চূর্ণ: দুর্ঘটনার পরে এমনই অবস্থা গাড়িটির। সোমবার, বালিগঞ্জ থানায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
গাড়ির বাঁ দিকের দরজা দু’টি চুরমার। চূর্ণ-বিচূর্ণ গাড়িটির পিছন দিকও। খুলে গিয়েছে পিছনের একটি চাকা। বালিগঞ্জ থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা এসইউভি-টির এই পরিণতি দেখেই দুর্ঘটনার সময়ে গাড়িটির গতি কত ছিল, তা ভেবে শিউরে উঠছেন অনেকে।
রাতের কলকাতায় ফের গাড়ির বেপরোয়া গতির বলি হলেন এক তরুণী। জখম হয়েছেন তিন জন। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতার নাম জয়ন্তিকা ঝুনঝুনওয়ালা (১৮)। জখমদের নাম অর্ণব চৌধুরী (১৮), স্পর্শ মাখারিয়া (১৭) এবং তানিশা ভাট্টের (১৭)। জয়ন্তিকার বাড়ি নারকেলডাঙায়। অর্ণব নিউ টাউনের বাসিন্দা। আর স্পর্শ এবং তানিশা থাকে গুরুসদয় দত্ত রোডে। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন অর্ণব। রবিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ গুরুসদয় দত্ত রোডে ঘটে এই দুর্ঘটনা। ওই রাস্তা ধরে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের দিকে যাচ্ছিল গাড়িটি। সেই সময়ে তীব্র গতিতে চলা গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার উল্টো দিকে চলে যায়। তখন সেই দিক থেকে আসছিল একটি দুধের ভ্যান। সেটির সঙ্গে সংঘর্ষে উল্টে যায় এসইউভিটি। গাড়িতে থাকা জখম চার জনকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে জয়ন্তিকাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অর্ণব এবং স্পর্শ। চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তানিশাকে। দুর্ঘটনার পরে দু’টি গাড়িকেই বালিগঞ্জ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। দুধের ভ্যানটির সামনের দিকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সেটির চালকের কোনও আঘাত লাগেনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, অর্ণবের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। মে মাসেই তিনি লাইসেন্স পেয়েছিলেন। তবে অর্ণব মত্ত অবস্থায় ছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই চার জন কোথায় গিয়েছিলেন এবং কোথায় ফিরছিলেন, দেখা হচ্ছে তা-ও। জয়ন্তিকা বসেছিলেন গাড়ির পিছনের সিটে। তিনি সিট বেল্ট বেঁধেছিলেন কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। দুর্ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
এর আগেও শহরে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত অগস্টে এক রবিবারের বিকেলে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে দুরন্ত গতিতে ছুটে আসা জাগুয়ার পিষে দিয়েছিল এক মহিলা পথচারীকে। বেপরোয়া গতির গাড়িতে লাগাম পরাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয় পুলিশের তরফে। করা হয় সচেতনতার প্রচারও। কিন্তু তাতে যে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না, রবিবার রাতের দুর্ঘটনা তারই প্রমাণ।
পুলিশ সূত্রের খবর, জয়ন্তিকা ছিলেন কলেজপড়ুয়া। অর্ণবের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে জয়ন্তিকার পরিবার। এ দিন জয়ন্তিকার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে শোকের আবহ। জয়ন্তিকার মা সঙ্গীতা ঝুনঝুনওয়ালা অভিযোগ করেন, ‘‘অর্ণব মত্ত অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিল। ওর জন্যই আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। আমরা ওরশাস্তি চাই।’’
এ দিন দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তায় রক্তের দাগ লেগে রয়েছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে গাড়ির বিভিন্ন অংশ। রমেশ যাদব নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘আমি কাছেই এক জায়গায় কাজ করি। কাল রাতে ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। ছুটে এসে দেখি, একটি গাড়ি উল্টে গিয়েছে। আর একটি দুধের ভ্যান দাঁড়িয়ে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy