সেই চিঠি
কলকাতা পুরসভা চিঠি পাঠিয়ে অনেক আগেই সতর্ক করেছিল স্বাস্থ্য দফতরকে। জানিয়েছিল, ডেঙ্গির মতো রোগ ঠেকাতে মশা চেনার বিশেষজ্ঞ চাই কলকাতার লাগোয়া প্রত্যেক পুরসভায়। কিন্তু দু’বছরেও সেই চিঠি নিয়ে কোনও নড়াচড়া নেই রাজ্য প্রশাসনে।
ডেঙ্গিতে মৃত আনিসা খাতুন কলকাতার বাসিন্দা কি না, তা নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এবং কলকাতা পুর প্রশাসনের মধ্যে তরজা ছিলই। তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ২০১৪ সালের মার্চে পাঠানো ওই চিঠি। তার প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছিল রাজ্যের পুরসচিবের কাছেও। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, কলকাতা লাগোয়া পুরসভাগুলিতে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি–সহ মশাবাহিত নানা রোগ ঠেকাতে কিছু সদর্থক পদক্ষেপ করার অনুরোধ করা হয় ওই চিঠিতে। কিন্তু কান দেননি স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা। তারই খেসারত দিতে হচ্ছে এখন। কলকাতা পুরসভার কর্তাদের দাবি, স্বাস্থ্যকর্তারা চিঠি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে ডেঙ্গি এত বড় আকার নিত না।
চিঠিতে বলা হয়েছিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ‘ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’-এর শর্ত মেনে মশাবাহিত রোগ ঠেকাতে পতঙ্গবিদ-নির্ভর পরিকাঠামো গড়ে তোলা দরকার। প্রথম পর্যায়ে কলকাতার আশপাশের পুরসভাগুলিতে এবং পরবর্তী পর্যায়ে রাজ্যের সর্বত্র এ ধরনের পরিকাঠামো গড়ে তোলার আবেদন জানানো হয়। কিন্তু দু’বছরেও সেই চিঠির জবাব না মেলায় হতাশ কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষ। আর এখন যখন ত্রাস হয়ে উঠেছে ডেঙ্গি, তখন কলকাতার লাগোয়া বরাহনগর, ব্যারাকপুর, মহেশতলা প্রভৃতি পুরসভার চেয়ারম্যানেরা জানাচ্ছেন, তাঁদের এলাকায় মশাবাহিত রোগ ঠেকানোর পরিকাঠামোই নেই। গোটা রাজ্যে ডেঙ্গি ছড়ানোয় এখন নতুন করে পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা উঠছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কলকাতা পুরসভা ছাড়া রাজ্যের আর কোনও পুরসভাতেই পতঙ্গবিদ নেই।
পতঙ্গবিদের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে চিঠিটি লিখেছিলেন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। রবিবার তিনি জানান, চিঠিটি ২০১৪ সালের মার্চে দেওয়া হয়েছিল কেন? পুরসভা সূত্রের খবর, ওই সময়ে পুর স্বাস্থ্য দফতর শহরের কোথায় কোথায় ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী মশা বাসা বাঁধে, তার তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা শুরু করে। অতীনবাবু জানান, তথ্যভাণ্ডার তৈরির সময়েই নজরে আসে, কলকাতার প্রান্ত এলাকায় মশার বংশ বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়াবাহী মশা চিনতে যে পতঙ্গবিদ প্রয়োজন, তা স্পষ্ট হয়ে যায়।
চিঠি দেওয়ার আগে ওই বছরের ১৩ মার্চ স্বাস্থ্য ভবনে বিষয়টি নিয়ে বৈঠকও হয়। তার ভিত্তিতেই এক সপ্তাহ পরে ওই চিঠি পাঠানো হয় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে। চিঠিতে বলা হয়েছিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের শর্ত মেনে মশাবাহিত রোগ নিবারণে পতঙ্গবিদ-নির্ভর পরিকাঠামো গড়ে তোলা দরকার। এর প্রথম পর্যায়ে কলকাতার আশপাশের পুরসভাগুলিতে এবং পরবর্তী পর্যায়ে রাজ্যের সর্বত্র এ ধরনের পরিকাঠামো গড়ে তোলার আবেদন জানানো হয়। কিন্তু দু’বছরেও সেই চিঠির জবাব না মেলায় হতাশ কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষ।
কলকাতা এবং রাজ্য জুড়ে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়তেই পুরসভা এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর উভয়েই বিব্রত। ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে নবান্নে বৈঠকও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে পুরসভার মতে, স্বাস্থ্য দফতর এ ব্যাপারে উদ্যোগী হলে ডেঙ্গির প্রকোপ কিছুটা হলেও ঠেকানো যেত। গোটা রাজ্যে ডেঙ্গি ছড়ানোয় এখন নতুন করে পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা উঠছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কলকাতা পুরসভা ছাড়া রাজ্যের আর কোনও পুরসভায় পতঙ্গবিদ নেই।
কলকাতা লাগোয়া রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পল্লব দাস মেনে নিয়েছেন, মশাবাহিত রোগ নিবারণের পরিকাঠামো তাঁদের নেই। তাঁর কথায়, ‘‘কলকাতা পুরসভাকে অনুসরণ করে শুধু সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করছি।’’ তবে পতঙ্গবিদ থাকলে মশা চিনতে যে সুবিধা হতো, তা মেন নেন তিনি। মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাস বলেন, ‘‘মশা নিবারণে কলকাতার সহায়তা পাচ্ছি। পতঙ্গবিদ থাকলে অবশ্যই সুবিধা হতো।’’
তাঁদের পুরসভায় মশা নিবারণের পরিকাঠামো যে ভাল নয়, তা স্বীকার করেছেন বজবজ পুরসভার চেয়ারম্যান গৌতম দাশগুপ্ত। বরাহনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বলেন, ‘‘পতঙ্গবিদ থাকা খুবই জরুরি। কিন্তু আমাদের সেই পরিকাঠামো নেই। এ বার অজানা জ্বরের সংখ্যা বাড়ছে। তাতে ডেঙ্গি নিয়ে আতঙ্কও বাড়ছে।’’
১০০ বছরেরও বেশি পুরনো পুরসভা ব্যারাকপুর। সেখানেও পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ নেই। অথচ ডেঙ্গি নিয়ে শনিবারই পুর-উদ্যোগে বিভিন্ন স্কুল, বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ইতিমধ্যেই ওই পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্ত কয়েক জন হাসপাতালে ভর্তি। তবে পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ নিয়ে এই পুরসভা যে এর আগে ভেবেছে, এমনটাও নয়। পুর চেয়ারম্যান উত্তম দাস বলেন, ‘‘সরকার সার্কুলার পাঠালে আমরা স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলতে পারি। কলকাতা পুরসভা অনেক বড়। সেথানে যা সম্ভব, তা এখানে সম্ভব নয়। আমরা শুধু সচেতনতার কাজটুকু করতে পারছি। আর হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে যাতে তৎপরতার সঙ্গে পরীক্ষা করা হয়, সে দিকে জোর দিচ্ছি।’’
স্বভাবতই যে হারে ডেঙ্গি বাড়ছে, তাতে কলকাতা লাগোয়া পুরসভার কর্তারাও চিন্তায় পড়েছেন। এখন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এ ব্যাপারে নজর দিলে তাঁরা অনেকটাই নিশ্চিন্ত হবেন বলে জানিয়েছেন একাধিক পুর-প্রশাসক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy