মৃত্যুর আগে ঘোড়ার পিঠে জামাল শেখ। ফাইল চিত্র
জমিদারি তাঁর রক্তে।
এক সময়ে বড় বাড়ি ছিল গ্রামে। লোকে জানত ‘মিঞাবাড়ি’ নামে। আশপাশের লোকে সম্মানও করত। তাঁর ঘোড়ায় চড়া শুরু কৈশোরেই। জমিদারি চলে যাওয়ার পরে লাগোয়া একটি মাটির বাড়ি ও মিঞাবাড়ির অল্প জমি ছাড়া কিছু মেলেনি ভাগে। কিন্তু তাতে রাশ পড়েনি ঘোড়ায় চড়ায়। গায়ে আতর মেখে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবিতে ঘোড়ার পিঠেই আজীবন ঘুরে বেড়িয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের রাজখাঁড়া গ্রামের জামাল শেখ। ভিন্ জেলা তো বটেই, ঘোড়া ছুটিয়ে পাড়ি দিতেন তিনি ভিন্ রাজ্যেও। সপ্তাহখানেক আগে ঘোড়ার পিঠ থেকেই পড়েই মৃত্যু হয় বছর পঁচাত্তরের বৃদ্ধের। তার পরেই বিপাকে পড়েছেন জামালের চার ছেলে।
আজীবন একাধিক ঘোড়া কেনা, সেগুলির দেখভালে সাধ্যাতীত খরচকে বাবার ‘ঘোড়ারোগ’ বলেই ভেবে এসেছেন ছেলেরা। কিন্তু সেই ঘোড়াই এখন তাঁদের কাছে বাবার স্মৃতি। জামালের বড় ছেলে মতিয়ার রহমান বলেন, ‘‘আমাদের অবস্থা শাঁখের করাতের মতো। বাবার শখ মেটাতে গিয়ে কিছুই করে উঠতে পারিনি। এখনও ঘোড়া কেনার ঋণ রয়েছে। আবার বাবার স্মৃতি ফেলতেও পারছি না।’’
জীবনে গোটা ছয়েক ঘোড়া কিনেছিলেন জামাল। রাজ, তুফানের পরে তাঁর শেষ সঙ্গী ছিল সুলতান। পরিজনেরা জানান, চার মাস আগে বিহারের কিসানগঞ্জের কাছে একটি গ্রাম থেকে এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় সুলতানকে কেনেন তিনি। বিহার গিয়েছিলেন ঘোড়ায় চড়েই। মাঝপথে ঘোড়াটি মারা যাওয়ায় বাকি পথ হেঁটে পাড়ি দেন তিনি। মতিয়ার জানান, কখনও বাস-গাড়ি-বাইক, এমনকি সাইকেলেও চড়েননি বাবা। সর্বত্র ঘোড়ায় যেতেন। ‘ঘোড়াবাবু’, ‘ঘোড়াদাদু’ বলেও ডাকতেন অনেকে। ঘোড়া কেনার জন্য চড়া সুদে টাকাও ধার করতেন।
ভগ্ন বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধের আর এক ছেলে নুর আলি শেখ বলেন, ‘‘ঘোড়ার জন্য প্রতিদিন কয়েক কেজি করে ছোলা, ভুষি-সহ নানা খাবার দিতে হচ্ছে। মাসে খরচ প্রায় সাড়ে সাত হাজার টাকা। ঘোড়ার খোরাক জোগাতেই নাজেহাল আমরা।’’ তবে জামালের নাতি, বছর তেরোর সাহিল শেখের আবদার, “দাদু আমাকেও ঘোড়ায় চড়া শিখিয়েছে। ঘোড়াকে বাড়িছাড়া করা যাবে না।’’
কষ্ট হলেও বাবার স্মৃতি হিসেবে থাক সুলতান, চাইছেন ছেলেরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy