Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Senior citizen

প্রবীণদের মোটা সুদের টোপ দিয়ে প্রতারণা ১৯০০ কোটির

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রবীণ নাগরিকদের কাছ থেকে টাকা তুলেছিল সুরানা গ্রুপ নামে একটি অর্থলগ্নি সংস্থা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২১ ০৬:২৮
Share: Save:

প্রবীণ নাগরিকদের মোটা অঙ্কের সুদের টোপ দিয়ে প্রায় ১৯০০ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠল কলকাতার একটি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় রাজ্য সরকারের আর্থিক অপরাধ দমন শাখাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আলিপুরের বিশেষ আদালতের বিচারক পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী।

সারদা ও রোজ়ভ্যালি অর্থলগ্নি সংস্থার প্রতারণা নিয়ে দেশে এক সময়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্ত শুরু করে সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সারদা ও রোজ়ভ্যালি-কর্তা প্রায় পাঁচ বছরের উপরে হাজতবাস করছেন। আরও বহু অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তারা হাজতে রয়েছেন। অভিযোগ, সারদা-কাণ্ডে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকার আর্থিক প্রতারণা হয়েছিল।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রবীণ নাগরিকদের কাছ থেকে টাকা তুলেছিল সুরানা গ্রুপ নামে একটি অর্থলগ্নি সংস্থা। ওই সব প্রবীণ নাগরিক তথা আমানতকারীরা কলকাতা পুলিশের ১০টি থানা এলাকার বাসিন্দা। আদালত সূত্রের খবর, নগর দায়রা আদালতের সিবিআই-২ বিশেষ আদালতে কয়েকটি থানার তরফে অভিযোগ জমা পড়েছে। ওই আদালত থেকেও রাজ্য সরকারের আর্থিক অপরাধ দমন শাখাকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কী ভাবে প্রবীণ নাগরিকদের টোপ দেওয়া হয়েছিল?

তদন্তকারীদের একাংশ জানান, এককালীন জমা দেওয়া টাকার উপরে প্রতি বছর ১৫ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হবে এবং বিনিয়োগ করা মূল টাকার
অঙ্ক পাঁচ বছর পরে দ্বিগুণ করে দেওয়া হবে, এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই টাকা তোলা হয়। অভিযোগ, প্রথম কয়েক বছর বার্ষিক সুদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। অভিযোগকারী এক আমানতকারী বলেন, ‘‘ওই সুদ দেওয়ার পরে ফের সংস্থার এজেন্টরা আমাদের অনুরোধ করে, সুদের টাকা ফের বিনিয়োগ করতে। তা করলে আরও বেশি সুদ মিলবে বলা হয়েছিল। বহু প্রবীণ আমানতকারী ওই সুদের টাকা ফের বিনিয়োগ করেছেন।’’ তদন্তকারীরা জানান, সুদ দেওয়ার পরেও ফের ওই টাকা ঘরে তুলে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনও আমানতকারীকেই জমা রাখা টাকা দ্বিগুণ হারে ফেরত দেয়নি তারা। ফেরত আসেনি বিনিয়োগ করা মূল টাকাও।

আমানতকারীদের তরফে আলিপুর আদালতের আইনজীবী প্রশান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘ওই অর্থলগ্নি সংস্থা আমানতকারীদের টাকায় কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি কিনেছে। তার পরে সেগুলি বন্ধক রেখে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছে। কিন্তু ওই ঋণ শোধ করেনি। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ওই সব সম্পত্তি নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই সব সম্পত্তি অর্ধেক দামে নিলামে কিনে নিয়েছে ওই সংস্থাই।’’ প্রশান্তবাবুর দাবি, ‘‘প্রায় এক যুগ ধরে প্রবীণ নাগরিকদের থেকে লুট করা টাকা নানা ভাবে বিনিয়োগ করে এবং অনৈতিক ভাবে বাড়িয়ে নিয়েছে ওই সংস্থা। তারা প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার উপরে প্রতারণা করেছে বলে তথ্য উঠে এসেছে।’’

আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত নভেম্বরে আলিপুরেরই ভারপ্রাপ্ত জেলা বিচারকের আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন ওই সংস্থার পাঁচ কর্তা। আবেদন খারিজ করে ভারপ্রাপ্ত বিচারক আলিপুরে আর্থিক অপরাধের বিশেষ আদালতে মামলা স্থানান্তরিত করেন। গত ২২ জানুয়ারি জামিনের আবেদন খারিজ করেন বিশেষ আদালতের বিচারক পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী।

মামলার সরকারি আইনজীবী রাধাকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই মামলায় জামিনের কোনও প্রশ্নই উঠছে না। অভিযুক্তদের হেফাজতে রেখে তদন্ত করা উচিত। প্রবীণ নাগরিকদের জীবনের শেষ সম্বল লুট করা হয়েছে। আর্থিক অপরাধ দমন শাখার অফিসারদের উচিত, অবিলম্বে ওই সংস্থার কর্তাদের গ্রেফতার করা।’’ তবে ঘটনার পর থেকে বালিগঞ্জ থানার কুইন্স পার্কের একটি বহুতল আবাসনের বাসিন্দা ওই সংস্থার কর্তারা পলাতক বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। আমানতকারীদের আইনজীবী প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘এই মামলার বিষয়ে ইডি-র দিল্লির সদর দফতরে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কারণ শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের গণ্ডির বাইরে গিয়েও ওই সংস্থা একই কায়দায় টাকা তুলেছে বলে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Money Fraud Senior citizen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy