বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনে ‘কালা দিবস’ পালন করল বামফ্রন্ট। সোমবার ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক ।
দলীয় দফতরের চার দেওয়ালের মধ্যে নয়। প্রথা ভেঙে এ বার শহরের প্রাণকেন্দ্রে কার্যত রাস্তায় দাঁড়িয়ে কলকাতা পুরভোটের ইস্তাহার প্রকাশ করল বামফ্রন্ট! সেই ইস্তাহারে জোর দেওয়া হয়েছে ‘গ্রিন সিটি, ফিট সিটি’ গড়ার উপরে। আর রাজনৈতিক ভাবে তাদের আহ্বান, ‘কলকাতার স্টিয়ারিং বাঁ দিকে ঘুরিয়ে দিন’!
ধর্মতলায় লেনিন মূর্তি চত্বরে সোমবার দুর্যোগ মাথায় নিয়েই আনুষ্ঠানিক ভাবে ইস্তাহার প্রকাশ করেছেন কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের নেতারা। হাজির ছিলেন সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি ও ফরওয়ার্ড ব্লকের চার জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার, প্রবীর দেব, দেবাশিস মুখোপাধ্যায় ও জীবন সাহা। কলকাতার বর্তমান পরিস্থিতি, দাবি-দাওয়া নিয়ে বামেদের সাম্প্রতিক আন্দোলন এবং বামেদের হাতে পুরবোর্ড এলে তারা কী করতে চায়— এই ভাবনায় সাজানো হয়েছে পুরভোটের ইস্তাহার। কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক কল্লোলবাবুর কথায়, ‘‘সারা বছর আমরা রাস্তায় আছি। তাই রাস্তায় দাঁড়িয়েই ইস্তাহার প্রকাশ করছি।’’
বাম নেতৃত্বের অভিযোগ, লাগামছাড়া বহুতল নির্মাণ এবং জলাভূমি বোজানোর ফলে কলকাতার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। যে কোনও বড় বিপর্যয়ের মুখে অসহায় হয়ে পড়তে পারে গোটা শহর। তাই প্রোমোটার ও ‘রিয়েল এস্টেট-রাজে’ লাগাম টেনে সবুজ শহর গড়ে তোলার দিকে নজর দিয়েছেন তাঁরা। বাম নেতৃত্বের বক্তব্য, গভীর নলকূপের উপরে নির্ভরতা কমিয়ে জল পরিশোধন প্রকল্পে জোর দিয়েছিল অতীতের বাম পরিচালিত পুরবোর্ড। এখন সে ভাবনাও
অতীত!। প্রান্তিক পরিবারগুলির ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার সুয়োগ দিতে পুরসভার স্কুল চলত। তেমন অনেক স্কুলই এখন বন্ধ, কিছু ক্ষেত্রে স্কুলের জমিও হস্তান্তর হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ইস্তাহারে বামেরা বলেছে ‘উঠোনে পাঠশালা’র কথা। কল্লোলবাবুর বক্তব্য, ‘‘ঘরোয়া ভাবে এমন পড়াশোনার কাজ শুরু করে তাকে প্রথাগত ধারার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যায়। সে ভাবনা আমাদের আছে।’’
করোনা ও লকডাউনের সময়ে বামেদের উদ্যোগে যদি কলকাতা ও আশেপাশে শ’খানেক শ্রমজীবী ক্যান্টিন চালানো যায়, তা হলে শাসক পক্ষ তা কেন করল না— সেই প্রশ্নও তুলেছেন কল্লোলবাবুরা। ওই ধরনের ক্যান্টিন পুরসভার উদ্যোগে চালানোর প্রতিশ্রুতিও রয়েছে বাম ইস্তাহারে। অতিমারি পরিস্থিতিতে ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’ বাহিনী যে ভাবে কাজ করেছে, তাকে পুঁজি করতেও চাইছে বামেরা। প্রার্থী তালিকায় অন্তত ৪২ জন আছেন, যাঁরা ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’ হিসেবে কাজ করেছেন। কাজের জন্য বাইরে চলে যাওয়া ছেলেমেয়েদের অনুপস্থিতিতে যে বাবা-মায়েরা এই শহরে নিঃসঙ্গ হয়ে আছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার রয়েছে ইস্তাহারে। পাশাপাশিই বলা হয়েছে, ‘জোরে ছুটছে আমাদের শহর। খাদে পড়ার আগে কলকাতার স্টিয়ারিং বাঁ দিকে ঘুরিয়ে দিন’।
তার আগে এ দিন ধর্মতলা চত্বরেই অম্বেডকরের মৃত্যুদিন ও বাবরি ধ্বংসের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘সংহতি দিবস’ পালন করেছে রাজ্য বামফ্রন্ট। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের জমানায় সাংবিধানিক অধিকার কী ভাবে বিপন্ন, তার প্রতিবাদের পাশাপাশিই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে জ্যোতি বসু বিজেপিকে ‘অসভ্য, বর্বর দল’ বলেছিলেন। আর আজকের মুখ্যমন্ত্রী কালীঘাটে অটলবিহারী বাজপেয়ীকে মালপোয়া খাইয়েছিলেন। গুজরাত-কাণ্ডের পরে মোদীকেও ফুল পাঠিয়েছিলেন তিনি।’’ সূর্যবাবুর বক্তব্য, বিজেপির সাহায্য নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বড় হয়েছে এবং তৃণমূলের কাজকর্মে এখন আবার বিজেপির লাভ হচ্ছে। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, কৃষক আন্দোলন যে পথ দেখিয়েছে, সেই ভাবেই আন্দোলন গড়ে বিজেপি সরকাকে ‘শিক্ষা’ দিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy