Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
KMC

KMC Election 2021: ২২ কমে ১২, আরও কমে ১০, কলকাতায় অস্তিত্ব রক্ষাই এখন চ্যালেঞ্জ গেরুয়া শিবিরের

কলকাতা পুরভোট ঘোষণার আগে থেকেই ছোট লালবাড়ি দখলের স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেন বিজেপি নেতারা। এখন লক্ষ্য দ্বিতীয় হওয়া।

গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৮:২০
Share: Save:

নীলবাড়ি দখলের স্বপ্ন সত্যি হয়নি। লক্ষ্যের অনেক আগেই থেমে যেতে হয়েছে। তবে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার সকাল পর্যন্তও ‘আশাবাদী’ ছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু কলকাতা পুরভোট ঘোষণার আগে থেকেই ছোট লালবাড়ি দখলের স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। রবিবার ভোটের আগের দিন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ— রাজধানী শহরে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা। ক’টি আসনে জয় আসতে পারে সে প্রশ্নের উত্তরে রাজ্য বিজেপি নেতাদের সকলেরই এক উত্তর— ‘‘ঠিকঠাক ভোট হলে অন্যরকম ফল হত। কিন্তু...।’’

সালতামামি বলছে, ২০১৫ সালে বিজেপি কলকাতা পুরভোটে সাতটি ওয়ার্ডে জয় পেয়েছিল। সেগুলি হল ৭, ২২, ২৩, ৪২, ৭০, ৮৬, এবং ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড। যার মধ্যে ৭ এবং ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপি ঘোষ ও অসীম বসু পরে তৃণমূলে যোগ দেন। সেই ভোট যখন হয়েছিল, তখন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। এর পরে দিলীপ ঘোষের সভাপতিত্ব কালে পুরভোট হয়নি। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল গেরুয়াবাহিনী। তাতেই আশা তৈরি হয়েছিল ছোট লালবাড়ি দখলের।

এর পরে গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর রিঙ্কু নস্কর বিজেপি-তে যোগ দেন। পরে যদিও কসবা বিধানসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন রিঙ্কু। এই পুরভোটে তিনি প্রার্থীই হননি।

কলকাতায় দলের শক্তি যে ক্রমশ কমছে, তা বিজেপি টের পেয়ে যায় ২ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিনেই। দেখা যায়, রাজ্যের অন্য জায়গার তুলনায় কলকাতায় অনেক বেশি ধরাশায়ী গেরুয়া শিবির। এগিয়ে থাকা ওয়ার্ডের সংখ্যা ২২ থেকে কমে হয়ে গিয়েছে ১২। তবে তখনও ভবানীপুর বিধানসভা এলাকার দু’টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল পদ্মশিবির। কিন্তু পাঁচ মাস পর অক্টোবরের গোড়ায় দেখা যায় ভবানীপুরে উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুল জয়ে মে মাসে পিছিয়ে থাকা দু’টি ওয়ার্ডেই এগিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। ফলে বিজেপি-র শক্তি কমে হয়ে যায় ১০।

গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ

সেই ১০টি ওয়ার্ড নিয়ে লড়াই করতে গিয়েও হোঁচট খেতে হয়েছে বিজেপি-কে। গত বার ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী তিস্তা দাস বিশ্বাস কিছুদিন আগেই পথদুর্ঘটনায় মারা যান। সেই ওয়ার্ডে বিজেপি এ বার ঘরোয়া কোন্দল নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। কারণ, দলের প্রার্থী রাজর্ষি লাহিড়ির বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে লড়ছেন প্রয়াত তিস্তার স্বামী গৌরব বিশ্বাস। তাঁর মাথার উপরে আবার হাত রয়েছে দলেরই অভিনেত্রী সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের।

রাজ্যে বিজেপি-র একাংশ ভোটগ্রহণের আগের দিন তুলনায় নিশ্চিন্ত মাত্র তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে। ২২, ২৩ এবং ৪২ নম্বর। এর মধ্যে ২২ এবং ৪২ থেকে অতীতে পাঁচ বার করে জিতেছেন যথাক্রমে মীনাদেবী পুরোহিত এবং সুনীতা ঝাওয়ার। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে গত দুই পুরসভা নির্বাচনে জিতেছেন বিজয় ওঝা। এর বাইরে বিজেপি নেতারা আশাবাদী ৫০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে। লেবুতলা এলাকার এই ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে আসা সজল ঘোষ। দলের রাজ্য নেতারা মনে করছেন সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের দুর্গাপুজো কেন্দ্র করে ওই এলাকায় সজলের নিজস্ব প্রভাব থাকায় ওই আসন গেরুয়া শিবির পেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রেও ‘ভাল ভোট হলে’ শর্ত দিচ্ছেন সকলে।

‘ভাল ভোট’ কী ভাবে হবে, তা নিয়েও নানা মত বিজেপি-তে। একেবারে শেষ মুহূর্তে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা থেকে প্রচারে নেতাদের অংশগ্রহণের অনীহা নিয়ে সমালোচনা চলেছে দলের মধ্যেই। শেষ কয়েক দিন রাজ্য নেতারা কয়েকটি ওয়ার্ডে নাম কা ওয়াস্তে প্রচারেও নামেন। বস্তুত, পুরভোট নিয়ে অনেক বেশি সময় আদালতে ব্যয় করেছেন বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব।

বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই একের পর এক বিষয়ে আদালতের মুখাপেক্ষী হয়ে থেকেছে পদ্মশিবির। ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগ থেকে মুকুল রায়কে বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান করা নিয়ে মামলা করেছে তারা। আর কলকাতা পুরভোট নিয়ে একের পর এক মামলা হয়েছে। তার মধ্যে শেষতমটি কলকাতা পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ নিয়ে। আবেদনটি সুপ্রিম কোর্টে গৃহীত হয়েছে শনিবার। যার শুনানি কবে এবং কখন হবে, তার ঠিক নেই।

প্রথমে রাজ্যের সব পুরসভায় একসঙ্গে ভোটের দাবিতে এবং পরে কলকাতায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে ভোট চেয়ে, বুথভিত্তিক পোলিং এজেন্ট রাখার বিরোধিতা করে আদালতে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই মুখরক্ষা হয়নি। গেরুয়া শিবিরের পক্ষে কোনও রায় না মেলায় একেবারে নির্বাচনের আগের দিনও সুপ্রিম কোর্টের দিকে চেয়ে বিজেপি। কলকাতা হাই কোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রশ্নে ‘না’ বলে দেওয়ার পরে বিজেপি সুপ্রিম কোর্টে যায়। রবিবার ভোটগ্রহণ। আর শনিবারও যখন দলের একাংশ আদালতের দিকে চেয়ে তখন বিজেপি শিবিরেই উঠেছে সমালোচনার সুর। বিজেপি নেতাদেরই কেউ কেউ মনে করেন, রাজ্যে তিন থেকে ৭৫ বিধায়ক হওয়ার পরেও একের পর এক বিষয়ে আদালতের দিকে চেয়ে থাকা দলের পক্ষে লজ্জাজনক। এক নেতার কথায়, ‘‘এসব দিল্লিকে দেখানোর জন্য। যে আমরা কিছু একটা করছি। কিন্তু এতে লাভ কী! বরং সংবাদমাধ্যমে খবর হচ্ছে, আমাদের আবেদন আদালতে খারিজ হয়ে যাচ্ছে! তারও একটা নেতিবাচক প্রভাব দলের কর্মী-সমর্থকদের উপর পড়ছে।’’

তবে তার চেয়েও বিজেপি বেশি চিন্তিত কলকাতায় অস্তিত্ব রক্ষা নিয়ে। তিনটি ওয়ার্ডে নিশ্চিত জয় ধরে মেরেকেটে ৫টি ওয়ার্ড পাওয়ার আশায় বসে রয়েছেন রাজ্য নেতারা। উত্তর কলকাতার এক নেতার কথায়, ‘‘১০টা পেলেও খুব ভাল ফল বলতে হবে।’’

কিন্তু কেন? এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যে একটা হাওয়া ছিল। সেটা না-হওয়ায় কর্মী-সমর্থকদের একটা অংশ ম্রিয়মান হয়ে পড়েছে। আমরা রাজ্যে ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতি অন্যরকম হত।’’ ১০টি ওয়ার্ড জেতা যাবে কি না তা নিয়ে বিজেপি-র চিন্তার পিছনে আরও একটি কারণ রয়েছে। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী চাইছেন, যে ভাবেই হোক কলকাতায় প্রধান বিরোধীদল হতেই হবে।

প্রসঙ্গত, গত পুরভোটে কলকাতায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা বামেরা পেয়েছিল ১৫টি ওয়ার্ড, কংগ্রেস পেয়েছিল ৫টি। তবে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে সারা রাজ্যের মতো কলকাতাতেও বামেদের ঝুলি শূন্য। কংগ্রেসের হাতে মাত্রই একটি ওয়ার্ড।

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Kolkata Municipal Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy