Advertisement
E-Paper

কর্মহীন পাঁচ মাস, বারাসতে দুর্দশায় রেলের ঠিকা সাফাইকর্মীরা 

প্ল্যাটফর্মের আশপাশ, রেললাইন, সামনের নিকাশি নালা, সাবওয়ে, ফুট ওভারব্রিজ-সহ স্টেশন সংলগ্ন চত্বর পরিষ্কার রাখার কাজ রেল কর্তৃপক্ষের।

অপরিচ্ছন্ন: ঠিকমতো সাফাই না হওয়ায় রেললাইনে জমছে আবর্জনা। সোমবার। বারাসত স্টেশনে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

অপরিচ্ছন্ন: ঠিকমতো সাফাই না হওয়ায় রেললাইনে জমছে আবর্জনা। সোমবার। বারাসত স্টেশনে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৫৪
Share
Save

রোজ সকালে স্টেশনে এসে জড়ো হতেন তাঁরা। সেটাই ছিল দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। স্টেশন চত্বর সাফসুতরো রাখাই ছিল তাঁদের কাজ। কিন্তু গত পাঁচ মাস ধরে তাঁরা কর্মহীন। বারাসত স্টেশনের ২২ জন ঠিকা সাফাইকর্মীকে তাই চরম দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। রেল নতুন ঠিকাদার নিয়োগ না করায় কাজ পাচ্ছেন না তাঁরা। বাধ্য হয়ে তাই বাড়ি বাড়ি ঘুরে বাগান-নর্দমা সাফাইয়ের কাজ করছেন। তা-ও সব দিন কাজ জুটছে না। আবার কাজ শুরুর দাবিতে স্টেশন চত্বরের সামনে ধর্না চালিয়ে যাচ্ছেন ওই সাফাইকর্মীরা।

প্ল্যাটফর্মের আশপাশ, রেললাইন, সামনের নিকাশি নালা, সাবওয়ে, ফুট ওভারব্রিজ-সহ স্টেশন সংলগ্ন চত্বর পরিষ্কার রাখার কাজ রেল কর্তৃপক্ষের। বারাসত বড় স্টেশন বলে সেই কাজে বেশি কর্মীর দরকার। ওই স্টেশনে রেলের নিজস্ব আট জন স্থায়ী কর্মী রয়েছেন। কর্মীর তুলনায় কাজ বেশি বলে প্রায় সব স্টেশনেই ঠিকা কর্মী নিয়োগ করে রেল।

দরপত্রের মাধ্যমে এক-এক বার এক-এক জন ঠিকাদার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সাফাইয়ের ওই দায়িত্ব পান। কিন্তু ঠিকা কর্মীদের কোনও বদল সাধারণত হয় না। বছর দুয়েক আগে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশ জারি করে জানায় যে, ঠিকাদার বদলালেও ঠিকা কর্মীদের বদলানো যাবে না। বারাসতের ওই ২২ জন কর্মী দীর্ঘ দিন ধরেই কাজ করছেন। কেউ কেউ ১৫-১৬ বছর ধরে এই কাজে নিযুক্ত।

তুষার কর নামে তাঁদেরই এক জন বললেন, “আমরা শেষ যে ঠিকাদার সংস্থার অধীনে কাজ করতাম, তাদের মেয়াদ ২০১৯-এর ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যায়। তার পরে নতুন করে টেন্ডার না ডেকে আরও আট মাস তাদের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অগস্টের মাঝামাঝি সময়ে আমাদের বসিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, নতুন করে দ্রুত টেন্ডার হবে। কিন্তু তার পরে কয়েক মাস পার হয়ে গেল। এখনও পর্যন্ত কোনও টেন্ডার হল না। এ দিকে, আমাদের খাবার জুটছে না।”

তুষারের সহকর্মী প্রদীপ মণ্ডল ও পরিমল সরকারের অভিযোগ, “এখানকার কাজ করানোর জন্য বনগাঁ থেকে ১০ জন করে সাফাইকর্মীকে নিয়ে আসা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কাজ দেওয়া হচ্ছে না। বনগাঁ থেকে যাঁদের সাফাইয়ের কাজে আনা হচ্ছে, তাঁরাও ঠিকা কর্মী। অথচ আমাদের দিকে রেল তাকিয়েও দেখছে না।”

তুষার জানান, আগে কাজের মজুরি ছিল দৈনিক ৪৩২ টাকা। সেই মজুরি বেড়ে ৬৩৯ টাকা হয়েছে। তার পরেও গত বছর তাঁরা পুরনো মজুরিতেই কাজ করেছেন। নতুন করে দরপত্র ডাকা হলে নতুন মজুরি পাবেন, এই আশা ছিল তাঁদের। কিন্তু তা আর হয়নি। কাজের দাবিতে স্টেশনে একাধিক বার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁরা। রোজই স্টেশন চত্বরের বাইরে ধর্নায় বসেন তুষারেরা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাঁদের কাজের ব্যবস্থা হয়নি। তাঁদের বিষয়টি নিয়ে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুও আন্দোলন করেছে। আগামী দিনে শিয়ালদহে ডিআরএম অফিসের সামনে ধর্নায় বসার পরিকল্পনা করেছেন ওই ঠিকা সাফাইকর্মীরা।

এ দিকে, কর্মীর সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় বারাসত স্টেশন চত্বরে সাফাইয়ের কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না বলে অভিযোগ। প্ল্যাটফর্ম থেকে সাবওয়ে, রেললাইন থেকে নিকাশি নালা— সর্বত্রই আবর্জনা উপচে পড়ছে। তা নিয়ে যাত্রীরাও বিরক্ত। স্টেশনের হেল্‌থ ইনস্পেক্টরের অধীনে কাজ করতে হয় এই ঠিকা শ্রমিকদের। বারাসত স্টেশনের হেল্‌থ ইনস্পেক্টর অনুপম গিরি বলেন, “নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়ায় ওই সাফাইকর্মীরা কাজ পাচ্ছেন না। রেলের উপরমহলে জানানো হয়েছে, যাতে দ্রুত টেন্ডার ডাকা হয়।” কর্মীর সংখ্যা কম বলেই স্টেশন চত্বর ঠিকমতো পরিষ্কার হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসত, নৈহাটি এবং রানাঘাট স্টেশনে সাফাইয়ের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দীর্ঘদিন ধরে আটকে রয়েছে। রেলের এক আধিকারিক জানান, টেন্ডারের কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব তা করা হবে।

Indian Railways Cleaning Staffs Barasat Station

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}