Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata Municpal Corporation

বর্ষাতি-দুর্নীতিতে জড়িত আধিকারিকদের শো-কজ় করবে পুরসভা 

মাসছয়েক আগে পুরসভার রেসিডেন্সিয়াল অডিট অফিসার আভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টে সাফ জানিয়েছিলেন, বর্ষাতি কেনার ক্ষেত্রে যাবতীয় নিয়ম মানা হয়নি। বরং টেন্ডার ছাড়াই একটি বিশেষ সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।

An Image Of Kolkata Municipality

কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৫১
Share: Save:

মেয়রের নির্দেশ উপেক্ষা করে, টেন্ডার ছাড়াই স্কুলপড়ুয়াদের জন্য প্রায় ৭৪ লক্ষ টাকার বর্ষাতি কেনা নিয়ে ইতিমধ্যেই জলঘোলা শুরু হয়েছে। পুরসভায় এত বড় দুর্নীতির খবর মেয়রের কাছে ছিল না কেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। বছর ছয়েক আগের এই ঘটনায় তদানীন্তন পুর শিক্ষা বিভাগের আধিকারিকদের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনার ঝড় উঠেছে কলকাতা পুরভবনে। তাই এ বার টেন্ডার ছাড়া বর্ষাতি-কেলেঙ্কারির জন্য যাঁরা সংশ্লিষ্ট ফাইলে সই করেছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে শো-কজ় করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা।

ওই ফাইলে পুরসভার তদানীন্তন মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ও সই করেছিলেন। অভিজিৎ বর্তমানে মেয়র পারিষদ (রাস্তা)-র দায়িত্বে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি অভিজিৎকেও শো-কজ় করা হবে? নাকি তৃণমূলের সদস্য ও মেয়র পারিষদ হওয়ায় তিনি ছাড় পাবেন? বর্ষাতি-কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্নীতির ছবি বেআব্রু হতেই পুরসভার প্রায় প্রতিটি দফতরের কর্মী-আধিকারিকেরা সরব হয়েছেন। তাঁদের সাফ কথা, ‘‘মেয়র ফাইলের উপরে ‘নো’ লিখে দেওয়া সত্ত্বেও কী ভাবে লক্ষাধিক টাকার বর্ষাতি কেনা হল? এ ক্ষেত্রে যাবতীয় দায় তো তদানীন্তন মেয়র পারিষদ (শিক্ষা)-কে নিতে হবে!’’ যদিও এ প্রসঙ্গে অভিজিৎকে রবিবার ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি এখন মিটিংয়ে আছি। কথা বলতে
পারব না।’’

মাসছয়েক আগে পুরসভার রেসিডেন্সিয়াল অডিট অফিসার আভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টে সাফ জানিয়েছিলেন, বর্ষাতি কেনার ক্ষেত্রে যাবতীয় নিয়ম মানা হয়নি। বরং টেন্ডার ছাড়াই একটি বিশেষ সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে পুরসভার শীর্ষ কর্তারা বর্ষাতি সংক্রান্ত ফাইল খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড়। তাঁদের নজরে আসে, ২০১৮ সালে পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বর্ষাতি কেনার জন্য শিক্ষা দফতর যে দরপত্রের প্রক্রিয়া করে, তাতে একাধিক অসঙ্গতি থাকায় পুর অর্থ দফতর তাতে অনুমোদন দেয়নি। পরে ওই ত্রুটিপূর্ণ দরপত্র প্রক্রিয়ায় ‘ছাড়’ দেওয়ার আবেদন জানিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে ফাইল যায়। কিন্তু মেয়র ওই ফাইলের উপরে ‘নো’ লিখে দেওয়ার পরেও পুর শিক্ষা দফতরের তরফে ৭৩ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকার মূল্যের ২২০৪০টি বর্ষাতি কেনা হয় বলে অভিযোগ!

এ দিকে বর্ষাতি-দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসতে পুর কর্তৃপক্ষের নজরদারি নিয়েও একগুচ্ছ অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, মেয়র বর্ষাতি কেনার ফাইলে ‘নো’ লিখে দেওয়ার পরেও কী ভাবে তা এত দিন ধামাচাপা রইল? মেয়রের অজানতে কী ভাবে এত বড় কেলেঙ্কারি ঘটল? তাহলে কি পুরসভার আধিকারিকদের একাংশ দুর্নীতিকে ‘সরাসরি’ প্রশ্রয় দিচ্ছেন? ছ’বছর আগের ঘটনা কেনই বা জানেন না মেয়র? তাহলে কি মেয়রের উপরে আধিকারিকদের আস্থা নেই? পুরসভার ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, মেয়রকে ‘অন্ধকারে’ রেখে যে প্রক্রিয়ায় বর্ষাতি কেনা হয়েছিল তাতে বেজায় চটে রয়েছেন ফিরহাদ। তাঁর সাফ কথা, ‘‘দুর্নীতিকে কোনও ভাবেই বরদাস্ত করব না। এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’ উল্লেখ্য, বর্ষাতি কেলেঙ্কারির ঘটনায় পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত আইএএস পদমর্যাদার এক শীর্ষ কর্তা ছিলেন। তাঁকে কী পদ্ধতিতে শো-কজ় করা যায়, তার চিন্তাভাবনা করছে পুরসভা। রবিবার পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘মেয়র ‘না’ বলে দেওয়ার পরেও যাঁরা যাঁরা ফাইলে সই করেছিলেন, তাঁদের সবাইকে শো-কজ় করা হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy