কর্মমুখর: আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় দফতরে কাজ চলছে
শতবর্ষ-পরের কথা ভেবে তো পথচলা শুরু করেনি প্রথম দিনের চার পাতার আনন্দবাজার পত্রিকা। ১৯২২ সালের ১৩ মার্চ দোলযাত্রার দিনে জন্ম নেওয়া লাল কালিতে ছাপা (‘ইংলিশম্যান’ পত্রিকা যাকে বলেছিল ‘ডেনজার সিগন্যাল’) সেই দৈনিকের মনে এ প্রত্যয় কি ছিল যে, এক শতাব্দীর মধ্যে বাঙালি সংস্কৃতি আর বাংলা ভাষার খুব কাছের জন হয়ে ওঠা সম্ভব হবে? কিন্তু বাকি ইতিহাসই। সংস্কৃতি, বাঙালিয়ানা, ভাষা নিয়ে ধারাবাহিক নিরীক্ষায় বিপ্লব ঘটল। সে কালে অনেকে ব্যাপারটাকে বাঙালিত্বের ঢক্কানিনাদ বলে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি। সাফল্য আসার পরেও অনেকে মনে করেছেন, এ আর কিছু নয়, নিছক দাদাগিরি। কিন্তু তার পরে, কখন কী ভাবে যে পত্রিকাটি আমবাঙালির হয়ে উঠল, বাঙালি তার দিনক্ষণ আলাদা ভাবে মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করেনি।
এ কঠিন কাজ সম্ভব হয়েছে নানা কারণে। শুধু সংবাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা নয়, নানা স্তরের সংবাদ পরিবেশন করা নয়, শুধু নয়নাভিরাম হরফ তৈরি নয়, নয়, শুধু খবরের আগাম আন্দাজ নয়, এই সাফল্যের অন্যতম বড় কারণ বাঙালিকে সম্মান দেওয়া এবং বাংলা ভাষার প্রবহমানতায় আধুনিকতার সঙ্গী হওয়াও। বাঙালি চলিত ভাষায় কথা বললেও এক কালে সে কথ্যভাষ অপাঙ্ক্তেয় ছিল গ্রন্থে, পত্রপত্রিকায়। আনন্দবাজার পত্রিকাও শুরু করেছিল একই ভাবে। ১৩২৮ বঙ্গাব্দের ২৯ ফাল্গুনের চার পাতার কাগজের ভাষা-বানান-যতিচিহ্ন এক অর্থে সে কালের মতোই ছিল। কিন্তু প্রথম থেকেই নজর ছিল সাধারণ্যের ভাষায়। উদ্দেশ্য ছিল ভাষার স্বাভাবিক স্রোতকে সর্ব স্তরের বাঙালির হৃদিখাতে প্রবাহিত করা।
স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ে কাজটা কঠিনই ছিল। সহজ ছিল না স্বাধীনতা-পরবর্তী ঔপনিবেশিক-দোলনমায়ার সময়েও। কিন্তু প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক প্রফুল্ল কুমার সরকারের ভাবনা ছিল ব্যতিক্রমী। সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁর সখ্য আর চর্চার কথা সুবিদিত। পাশাপাশি তাঁর এবং সতীর্থদের আরও কিছু ভাবনা ছিল। সেই ফুটন্ত সময়ে আনন্দবাজার পত্রিকা আন্দোলনের ভাষা হয়ে উঠেছে। বার বার রাজরোষে পড়লেও থামেনি, দমেনি। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম প্রকাশের তিন দিন আগে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী গ্রেফতার হন। আনন্দবাজার প্রণত হয়েছে গাঁধীর প্রতি। জাতির আবেগকে কখনও অবহেলা করেনি।
এবং সেই শুরু থেকেই বাঙালিকে আত্মপরিচয়ে প্রাণিত করেছে সে। ১৯২২ সালের ১৬ জুন পত্রিকায় লেখা হয়েছিল— “যে শিক্ষায় ভবিষ্যতে শুধু কেরানীগিরি বা বটতলার উকীল ছাড়া আর কিছু হইবার পথ নাই, তার জন্য এত ব্যাকুলতা কেন?” এবং তার ঠিক এক সপ্তাহ পরে ২৩ জুন লেখা হল, “বিদেশী ভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়া সাফল্য লাভ করা গিয়াছে, এমন অস্বাভাবিক ব্যাপার কেহ কখন দেখিয়াছে কি?”
বাঙালির আত্মগরিমা বৃদ্ধির সূত্রেই আনন্দবাজার পত্রিকা শুরু করে ভাষা নিয়ে নিরীক্ষা। শুরুতে কাগজের ভাষা সাধু হলেও চোখ ছিল ‘বন্ধনহীন গ্রন্থি’র দিকে। বন্ধনহীন, কারণ তা নিগড় ভাঙতে চাইছে। আবার গ্রন্থিও, কারণ সে ঐতিহ্য অস্বীকারে বিশ্বাসী নয়। আসলে সে চাইছে সাধারণ মানুষের ভাষার কাছাকাছি যেতে, সাধারণের ভাষা হয়ে উঠতে। যার ঐতিহাসিক রূপ ১৯৬৫ সালের প্রথম ভাগ থেকে পত্রিকার ভাষা এবং বানানের সংস্কার। সংবাদে কথ্যরীতির প্রবর্তন আনন্দবাজার পত্রিকার ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা। স্বামী বিবেকানন্দ বাংলার সর্বপ্রান্তের কথ্যভাষার মিলিত আত্মাকে চলিত ভাষার বিগ্রহে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, এ যেন তাঁরই অনুসরণ। এটা জরুরিই ছিল। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র এবং তৎকালীন বহু কথাকার যে চলিতকেই কলম করে নিয়েছেন, সেই ভাষাতেই সংবাদ পড়তে শুরু করল বাঙালি। পত্রিকার কথ্যভাষাতেও শুরু হল সংস্কারকাজ। এখানেও সেই ‘বন্ধনহীন গ্রন্থি’র তত্ত্ব। তৎসম শব্দকে পূর্ণ মর্যাদার আসনে রেখেই পত্রিকা নিরীক্ষা শুরু করল তদ্ভব আর বিদেশি শব্দ ব্যবহারের প্রকরণ নিয়ে। অ-সংস্কৃত শব্দও এত দিন তৎসম ব্যাকরণ-নীতিতে ব্যবহৃত হত। আনন্দবাজার পত্রিকা তা বন্ধ করল। বিদেশি শব্দে সংস্কৃত মুগ্ধবোধ অতিক্রম করল। ব্যাকরণ-ব্রতী হলেও বৈয়াকরণের শুষ্কতা বর্জন করল, অলঙ্কারকে সম্মান জানিয়েও এড়িয়ে গেল অকারণ আলঙ্কারিকতা। সহজ কথা সহজ ভাবে বলতে চাইল।
সংস্কার নিয়ে প্রতর্ক-বিতর্কের মেঘাড়ম্বরও স্বাভাবিক ছিল। ১৯৬৫ সালের ৩০ জুলাই পত্রিকায় লেখা হল, “বিবর্তন প্রাণী-তত্ত্বের একটি মূল কথা, এবং ভাষা যদি প্রাণবান হয়, তবে তার আধার বানানও প্রয়োজনের তাগিদে পরিবর্তিত হতে বাধ্য... ত্রিশ বছর আগে বাংলা বানান সংস্কারের ভার নিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথাবাগীশদের উষ্মা সত্ত্বেও বহু শব্দের অনাবশ্যক দ্বিত্ব বর্জন করা হয়েছিল এবং বর্ণহানি সত্ত্বেও শব্দগুলির দ্বিজত্ব যায়নি। ‘কর্ম’ তেমনই পটু আছে, ‘সূর্য’ তেমনই ভাস্বর, ‘পূর্বে’র মহিমাও যথাপূর্ব।” ১৯৬৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলা ভাষা এবং বাংলা বানান’ শীর্ষক নিবন্ধে প্রবোধচন্দ্র সেন সমর্থন করলেন এই পদক্ষেপকে— “এই কৃতিত্বের জন্য বাংলা ভাষার অনুরাগী ও সংস্কারকামী মাত্রেরই অভিনন্দন তাঁদের প্রাপ্য।” যদিও এই বানান সংস্কারকে অনেকাংশে অসমর্থন জানালেন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। ১৯৬৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ‘দেশ’ পত্রিকায় লিখলেন, “বাঙ্গালীর উচ্চারণের সামঞ্জস্য রাখিয়া সহজ-ভাবে কয়েকশত বৎসরের অভিজ্ঞতায় বাঙ্গলা বর্ণবিন্যাসপদ্ধতি বা বাঙ্গলা অক্ষরে লিখন-রীতি দাঁড়াইয়া গিয়াছে... নূতন এই রীতি কতকগুলি বিষয়ে তাহার বিরোধী এবং পরিপন্থী বলিয়া মনে হইতেছে... সাধারণ পাঠক ইহাতে দিশাহারা হইয়া পড়িতেছেন।”
আনন্দবাজার পত্রিকা কিন্তু নতুন ভাষা তৈরি করতে চায়নি, চায়নি বাঙালিকে গুলিয়ে দিতেও। কথ্যরীতি-সাধুরীতির তুলনা-বিরোধে না ঢুকে ভাষা এবং হরফের মুদ্রণবান্ধব পরিমার্জন ঘটিয়ে আমপাঠকের কাছে আসতে চেয়েছে।
সাফল্য এক দিনে আসেনি। একশো বছর কম সময় নয়। এই দীর্ঘ সময়পথেই ক্রিয়াপদ ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি হয়েছে। ‘কোরছে’ বা ‘কর্ছে’র বদলে ‘করছে’ লিখলে এখন আর ক্রিয়ালোপ ঘটে না। ‘কারো’র বদলে ‘কারও’তে অসম্মানিত হন না কেউ। অ-তৎসম শব্দেও ণত্ব-ষত্ব বিধি আরোপ করে ‘চার্ণক’ বা ‘রাণী’ না লিখে ‘চার্নক’ বা ‘রানি’ লিখলে কেউই ক্রুদ্ধ হন না। এ ভাবনাও রয়েছে— ‘চার্নক’-এর বদলে ‘চারনক’ নয় কেন? বিদেশি শব্দ ভেঙে লেখার কথাও ভাবা হয়েছে। কিন্তু আনন্দবাজার পত্রিকা একই সঙ্গে অতিপ্রচলিত বিদেশি শব্দের ছবি-কাঠামো দ্রুত না-ভাঙার কথাও ভেবেছে। এখানে সুনীতিকুমারের সাবধানবাণীটিই স্মর্তব্য। তাই ‘লনডন’ এখনও ‘লন্ডন’। একই সঙ্গে এখনও স্থাননামের ক্ষেত্রে স্থানীয় উচ্চারণ গুরুত্ব পায় এবং ব্যক্তিনামের ক্ষেত্রে ব্যক্তির বানানই পায় মান্যতা। একশো বছরে ভাষা-বানানের সঙ্গে বদলেছে যতি-উদ্ধৃতির বয়ানও।
ভাষা ব্যাকরণনির্ভর অবশ্যই, কিন্তু নিছক ব্যাকরণ নয়। তার মনও আছে। সে মন কামনা-ক্রোধ, হাসি-কান্না, প্রতিবাদ-আনুগত্য সব ভাবেরই কায়া-কাঠামো। একশো বছরের ভাষাচর্যায় সেই চর্চাকেও অগ্রাধিকার দিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা। ‘বি-সংবাদ’ বিভাগে লিখতেন শিবরাম চক্রবর্তী। ১৯৬৯ সালের ৬ ডিসেম্বরের লেখা— “মাথাভাঙা গ্রামে যুক্তফ্রন্টের দুই শরিকের সংঘর্ষে চারজন আহত— কোচবিহারের খবর। শরিকদের কোনো দোষ নেই, গ্রামটার নামই দায়ী। আবার সন্দেশখালিতে দেখবেন তাঁরা পরস্পরকে ধরে বেশ সন্দেশ খাওয়াচ্ছেন।”
১৯৬৫ সাল। বিদেশি মুদ্রার ঘাটতিতে সরকার গুঁড়ো দুধ দিতে না পারায় সন্দেশ-কাঁচাগোল্লায় নিষেধাজ্ঞা। রসগোল্লা, চমচম, পানতুয়া, ল্যাংচা ও ক্ষীরমোহন বাদে কোনও মিষ্টি বিক্রি করা যাবে না। ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারির খবর, পুলিশ ১৭৫০ কিলোগ্রাম ছানা আটক করায় তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থা চলতে লাগল। সেপ্টেম্বরের কাগজে শিরোনাম: ‘রসগোল্লার হাজতবাস’। লেখা হল, “দমদমের থানা ঘরে দু’দুটিন ভরতি রসগোল্লা পানতোয়া পচছে। এর মোট ওজন দেড় মণ।” সেই মিষ্টি এক যাত্রীর কাছে পেয়ে বিক্রি হল নিলামে। শিরোনাম: ‘রসগোল্লার গতি হয়েছে’।
১৯৭৭ সালে কলকাতায় পেলে। ২৩ সেপ্টেম্বর শিরোনাম: ‘পেলেদা জিন্দাবাদ’। অন্য প্রতিবেদনে— “ফুটবল সম্রাট কলকাতার সম্বর্ধনায় থমকে গেছেন।” পেলে ‘পেলেদা’ সম্বোধন বা ‘থমকে’ শব্দের অর্থ বোঝেননি, কিন্তু পাঠক বুঝেছেন এবং মজেছেন।
বিজ্ঞানকে কত সহজ ভাষায় লেখা যায়, তার ভাবনাটিও বিজ্ঞান। ২১ জুলাই ১৯৬৯ প্রথম পাতার শিরোনাম: ‘মানুষ চন্দ্রলোকে উত্তীর্ণ’। প্রতিবেদনে— “চাঁদে মানুষ... এক অভিকর্ষের মাতৃ বন্ধন ছিন্ন করে অন্য এক অভিকর্ষের মধ্যে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে, চাঁদের বন্দরে ‘ভেলা’ থামিয়ে প্রতীক্ষা করছে।”
আবেগের স্বকীয় ছাপ পাওয়া যায় মহাত্মা গাঁধীর হত্যার পরও। গোটা পাতায় ছ’টি লাইন। যার শেষে— “ভগবান আমাদিগকে মার্জনা করুন।” আবার, পণ্ডিত নেহরুর প্রয়াণের পর শিরোনাম: ‘নেহরু আর নাই’। বাংলা ভাষাকে জাতির অনুভূতির প্রতিফলক করে তোলার ঐতিহ্যেই ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চের শিরোনাম: ‘আমিও জয় বাংলা বললাম’।
এত কিছু সম্ভব হল কী ভাবে? বানান বিষয়ে এই পত্রিকাগোষ্ঠীর কয়েকটি গ্রন্থ রয়েছে। সমাজের গুণিজনেরাই সে সব গ্রন্থের প্রণেতা। পাশাপাশি, এই একশো বছরে কারা কারা লিখেছেন এই পত্রিকায়? কারা কর্মী ছিলেন? কাদের সাহচর্য পেয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা? রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর সমসাময়িক ও পরবর্তী বাংলা কলম তো ছিলই। পাশাপাশি এখানেই লিখেছেন এমন বহু ব্যক্তিত্ব, কাজ করেছেন এমন বহু সাংবাদিক, সম্পাদনার দায়িত্বে থেকেছেন এমন বহু বিদগ্ধ মানুষজন, যাঁদের মেধায় জারিত হয়েছে পত্রিকার স্নায়ু। কবি, প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক, সঙ্গীতবেত্তা, ব্যাকরণবিদের ওম লেগে রয়েছে আনন্দবাজারের দেহে। অবিসংবাদী কবি-কথাকারেরা যে-পত্রিকায় সাংবাদিকের দায়িত্বও সামলেছেন, সে-পত্রিকার ভাষা নিছক ক-খ-গ-ঘ হতে পারে না।
ভাষার ভাবগত এবং লক্ষ্যগত প্রয়োগে সাধু থেকে চলিতে ধাপে ধাপে এগিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা। সলতে পাকানোর সময়টি সহজ ছিল না। পাঠকের অভ্যাসের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই করতে হয়েছে। এমনও নয়, এক দিনেই গোটা কাগজ চলিত ভাষায় ছাপা শুরু হয়েছে। ১৯৫৮ সালের ৩০ মে প্রথম পাতার শিরোনাম— ‘কোন শক্তিই কাশ্মীরকে কাড়িয়া লইতে পারিবে না’। সাধু ভাষা। আবার, একই দিনে ‘নাট্যলোক ও চিত্রকথা’ পাতায় ঋত্বিক ঘটকের ‘অযান্ত্রিক’ ছবির সমালোচনা— “নূতনের ডাকে এর আগে বাঙলা দেশের একাধিক চিত্রনির্মাতা সাড়া দিয়েছেন এবং সহজ জনপ্রিয়তার লোভ সংবরণ করে নূতন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ছবি করেছেন। ‘অযান্ত্রিক’ এই নূতনের দলের মধ্যেও বুঝি অনন্য!” চলিত ভাষা। চমকপ্রদ বিষয়টি হল, ১৯৫২ সালের প্রথম দিক থেকেই এই বিভাগটি চলিত ভাষায়।
আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় আজও সাধুভাষায় লেখা হয়। গোটা কাগজ চলিতে হলেও সম্পাদকীয় কেন সাধুভাষায়? সুচিন্তিত সিদ্ধান্তই। প্রথমত, আনন্দবাজার পত্রিকা সাধুভাষার বিরোধী নয়। সাধারণের ভাষার পক্ষে থাকার অর্থ ঐতিহ্যবিরোধী হওয়াও নয়। সম্পাদকের অভিমত বলেই খানিক ধ্রুপদী স্পর্শ। আরও একটি বিষয়, সম্পাদকীয়ের সাধুভাষাও পরিবর্তিত হয়েছে। তাতে শুধু তৎসম শব্দই ব্যবহৃত হয়, তা নয়, দেশি-বিদেশি সব শব্দই সাধু-প্রকরণে প্রযুক্ত হয়। আদতে, সাধুভাষার ধারণাটি শুধু ক্রিয়াপদ ও সর্বনামের ব্যাপার নয় বোধ হয়। বিষয়টি ভাবনার। তাই এই দুই ভাষের মন্থনে আনন্দবাজার তৈরি করতে পেরেছে বহু পারিভাষিক শব্দ। লিপ্যন্তর বা প্রতিবর্ণীকরণে থেমে থাকেনি।
বাঙালির ভাষাপ্রতিমা নির্মাণে আনন্দবাজার পত্রিকার এই একশো বছরের ইতিহাসে প্রাপ্তি তা হলে কী? প্রাপ্তি সর্বার্থে বাঙালির হয়ে ওঠা এবং ভাষাবৈকল্যের শীতল মুহূর্তে বাঙালিকে বাঙালির আত্মশ্লাঘায় উষ্ণ রাখা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy