ফাইল চিত্র।
একা বিচারপতিই শুধু ক্ষুব্ধ নন। নিম্ন আদালতে ভার্চুয়াল শুনানির জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর ঘাটতি নিয়ে মামলাকারী এবং আইনজীবীদের একাংশের প্রবল অসন্তোষ রয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টেও ভার্চুয়াল শুনানির পরিকাঠামো কোথাও বৈষম্য তৈরি করছে কি না, ক্ষুব্ধ বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের একটি নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সেই প্রশ্ন জোরালো হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ভার্চুয়াল শুনানির জন্য ১৫০টি পদের স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। সেই নিয়োগের দায়িত্ব ছিল হাই কোর্ট প্রশাসনের। কিন্তু সেই নিয়োগ এখনও করা হয়নি।
একটি মামলা বিচারপতির ভট্টাচার্যের অজ্ঞাতে অন্য এজলাসে সরানোর ক্ষেত্রে সোমবার তিনি লিখিত ভাবে যে-নির্দেশ দিয়েছেন, তাতেই এ-সব উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি লিখেছেন, হাই কোর্টে সশরীরে শুনানি বন্ধ করে দেওয়ায় প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা, আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোর দিক থেকে দুর্বল আইনজীবী ও মামলাকারীরা ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ভার্চুয়াল শুনানির ক্ষেত্রে উচ্চ শ্রেণির কয়েক জন আইনজীবী এবং সীমিত সংখ্যক মামলাকারীরই একাধিপত্য দেখা যাচ্ছে। এই বৈষম্য সংবিধান বর্ণিত সাম্যের পরিপন্থী বলেও উল্লেখ করেছেন বিচারপতি ভট্টাচার্য।
অনেক আইনজীবীই বিচারপতি ভট্টাচার্যের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত। তাঁরা বলছেন, এমন অনেক আইনজীবী রয়েছেন, যাঁদের ভার্চুয়াল শুনানিতে যোগ দেওয়ার পরিকাঠামো নেই। এমনকি আদালতে যে-পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে, সেখানেও আসার অবস্থা নেই তাঁদের। পারিশ্রমিক তুলনায় কম হওয়ায় আর্থিক ভাবে দুর্বল অনেক মানুষ ওই সব আইনজীবীর কাছে আইনি সাহায্য পান। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই আইনজীবীরাই ভার্চুয়াল শুনানিতে যোগ দিতে না-পারায় আর্থিক ভাবে অনগ্রসর মানুষজনও সে-ভাবে আইনি বিচার পাচ্ছেন না। হাই কোর্টে যে পরিকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে, সেটাও মেনে নিচ্ছেন বহু আইনজীবী। তাঁরা বলছেন, অনেক সময়েই হাই কোর্টের ইন্টারনেট ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটায় ভার্চুয়াল শুনানি অসমাপ্ত থেকে যাচ্ছে। তাতে বিচারেও দেরি হচ্ছে।
হাই কোর্টে ব্যবহার্য প্রযুক্তির দুর্দশা দেখে গত শুক্রবারেই একটি মামলার শুনানির সময় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি ভট্টাচার্য। উচ্চ আদালতে প্রযুক্তির দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিককে শো-কজ় করেন তিনি। ঘটনাচক্রে, তার পরেই বিচারপতি ভট্টাচার্যের অজ্ঞাতে ওই মামলাটি অন্য এজলাসে সরানো হয়েছিল।
বিচারপতি ভট্টাচার্য কারণ দর্শানোর যে-নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার জবাবে হাই কোর্ট প্রসাশন জানিয়েছে, ইন্টারনেটের স্পিড দুই এমবিপিএস থেকে ১০০ এমবিপিএস করার চেষ্টা চলছে। তা হলে এই সমস্যা মিটবে। এর উল্লেখ করে বিচারপতি লিখেছেন, এই স্পিড বাড়ানোর কথা হাই কোর্ট প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই বলছে এবং সেই বিষয়ে আগেও আলোচনা হয়েছে। এই বিষয়টি বাস্তবায়িত হলে মামলাকারীদের সমস্যা অনেকটাই মিটবে। কিন্তু সেই কাজ করার ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
অনেকেই বলছেন, এই ধরনের প্রশাসনিক গাফিলতির কথা সর্বসমক্ষে আনার উদাহরণ সাম্প্রতিক কালে নেই। কিন্তু বিচারপতি ভট্টাচার্যের লিখিত নির্দেশ থেকে স্পষ্ট, তিনি আদালতের এই ধরনের প্রশাসনিক ‘গাফিলতি’র বিষয়টি নিয়ে কোনও রকম লুকোছাপা করতে চাননি এবং তিনি মনে করেছেন, আদালতের সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষেরই বিষয়টি জানা উচিত। তিনি লিখেছেন, সব মোমবাতি শুধু নৈশভোজের টেবিল আলোকিত করার জন্য তৈরি হয় না। প্রতিবাদ মিছিলেও কিছু মোমবাতির প্রয়োজন হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy