Advertisement
৩১ অক্টোবর ২০২৪
R G Kar Protest

সিবিআই তদন্তে ঢিলেমি! ছাড়া পেয়ে যেতে পারেন সন্দীপরা, আশঙ্কা, সিজিও অভিযানে জুনিয়র ডাক্তাররা

সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানের জন্য বুধবার বিকেল থেকে সল্টলেকে জমায়েত শুরু হয়। সিবিআই দফতরের সামনে গিয়ে একটি পথসভা করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। দুপুরে পাল্টা কর্মসূচি ছিল শিয়ালদহেও।

Junior Doctors along with citizens’ associations held rally till CGO complex seeking justice for RG Kar incident

বুধবার আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ মিছিলে মশাল হাতে জুনিয়র ডাক্তার থেকে নাগরিক সমাজ। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ২১:৪৩
Share: Save:

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নির্যাতিতা তরুণীর জন্য বিচারের দাবিতে বুধবার সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান করেছেন জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। তাঁদের সঙ্গে হেঁটেছেন সাধারণ মানুষও। ওই কর্মসূচি থেকে জুনিয়র ডাক্তারেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, প্রমাণের অভাবে ধৃত অভিযুক্তেরা ছাড়া পেয়ে যেতে পারেন। সিবিআইকে ‘চাপে’ রাখতেই তাই এই কর্মসূচি।

জুনিয়র, সিনিয়র ডাক্তারদের পাশাপাশি বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনও এই কর্মসূচিতে ছিল। অন্তত ৮০টি সংগঠন সল্টলেকে বুধবার আরজি কর-কাণ্ডে বিচার চেয়ে স্লোগান তোলে। সিবিআই দফতরের সামনে পৌঁছে তারা একটি পথসভা করে। সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত মশাল মিছিল করা হয়েছে জুনিয়র ডক্টর্‌স’ ফ্রন্ট (জেডিএফ)-এর তরফেও। আরজি করের ঘটনার তদন্তপ্রক্রিয়া এখন সিবিআইয়ের হাতে। সে কারণেই এই সিজিও অভিযান। একই সঙ্গে শিয়ালদহেও পাল্টা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। জুনিয়র ডাক্তারদের নতুন সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টর্‌স’ অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউবিজেডিএ, সংক্ষেপে জেডিএ) এনআরএস হাসপাতালের সামনে থেকে শিয়ালদহ আদালত পর্যন্ত জমায়েত করে। সেখানেও নির্যাতিতার জন্য বিচার ত্বরাণ্বিত করার দাবি উঠেছে।

সল্টলেকে সিজিও অভিযান

সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানের জন্য বুধবার বিকেল থেকে সল্টলেকে জমায়েত শুরু হয়। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্‌স’ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিবাদী সংগঠনগুলি এক ছাতার তলায় এসেছে ‘অভয়া মঞ্চ’ নামে। তারাই সিজিও পর্যন্ত হাঁটে। রাত ৮টার পরে সিজিওর কাছে পৌঁছয় জমায়েত। সেখানে পথসভার আয়োজন করা হয়েছিল। জুনিয়র, সিনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা সেই পথসভায় নিজেদের বক্তব্য জানান। জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে আবার হাসপাতালগুলিতে ‘থ্রেট কালচারের’ বিষয়টি তুলে ধরা হয় পথসভায়। আরজি করে ধর্ষণ-খুনকাণ্ডে হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। কিন্তু প্রমাণের অভাবে তিনি ছাড়া পেয়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। আন্দোলকারী জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তে প্রথম থেকে সিবিআই ঢিলেমি দিচ্ছে। এই সমস্ত কারণে সন্দীপ ঘোষ ছাড়া পেয়ে যেতে পারেন। তেমন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। গত ২১ তারিখে আদালতে এই সংক্রান্ত যে শুনানি ছিল, সেখানে সন্দীপকে হাজির করানোই হয়নি। এত গা-ছাড়া মনোভাব দেখাচ্ছে কেন সিবিআই? নির্যাতিতার বাবা-মাও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’’

মূলত, জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস্‌’ এবং বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের ডাকে সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সের আয়োজন করা হয়েছিল বুধবার। পৃথক ভাবে মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত মশাল মিছিলের ডাক দিয়েছিল জেডিএফ। নির্যাতিতার জন্য বিচারের দাবিতে এই দু’টি কর্মসূচি মিলেমিশে গিয়েছে। সল্টলেকের রাস্তায় উঠেছে ‘বিচার চাই’ স্লোগান। মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে জুনিয়র ডাক্তারদের এক প্রতিনিধি বলেন, ‘‘আরজি কর-কাণ্ডে বিচার নিয়ে আমরা হতাশ। এখনও তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি। কোনও অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। এখনও আমাদের তাই মিছিলে হাঁটতে হচ্ছে। ৮০ দিন পেরিয়ে গিয়েছে।’’ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া এক সাধারণ নাগরিক বলেন, ‘‘ধর্ষণ-খুনকাণ্ডে যাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই সিভিক ভলান্টিয়ার একা এই কাজ করতে পারেন না। এর নেপথ্যে আরও বড় মাথারা রয়েছেন। যত দিন না তাঁদের ধরা হচ্ছে, আমরা রাস্তায় থাকব।’’

শিয়ালদহে পাল্টা জমায়েত

আরজি কর-কাণ্ডে প্রথম থেকে আন্দোলনে ছিল জেডিএফ। দেবাশিস, অনিকেত মাহাতো, কিঞ্জল নন্দেরা সেই সংগঠনের অন্যতম মুখ হিসাবে উঠে আসেন। বিচার-সহ ১০ দফা দাবিতে ধর্মতলায় এই সংগঠনের সদস্যেরা টানা ১৭ দিন অনশনও করেন। তাঁদের ১০ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল, রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে ‘থ্রেট কালচার’ বা ‘হুমকি সংস্কৃতি’র মোকাবিলা করা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জেডিএফ-এর বৈঠকের কিছু দিনের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করে জুনিয়র ডাক্তারদের নতুন সংগঠন জেডিএ। মূলত যাঁদের বিরুদ্ধে জেডিএফ ‘থ্রেট কালচারের’ অভিযোগ করেছে, তাঁদের নিয়েই এই পাল্টা সংগঠন গড়ে ওঠে। জেডিএফের বিরুদ্ধে তারা পাল্টা হুমকি এবং নানা অনিয়মের অভিযোগ এনেছে। ১০ দফা দাবি উড়িয়ে তারা পাল্টা আট দফা দাবিতে ইমেল করেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকেও। এই সংগঠনের অন্যতম আহ্বায়ক শ্রীশ চক্রবর্তী। বুধবার দুপুরে তাঁদের ডাকে শিয়ালদহে প্রতিবাদ কর্মসূচি ছিল। শ্রীশ বলেন, ‘‘আরজি করের ঘটনার পর ৮০ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও সিবিআই তদন্ত শেষ করতে পারেনি। আমরা চাই, দোষীরা কঠোরতম শাস্তি পাক। আমরা সব সময় রোগীদের অগ্রাধিকার দিই। রোগী পরিষেবা স্বাভাবিক রেখে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।’’ শিয়ালদহ কোর্ট পর্যন্ত কর্মসূচি কেন? শ্রীশ বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের মামলার শুনানি হচ্ছে এই শিয়ালদহ আদালতেই। সিবিআইয়ের জন্য বিচারপ্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে। কোনও কোনও দিন তো সিবিআইয়ের আইনজীবী ঠিক সময়ে আদালতে পৌঁছতে পারছেন না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE