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা পুলিশের দ্বারস্থ হোন। এ ব্যাপারে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা দফতরও প্রচারে নামতে চলেছে বলে খবর।
কলকাতা পুলিশের ডিসি (ইবি) বিদিশা কালিতা বলেন, “এই চক্রের মূলে পৌঁছতে চাই আমরা। দ্রুত হাওড়া এবং দিল্লিতে হানা দেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy