শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের কৌস্তুভ জামিন পেয়েছেন। তাতে সুনির্দিষ্ট ভাবে সিপিএমের বিকাশের ‘অবদান’ রয়ে গিয়েছে। ফাইল চিত্র।
সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফলাফল যে জোটের পালে হাওয়া লাগিয়েছে, তা বোঝা গিয়েছিল বৃহস্পতিবারই। সেই হাওয়া আরও গতিশীল করে তুলল কংগ্রেস নেতা কৌস্তুভ বাগচীর গ্রেফতারি। অন্তত বাম এবং কংগ্রেস শিবিরের নেতারা তেমনই ভাবছেন। সেই ভাবনার পাশাপাশি কৌস্তুভের গ্রেফতারিকে সামনে রেখে জোটকে আরও জোরদার করার পথে এগোচ্ছেন।
কৌস্তুভের গ্রেফতারির পরেই জোটবদ্ধ ভাবে সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজনৈতিক আক্রমণ করতে নেমেছিলেন বাম এবং কংগ্রেসের নেতারা। তার পরেই দেখা গেল, শনিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে কংগ্রেসের আইনজীবী নেতার হয়ে সওয়াল করলেন সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের কৌস্তুভ জামিন পেয়েছেন। তাতে সুনির্দিষ্ট ভাবে সিপিএমের বিকাশের ‘অবদান’ রয়ে গিয়েছে। অনেকে বলছেন, এটা ‘আইনজীবী সৌভ্রাতৃত্ব’। কিন্তু তার চেয়েও এটি অনেক বেশি ‘রাজনৈতিক সমমনস্কতা’।
২০১৪ সালে সারদার মামলাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে প্রথম বার কাছাকাছি এসেছিল বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। সেই মামলা দেশের শীর্ষ আদালতে নিয়ে যেতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেছিলেন সিপিএমের বিকাশ। তার ফলস্বরূপ শীর্ষ আদালতের রায়েই সারদা মামলার তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছিল সিবিআই। সেই জোটের সূত্র ধরেই ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে জোট হয়েছিল বাম-কংগ্রেসের মধ্যে। তার পর কখনও কোনও নির্বাচনে দু’পক্ষের জোট হয়েছে। কখনও হয়নি। কিন্তু মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে বাম-সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী জয়লাভ করতে সেই মডেলে আস্থা রাখতে চাইছেন রাজ্যের বাম ও কংগ্রেস নেতারা। পাশাপাশি, ত্রিপুরা বিধানসভাতেও এই প্রথম বাম-কংগ্রেস জোট হয়েছিল। বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে না পারলেও যে জোটের ফল ‘ইতিবাচক’ হয়েছে বলেই উভয় তরফের নেতাদের দাবি। পাশাপাশি, বাংলায় ‘সাগরদিঘি মডেল’-কে সামনে রেখে অধীর চৌধুরী থেকে সুজন চক্রবর্তী— সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে পঞ্চায়েত থেকে লোকসভার ভোটে পথচলার কথা বলেছিলেন।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে জোট বেঁধে লড়াই করে শূন্যে পৌঁছে যাওয়া দু’দলই রাজ্য জুড়ে আপাতত ‘সাগরদিঘি মডেল’ গড়তে মরিয়া। বিধানসভা ভোটের দেড় বছরের কিছু বেশি পরে বামেদের সমর্থন নিয়ে শাসক তৃণমূলকে পিছনে ফেলে সাগরদিঘিতে জিতেছেন কংগ্রেসের বাইরন বিশ্বাস। মাঝে জোট নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও আবার পরস্পরের ‘প্রয়োজনীয়তা’ বুঝেছেন মহম্মদ সেলিম, অধীর চৌধুরীরা। এমনটাই মত দু’দলের রাজ্য স্তরের নেতাদের। তাই সারদাকাণ্ডে পরস্পরের সঙ্গে মিলে রাজপথে প্রতিবাদের মিছিলে শামিল হওয়া নেতারা আবার জোটবদ্ধ হতে শুরু করেছেন। আইনজীবী কৌস্তুভের গ্রেফতারি সেই পথকে আরও মসৃণ করে দিয়েছে। শনিবার দুপুরে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে যেমন দেখা গিয়েছে কংগ্রেসের আইনজীবীদের, তেমনই তাঁদের সঙ্গে দেখা গিয়েছে বামপন্থী আইনজীবীদেরও। দু’দলের নেতৃত্বে ‘জোটপন্থী’ বিকাশ। এক সময় সিপিএমের বিকাশকে রাজ্যসভার মনোনয়ন দিতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দরবার করেছিলেন খোদ মান্নান। প্রথম বার সেই অনুরোধ না মানা হলেও ২০২০ সালে তৎকালীন বিরোধী দলনেতা মান্নানের দাবি মেনে সিপিএম আইনজীবী নেতাকে রাজ্যসভায় পাঠাতে সায় দিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে মাত্র চারটি আসনে জোট গড়েছিল দু’পক্ষ। তাতে সিপিএমের সর্থমন নিয়ে কংগ্রেসের দু’জন প্রার্থী সাংসদ হলেও জিততে পারেননি একজনও বামপ্রার্থী। ২০২১ সালে হাতে হাত মিলিয়ে লড়াই করে ‘শূন্য’ হয়ে যায় দু’পক্ষই। সে অভিজ্ঞতা তিক্তই ছিল। যার ফলে বালিগঞ্জের উপনির্বাচনে জোট হয়নি বাম-কংগ্রেসের। কিন্তু বিবিধ তিক্ত অভিজ্ঞতার পরে ‘সাগরদিঘি মডেল’ দু’পক্ষকেই ‘সোনালি রেখা’ দেখাতে শুরু করেছে। বাম-কংগ্রেস জোটের অন্যতম এবং আদি স্থপতি যেমন শনিবার বললেন, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি, তাতে বামফ্রন্ট বা কংগ্রেস একা লড়াই করে তৃণমূল বা বিজেপির মোকাবিলা করতে পারবে না। তাই পরস্পরের হাত ধরতেই হবে। তবেই মানুষ আমাদের ওপর ভরসা করবেন।’’
কৌস্তুভের আকস্মিক গ্রেফতারি সেই জোটের গাছে আরও জলসিঞ্চন করল বলেই অভিমত দুই শিবিরের জোটপন্থীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy