কার্তিক মহারাজ। —নিজস্ব চিত্র।
গত বছর লোকসভা ভোটের সময় উত্তপ্ত হয়েছিল মুর্শিদাবাদের শক্তিপুর এলাকা। পরে প্রচারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই গোলমালের জন্য আঙুল তুলেছিলেন বহরমপুরের ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসী স্বামী প্রদীপ্তানন্দ বা কার্তিক মহারাজের দিকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আবার পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে গিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুসলিমদের চাপে সাধুসন্তদের অপমান করার অভিযোগ তুলেছিলেন। অন্য দিকে, কার্তিক মহারাজ মানহানির আইনি চিঠি পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। সেই কার্তিক মহারাজকে আজ পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় সরকার। একই সঙ্গে রামমন্দির আন্দোলনে যুক্ত সাধ্বী ঋতম্ভরাকে পদ্মভূষণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় সিবিআইয়ের মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন। পরে সবাই আদালতে ছাড় পেয়ে যান। তাঁকে সমাজসেবার জন্য পদ্ম সম্মান দেওয়া হল।
প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে আজ পদ্ম পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। ভারতরত্নের জন্য কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রয়াণের পরে মোদী সরকার তাঁকে মরণোত্তর ভারতরত্নে সম্মানিত করতে পারে বলে জল্পনা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পদ্মবিভূষণ পাচ্ছেন মোট সাত জন। পদ্মভূষণ পাচ্ছেন ১৯ জন। পদ্মশ্রী দেওয়া হচ্ছে মোট ১১৩ জনকে। তাঁদের মধ্যে কার্তিক মহারাজ-সহ ৯ জন পশ্চিমবঙ্গের।
রাজ্যের পদ্মশ্রী প্রাপকদের তালিকায় রয়েছেন গায়ক অরিজিৎ সিংহ, নৃত্যশিল্পী মমতাশঙ্কর, সরোদ বাদক তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, মহীন্দ্রা অ্যান্ড মহীন্দ্রার প্রাক্তন ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিল্পপতি পবন গোয়েন্কা, সেঞ্চুরি প্লাইবোর্ডসের চেয়ারম্যান শিল্পপতি সজ্জন ভজনকা, শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব ও স্বামী বিবেকানন্দের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত সমাজকর্মী বিনায়ক লোহানি, রাজবংশী ভাষায় রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবদ্গীতার অনুবাদক এবং সাহিত্যিক নগেন্দ্রনাথ রায় এবং উত্তর ২৪ পরগনার ঢাকি গোকুলচন্দ্র দাস। যিনি প্রথা ভেঙে মহিলাদের দুর্গাপুজোয় ঢাক বাজানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে মহিলা ঢাকির দল তৈরি করেছেন। এ ছাড়া বাঙালিদের মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য পদ্মশ্রী পাচ্ছেন। প্রয়াত অর্থনীতিবিদ, প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিবেক দেবরায়কে মরণোত্তর পদ্মভূষণে সম্মানিত করা হচ্ছে। ত্রিপুরার শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অরুণোদয় সাহা পদ্মশ্রী পাচ্ছেন। রাজবংশীদের দিকে বাড়তি নজর দেওয়ার ব্যাপারে বরাবরই সচেষ্ট বিজেপি। নগেন্দ্রনাথের পুরস্কারও রাজবংশী ভাষা-সাহিত্যকে স্বীকৃতিদান বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘এটা উত্তরবঙ্গের মানুষের সম্মান। রাজবংশী, কামতাপুরি ভাষা সংস্কৃতিকে যে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এটা তার একটি দিক।’’
কার্তিক মহারাজকে পদ্মশ্রীর তালিকায় দেখে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল শিবির বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলের গন্ধ পাচ্ছে। কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে সরাসরি নাম করে বিজেপির হয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা। কার্তিক মহারাজ ‘মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কোনও সারবত্তা নেই’ বলে অভিযোগ উড়িয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মুসলিম কট্টরপন্থীদের চাপে ভোট পেতে সাধুদের এবং মহান সংগঠনগুলিকে গালিগালাজ করছেন। সাধুসন্ত সমাজকে অপমান করা হয়েছে অভিযোগ তুলে কার্তিক মহারাজ কলকাতায় বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের সাধু-সন্ন্যাসীদের নিয়ে খালি পায়ে মিছিল করেছিলেন। ভোটের পরে কার্তিক মহারাজের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার বন্দোবস্ত হয়।
পদ্ম পুরস্কার পাওয়ার খবরে কার্তিক মহারাজ বলেন, “আমি সন্ন্যাসী মানুষ। মানুষের সেবাই আমার বড় পুরস্কার। এই স্বীকৃতি দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল।’’
গত বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় সরকার মোট পাঁচ জনকে ভারতরত্ন দিয়েছিল। তাঁদের মধ্যে কৃষি অর্থনীতিবিদ এম এস স্বামীনাথন ছাড়াও লালকৃষ্ণ আডবাণী, দুই প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাও, চরণ সিংহ এবং বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কর্পূরী ঠাকুর ছিলেন। চরণ সিংহ ও কর্পূরী ঠাকুরকে ভারতরত্ন দিয়ে নীতীশ কুমারের জেডিইউ ও জয়ন্ত চৌধরির আরএলডি-কে এনডিএ জোটে টানার রাস্তা তৈরি করেছিল মোদী সরকার। এ বার ভারতরত্ন কাউকে দেওয়া না হলেও পদ্মভূষণের তালিকায় রয়েছেন শিবসেনার প্রয়াত নেতা মনোহর জোশী। মহারাষ্ট্রের রাজনীতির জন্য যা তাৎপর্যপূর্ণ। বিহারের প্রয়াত উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদীকেও মরণোত্তর পদ্মভূষণের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।
প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জগদীশ সিংহ খেহর, হায়দারাবাদের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডি এন রেড্ডি, গুজরাতের কত্থক শিল্পী কুমুদিনী লখিয়া, কর্নাটকের বেহালা শিল্পী এল সুব্রমণিয়ম, কেরলের প্রয়াত লেখক এম টি বাসুদেবন নায়ার, জাপানের সুজ়ুকি মোটরের প্রয়াত সিইও ওসামু সুজ়ুকি ও বিহারের প্রয়াত গায়িকা শারদা সিন্হাকে পদ্মবিভূষণের জন্য বাছাই করা হয়েছে। পদ্মভূষণ দেওয়া হবে শেখর কপূর, এন বালকৃষ্ণ, প্রয়াত পঙ্কজ উধাসকে। কুয়েতের যোগ প্রশিক্ষক শাইখা এ জে আল সাবাহ, ব্রাজ়িলের হিন্দু আধ্যাত্মিক গুরু জোনাস মাসেট্টিকে পদ্মশ্রীর জন্য বাছা হয়েছে। মুসলিম হয়েও গণপতি ও রাম ভজনের জন্য বিখ্যাত রাজস্থানের লোকশিল্পী ‘ভজনের বেগম’ বাতুল বেগমও পদ্মশ্রী পাচ্ছেন। শাহরুখ খানের থিয়েটারের গুরু ব্যারি জনও পদ্মশ্রী পাচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy