প্রাক্তন মন্ত্রী ও সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
খুব কাছ থেকে দেখতে হয়েছিল আয়লার তাণ্ডব। পরবর্তী দিনগুলোতে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ প্রান্তে ঘুরে দেখেছি ধ্বংসের নানা ছবি। আমি তখন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা সুন্দরবনের মানুষ। দলের শীর্ষ নেতাদের অনুমতি নিয়ে ২৪ তারিখ দুপুরেই কলকাতা ছেড়েছিলাম। রায়দিঘির ভাড়া বাড়িতে গিয়ে উঠেছিলাম। ২৫ তারিখ দুপুরে আছড়ে পড়ল আয়লা। রাত পর্যন্ত তুমুল ঝড়বৃষ্টি। ভোরে লঞ্চ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। দেখে মনে হল, গোটা সুন্দরবনের উপকূল এলাকা যেন কেউ কাস্তে দিয়ে কেটে মাটিতে শুইয়ে দিয়েছিল। হাজার হাজার গৃহহীন মানুষ রাস্তায়। খাদ্য নেই। পানীয় জল নেই। শুকনো জামাকাপড় নেই। জেলা প্রশাসনের অফিসারদের নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লাম। বুঝেছিলাম, ধুতি-পাঞ্জাবি পরে এ লড়াইটা চালানো যাবে না। লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নেমে পড়লাম। সরকারি ত্রাণের চাল, ডাল, আলু, ত্রিপল যতটা সম্ভব দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করলাম। কিন্তু পানীয় জল? সে আর এক বড় সমস্যা। কিন্তু হাল ছাড়িনি।
কলকাতা থেকে দমকলের বড় বড় গাড়িতে পানীয় জল ভরে সুন্দরবনের বড় মাঝারি ও ছোট সেতু উপরে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলাম। সেতুর নীচে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের হাজার লিটার ট্যাংক লঞ্চে রেখে জল ভরা শুরু করলাম। লঞ্চগুলি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জল সরবরাহ শুরু করল। ঝড়ের আগে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে না পেয়ে প্রচুর গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছিল সে সময়ে। ওই সব দেহ থেকে কলেরা, আন্ত্রিকের মতো সংক্রমণ ছড়ায়। সরকারি অফিসার ও গ্রামের মানুষদের নিয়ে গবাদি পশুর দেহ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাটি খুঁড়ে কবর দিয়েছিলাম। কবরের উপরে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম ব্লিচিং পাউডার। কোনও সংক্রমণ ঘটেনি। এরপরে শুরু করি বাঁধ তৈরি, রাস্তা মেরামতির কাজ। আয়লার পরে সুন্দরবনকে ফের গড়ে তোলার অভিজ্ঞতা নিয়ে রাজ্যের অফিসারদের সঙ্গে কাজ করতে চাওয়ার আবেদন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনও সম্মতি পাইনি। নিজের ক্ষমতায় অল্প কিছু সামগ্রী নিয়ে, সুন্দরবনের বহু মানুষকে পাশে নিয়ে ফের ঝাঁপিয়ে পড়ব বলে ঠিক করেছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy