মৃত একটি কুকুরছানার দেহ উদ্ধার করছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার, জোকায়। নিজস্ব চিত্র।
বছরকয়েক আগে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজের ভিতরে ১৬টি কুকুরছানাকে পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘিরে শোরগোল পড়েছিল। এ বার একটি আবাসন চত্বরে একাধিক পথকুকুর ছানার দেহ উদ্ধারের ঘটনায় তাদের বিষ খাইয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত জোকা মেট্রো সংলগ্ন ওই আবাসন চত্বরে দফায় দফায় মোট চারটি কুকুরছানার দেহ মিলেছে। খোঁজ নেই আরও একটিরও।
ওই আবাসনের ভিতরে থাকা পথকুকুরদের খাওয়ানো নিয়ে বিবাদ ছিল আগে থেকেই। তাদের দেখাশোনা করায় আবাসিকদের একাংশের রোষানলে পড়তে হয়েছিল কয়েক জনকে। কুকুরদের খাওয়ানো বন্ধ না করলে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। তার কয়েক দিনের মধ্যেই, মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে মাস তিনেকের একাধিক কুকুরছানার দেহ। বিষ খাইয়ে তাদের খুন করা হয়েছে বলে হরিদেবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন আবাসিকদের একাংশ। তদন্তে নেমে বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। উদ্ধার করে একটি মৃত কুকুরছানার দেহ। সেই মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
জোকা মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন ওই আবাসন চত্বরের একাধিক টাওয়ার মিলিয়ে প্রায় ১৮০০টি পরিবারের বসবাস। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, মঙ্গলবার দুপুরে আবাসনের ১২ নম্বর টাওয়ার সংলগ্ন এলাকায় প্রথমে দু’টি কুকুরছানার দেহ উদ্ধার হয়। তাদের মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছিল। কোনও রোগে ভুগে তারা মারা গিয়েছে, এই ভেবে আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের মাটিতে পুঁতে দেন। কিন্তু এর পরে বুধবার বিকেলে এবং বৃহস্পতিবার সকালে পর পর আরও দু’টি কুকুরছানার দেহ উদ্ধার হয়। এর পরেই সন্দেহ বাড়ে বাসিন্দাদের। আবাসনের বাসিন্দা স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রথমে দু’টি কুকুরের দেহ মেলায় ভেবেছিলাম, কোনও রোগে ভুগে হয়তো মারা গিয়েছে। কিন্তু তার এক দিন পরেই ফের কুকুরছানার দেহ উদ্ধার হওয়ায় সন্দেহ হয়। কোনও কিছুর সঙ্গে বিষ বা অন্য কিছু খাইয়ে মেরে ফেলা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’’ এমনকি, একটি কুকুরের এখনও খোঁজ নেই বলেও তিনি জানান। আবাসনের এক নিরাপত্তারক্ষী বলেন, ‘‘প্রথমে দু’টি দেহ উদ্ধার হয়েছিল। পরে পচা গন্ধ পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু হলে বুধ ও বৃহস্পতিবার আরও দু’টি কুকুরছানার দেহ উদ্ধার হয়। প্রত্যেকের মৃত্যুর ধরনটাও এক।’’ বৃহস্পতিবার অসুস্থ অবস্থায় একটি কুকুরছানাকে উদ্ধার করেন এক পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্যেরা। পশুপ্রেমী আয়ুষি দে বলেন, ‘‘একটি কুকুরকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছে। তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।’’
অভিনেতা তথা পশুপ্রেমী বলে পরিচিত তথাগত মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘নিরীহ প্রাণীদের যাঁরা এ ভাবে মেরে ফেলেন, তাঁদের মধ্যে মনুষ্যত্ব ব্যাপারটাই নেই। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত।’’ আবাসনের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই আবাসন চত্বরে থাকা পথকুকুরদের থাকা-খাওয়া নিয়ে আপত্তি রয়েছে অনেকের। এ নিয়ে একাধিক বার আবাসিকদের মধ্যেই বিরোধ বেধেছে। কুকুর নিয়ে আবাসনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নানা আলোচনা হয়েছে বলেও বাসিন্দাদের দাবি। আর এক বাসিন্দা নিবেদিতা সরকার বলেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে আমি কুকুরদের খাওয়াচ্ছি। মাস তিনেক আগে একটি কুকুর ওই বাচ্চাগুলির জন্ম দিয়েছিল। ওদের আমি ছাড়াও আরও কয়েক জন খাবার দিতেন। তা নিয়ে বিভিন্ন সময় আমাকে নানা কটূক্তিও করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy