একতা ভট্টাচার্য। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেওয়া।
সোশ্যাল মিডিয়ার ন্যক্কারজনক মিমের জালে নেটাগরিকদের রোষের মুখে বাঙালি মেয়ে একতা। সুন্দরী মেয়ের কালো মোটা বর! এ-ও কি হয়? কে এই একতা?
ডিজিটাল যুগেও সিনেমা-নাটকে হাতে আঁকা পোস্টারের কদর যে কমেনি, উল্টে বেড়েছে চাহিদা, তার জন্য অনেকাংশেই দায়ী তরুণ শিল্পী একতা ভট্টাচার্য। সম্প্রতি একতা বিয়ে করেছেন তাঁর ছোটবেলার বন্ধু অর্ণেষ মিত্রকে। মহারাষ্ট্রের একটি পেজে মিম তৈরি করে একতা আর তাঁর বরের ছবি খুঁজে একদল নেটাগরিক তাঁদের বিয়ের ছবি পেজে পোস্ট করে। সেখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। একতা আর তাঁর স্বামীর বিয়ের পোস্ট বিভিন্ন পেজে ঘুরতে থাকে। বর কালো আর তাঁর ওজন বেশি, এই কারণে ছবির নীচে লেখা হয়, ‘কোমর সাবধান’, ‘১২ বছরে মেয়েটা কত বার যে বলেছে একটু হাল্কা হও’, ‘কালো মেয়ে+ফর্সা ছেলে= ভালবাসা, ফর্সা মেয়ে+কালো ছেলে= সরকারি চাকরি’, কেউ লিখছেন জিম যেতে। এ ভাবেই একতা আর তাঁর স্বামীর অজান্তেই পোস্টটি ভাইরাল হয়।
“১১ বছর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় এই অদ্ভুত কাণ্ড দেখে মুখ খুলতে বাধ্য হলাম। আমাদের ১১ বছরের প্রেম। ২১ বছরের সম্পর্ক। এক আত্মীয় বিয়ের সময় বলেছিল, ‘তোর বরের রং বড্ড কালো, তোর গায়ের সঙ্গে মেলেনি...’। তবে যে ভাবে আমাদের ছবি নিয়ে কুরুচিকর কমেন্ট করা হয়েছে, তা দেখে অবাক হয়েছি। তবে আমাদের খুব একটা কিছু যায় আসে না।” জোর গলায় আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন একতা। তবে তার সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রশ্নও তুলেছেন। “আমরা বিষয়টাকে হাল্কা করে নিয়েছি। কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁরা বডি শেমিং-এর জন্য আজও লজ্জা পান। ভাবেন, তাঁরা অপরাধী! বিশেষ করে এই লকডাউনে তো তাঁরা আরও ডিপ্রেশনের মুখে পড়বেন। তাঁদের জন্যই মুখ খুললাম।”
আরও পড়ুন: এ বার কোভিড রোগীদের পাশে থাকবেন করোনা জয়ী স্বেচ্ছাসেবকরা: মুখ্যমন্ত্রী
একতা আর তাঁর স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছে টলিপাড়াও। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় যেমন বলেছেন, তাঁর আর মিথিলার বিয়ের আগে ফেসবুকে মিথিলার ধর্ম, বয়স, পুরনো সম্পর্ক, ব্যক্তিগত ছবি, সব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সুদীপ্তা চক্রবর্তী লিখেছেন, তিনিও বিয়ের পর এ রকম ট্রোলের মুখোমুখি হয়েছেন। সুদীপ্তা লিখেছেন, “আমার স্বামীর গায়ের রং আর চেহারা নিয়ে অনেকে হাসাহাসি করা হয়েছিল সে সময়, আমাদেরও ছবি ট্রোলড হয়েছে, এই সব মন্তব্যকে ভেতরে না নেওয়াই ভাল।”
আবির চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী নন্দিনী চট্টোপাধ্যায়ও একতা আর অর্ণেষকে লিখেছেন, “তোমাকে এই ক্লাবে স্বাগত। এক প্লেট রসগোল্লা খেয়ে এই অন্য লোকের ফ্রাস্ট্রেশন উপভোগ কর।”
আরও পড়ুন: জরুরি পরিষেবায় যুক্তদের জন্য সীমিত পরিষেবা দিতে চায় মেট্রো
এর পরেও অবশ্য থেমে থাকেনি নেটাগরিকের দল। একতা আর অর্ণেষের ছোটবেলার ছবি শেয়ার করে বলে চলেছে, ‘কথা দিয়ে কথা রাখা’... একতা বললেন, “এই জায়গায় এসে এখন দেখছি ‘কথা দিয়ে কথা রাখা’ ক্যাম্পেন মানুষ অনেক বেশি সদর্থক ভাবে নিয়েছেন। আমাদের ছবি শেয়ার করে যে যাঁর গার্লফ্রেন্ড আর বয়ফ্রেন্ডের ছবি দিচ্ছেন। প্রায় ৪০ হাজার শেয়ার হয়েছে এই ক্যাম্পেন।” মহারাষ্ট্র থেকে ত্রিপুরা, সর্বত্রই একতা আর অর্ণেষের ছবি দিয়ে ১১ বছরের সম্পর্ক ধরে রাখার প্রতীক হিসেবে ছবি শেয়ার চলছে। এতে অবশ্য বেশ খুশি ট্রোলড হওয়া দম্পতি।
তবে এ কথা মেনে নিতে দ্বিধা নেই, ‘লাভলি’ থেকে ‘ফেয়ার’ ঘুচে গেলেও ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে আজকের প্রজন্মের মধ্যেও গাঁথা আছে ‘সুন্দর’-এর মিথ্যা নির্মাণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy