—প্রতীকী ছবি।
ভালবেসে বাঙালি কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন দু’বছর আগে। তার পর থেকে ব্যবসার ভিসা নিয়ে তিনি এসে থাকছিলেন কলকাতায়। কলম্বোয় তাঁর নিজের ব্যবসা রয়েছে। কলকাতায় স্ত্রীর ব্যবসাতেও যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
লকডাউনের সময়ে চেষ্টা করেও ভিসার মেয়াদ বাড়াতে না পেরে বাধ্য হয়ে কলকাতায় রয়ে গিয়েছিলেন সেই যুবক। ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। শ্রীলঙ্কার সেই যুবক দিলশান কাসটাস রুকমালকে পুলিশ গ্রেফতার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট। যত ক্ষণ পর্যন্ত তিনি দেশে ফেরার উড়ান না পাচ্ছেন, তত ক্ষণ তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদ। গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্সি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন দিলশান।
২০১৭ সালে বাঙালি ওই কন্যা শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে গেলে দিলশানের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। দু’জনে সেখানকার এক গির্জায় বিয়ে করেন। তার পর থেকেই দিলশান বিজ়নেস ভিসা নিয়ে কলকাতায় আসতে শুরু করেন। ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই ফিরে যেতেন দেশে। আবার ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে চলে আসতেন কলকাতায়।
২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর যখন ছ’মাসের বিজ়নেস ভিসা নিয়ে দিলশান কলকাতায় এসেছিলেন, তখন করোনার নাম-গন্ধ ছিল না কোথাও। ২৭ মে যখন ভিসা শেষ হয়ে যায়, তত ক্ষণে বদলে গিয়েছে সারা বিশ্বের চিত্র।
কলকাতা তো বটেই, ভারতের কোথাও থেকেও শ্রীলঙ্কায় ফেরার উড়ান ছিল না।
দিলশানের কৌঁসুলি মলয় ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, বেশ কয়েক বার ওয়েবসাইটে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তাঁর মক্কেল। শেষে বিদেশিদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর দায়িত্বে যিনি, বিদেশ মন্ত্রকের সেই ফরেনার্স রিজিয়োনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (এফআরআরও)-কে কলকাতায় ইমেল করে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি জানান।
অভিযোগ, দিলশানের সেই ইমেলের কোনও জবাব আসেনি। অগত্যা বেহালায় স্ত্রীর বাড়িতেই তিনি ছিলেন। এর মধ্যেই ব্যবসা সংক্রান্ত কারণে কিছু আত্মীয়ের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর গোলমাল বাধে এবং তাঁদের মধ্যে কেউ দিলশানের কথা স্থানীয় পর্ণশ্রী থানায় জানিয়ে দেন। মলয়বাবু বলেন, “গত ৬ ডিসেম্বর পুলিশ ১৪ নম্বর ফরেনার্স আইনে দিলশানকে গ্রেফতার করে। জানতেও চাওয়া হয়নি, কেন তিনি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও কলকাতায় ছিলেন। নিম্ন আদালতে পরের দিন তাঁকে তোলা হলে জামিনের আবেদন নাকচ হয়ে যায়।”
মলয়বাবু জানিয়েছেন, তাঁরা জামিনের জন্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সব শুনে আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারপতি প্রসাদ। মলয়বাবুর কথায়, “বিচারপতি জানিয়েছেন, যিনি ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন, সেই বিদেশি ব্যক্তির উদ্দেশ্য সৎ কি না, দেখার প্রয়োজন ছিল। এখনকার পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করা উচিত ছিল। তিনি আবেদন করেও যদি জবাব না পান, তা হলে তাঁর কী করণীয় আছে? যত ক্ষণ শ্রীলঙ্কার উড়ান চালু না হচ্ছে এবং তিনি টিকিট কেটে দেশে ফিরছেন, তত দিন তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না বলেও বিচারপতি জানিয়েছেন।”
দিলশানের স্ত্রী এই বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। কলকাতার এফআরআরও কে টি ভুটিয়া বলেন, “অনেক বিদেশি এসে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে অনলাইনে আবেদন করে বাড়িয়ে নিচ্ছেন। দিলশানের বিষয়টি আলাদা করে বলা সম্ভব নয়। গত মে মাসে মেয়াদ শেষের পরে ডিসেম্বরের মধ্যে তো উনি অফিসে আসতে পারতেন। গত কয়েক মাসে তো লোকে বাইরে বেরোচ্ছেন। হতে পারে অনেক ইমেলের মধ্যে ওঁর মেল নজরে আসেনি অফিসারদের।”
কলকাতা হাইকোর্টের সরকারি আইনজীবী রানা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার সময়ে দিলশান যদি স্থানীয় থানায় বিষয়টি জানিয়ে রাখতেন, তা হলে এই গ্রেফতারি এড়াতে পারতেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy