Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বদ সঙ্গে সর্বনাশ, দাবি পরিবারের

আব্দুল লতিফের ছেলে, বর্ধমানের বাদশাহি রোড-মাঠপাড়ার রেজাউল করিমকে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মামলায় আট বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে এনআইএ-র বিশেষ আদালত। আব্দুস সালামের ভাই আবুল কালামেরও একই সাজা শুনিয়েছে আদালত। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই ঘটনার মাস ছয়েক আগে রেজাউল বিয়ে করেছিল। তার স্ত্রী মুর্শিদাবাদে থাকেন। বছর দশেক আগে মুর্শিদাবাদেই থাকত রেজাউলের পরিবার।

এখন মাদ্রাসা মিশেছে মাটিতে, রয়েছে ভাঙা দেওয়াল। নিজস্ব চিত্র

এখন মাদ্রাসা মিশেছে মাটিতে, রয়েছে ভাঙা দেওয়াল। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত ও সুচন্দ্রা দে
বর্ধমান ও মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৯ ০৪:২৪
Share: Save:

দুপুরে বাড়ির আবর্জনা ডাস্টবিনে ফেলার জন্যে বাইরে বেরিয়েছিলেন আব্দুল লতিফ। তার ফাঁকেই বললেন, ‘‘ছেলের কথা কিছু বলতে পারব না। আজ নাকি সাজা হবে শুনলাম। দোষ করে থাকলে আইন তো কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না।’’
বর্ধমান থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে মঙ্গলকোটের কুলসুনো গ্রামে শেখ আব্দুস সালামও বলেন, ‘‘চাষবাস করে খাই। ভাইয়ের সঙ্গে বহু বছর দেখা নেই। তার সম্পর্কে কিছু বলতেও পারব না।’’

আব্দুল লতিফের ছেলে, বর্ধমানের বাদশাহি রোড-মাঠপাড়ার রেজাউল করিমকে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মামলায় আট বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে এনআইএ-র বিশেষ আদালত। আব্দুস সালামের ভাই আবুল কালামেরও একই সাজা শুনিয়েছে আদালত।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই ঘটনার মাস ছয়েক আগে রেজাউল বিয়ে করেছিল। তার স্ত্রী মুর্শিদাবাদে থাকেন। বছর দশেক আগে মুর্শিদাবাদেই থাকত রেজাউলের পরিবার। কর্মসূত্রে বর্ধমানে এসে বাদশাহি রোডে-মাঠপাড়ায় বাড়ি করেছিল রেজাউল। তার চার কাকা মাঠপাড়ায় পাশাপাশি বাড়ি করেছেন। কাকা চমক শেখের সঙ্গে একই পাঁচিলে এক চিলতে বাড়ি বানাচ্ছিল রেজাউল। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের দু’সপ্তাহ পরে ওই বাড়ির ভিতর থেকে ৩৯টি আইইডি পেয়েছিলেন এনএসজি-র কম্যান্ডোরা। তার পর থেকে বাড়িটি তালাবন্ধ। তালায় মরচে পড়ে গিয়েছে।

রেজাউলের কাকা বলেন, ‘‘আমার সঙ্গেই ভাইপো রাজমিস্ত্রির কাজ শিখেছিল। নির্মাণকর্মী হিসেবে নামও করেছিল। আমরা এক সঙ্গে কাজে যেতাম। ঘটনার দিনও কাজে গিয়েছিলাম। কাজ করতে-করতে সেই যে চলে গেল, আর দেখা হয়নি। বদ সঙ্গে সর্বনাশ!’’
কী ভাবে ‘বদ সঙ্গে’ পড়ল রেজাউল? এনআইএ-র তদন্তকারীরা জানান, বিস্ফোরণে নিহত শাকিল গাজি-সহ জেএমবি-র (জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ) অন্য চাঁইদের সঙ্গে নির্মাণকাজ করার সময়ে পরিচয় হয় তার। বর্ধমানে থাকার সময়ে কওসর ও কদরকে শিমুলিয়া যাওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিল রেজাউল। এনআইএ-র তদন্তকারীদের দাবি, রেজাউল নিজেও জেহাদের পাঠ নিয়েছিল। যদিও আদালতে সে আর্জি জানিয়েছে, সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে চায়।

২০১৪ সালের অক্টোবরে খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরে। সৌজন্যে: আনন্দবাজার আর্কাইভ

কুলসুনো গ্রামে কালামের দাদা সালাম জানান, বিয়ে করার পরে ভাই পূর্বস্থলীর খড়দত্তপাড়ায় থাকতে শুরু করেছিল। বাড়িতে সে কমই আসত। সালাম বলেন, ‘‘শুনেছি ভাই মাঝেমধ্যে মায়ের সঙ্গে কথা বলত। আমি কখনও কথা বলিনি।’’ তিনি জানান, কালামের স্ত্রী খড়দত্তপাড়ায় দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকেন। এনআইএ-র তদন্তকারীরা জানান, মৃত শাকিল গাজির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল কালামের। শাকিল গাজির বেলডাঙার ‘বোরখা ঘরেও’ সে কয়েক বার গিয়েছিল। এ ছাড়াও শিমুলিয়ার মাদ্রাসাতেও তাকে দেখা গিয়েছিল। রেজাউলের মতো কালামও সমাজের মূলস্রোতে ফেরার আবেদন করেছিল বিচারকের কাছে।

মঙ্গলকোটের শিমুলিয়ার বোরহান শেখ ও কৃষ্ণবাটী গ্রামের ইউসুফ শেখের বিচার এখনও চলছে। বোরহানের মা আসুরা বিবি এ দিন বলেন, ‘‘ছেলের যেন ফাঁসি না হয়, এটুকুই প্রার্থনা। জেলে থাকলেও অন্তত ও বেঁচে আছে, এটুকু জেনে স্বস্তি পাব।’’ শিমুলিয়ার বাসিন্দা আবুল কাশেমের আক্ষেপ, ‘‘বুরহান তো ভালই কাঠের ব্যবসাপাতি করত। এ সব কাণ্ডে শুধু-শুধু গ্রামের বদনাম হল!’’ আর এক বাসিন্দা নুরুল হুদা বলেন, ‘‘গ্রামের মাদ্রাসায় কিশোরীদের যাতায়াত করতে দেখতাম। বেশিরভাগ জনই বোরখা পরে থাকত। আমরা ভাবতাম, ভিতরে বোধহয় ধর্মের পাঠ দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পর থেকে এখানে আর কাউকে আসতে দেখিনি।’’ কৃষ্ণবাটী গ্রামে ইউসুফের বাবা আব্দুল হাফিজের অভিযোগ, ‘‘ওই ঘটনার পর থেকে ছেলের বিষয়ে কোনও খবর পাই না। ওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

khagragarh blast
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy