রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।—ফাইল চিত্র।
কিছু দিন আগেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ঘিরে ধুন্ধুমার বেধে গিয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। অশান্তি এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ এ বার সেখানকার সমাবর্তন অনুষ্ঠান কাটছাঁট করতে চলেছেন। সমাবর্তনের ‘বিশেষ পর্ব’ (‘স্পেশাল কনভোকেশন’) আপাতত না-করার কথাই ভাবছেন তাঁরা। সিদ্ধান্ত নিতে আজ, শনিবার কর্মসমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সমাবর্তন ২৪ ডিসেম্বর।
সমাবর্তনের বিশেষ পর্বেই আচার্য-রাজ্যপাল উপস্থিত থাকেন। শিক্ষা শিবিরে প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের উপস্থিতি এড়াতেই কি এ বার বিশেষ পর্ব ছেঁটে ফেলা হচ্ছে? বিক্ষোভের মুখে পড়া বাবুলকে উদ্ধার করতে ছুটে গিয়েছিলেন ধনখড়। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে তাঁর পরের পর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে যাদবপুরের পড়ুয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, রাজ্যপাল সমাবর্তনে এলে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাবেন। তাঁর হাত থেকে ডিগ্রিও নেওয়া হবে না। তার পরেই কর্তৃপক্ষ শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের ডেকে পাঠান। তাঁদের জানানো হয়, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে সমাবর্তনে অশান্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং অশান্তি এড়াতেই সমাবর্তনে বিশেষ পর্বটি স্থগিত রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।
সমাবর্তনের বিশেষ পর্বে রাজ্যপাল সাম্মানিক ডিলিট এবং ডিএসসি দিয়ে থাকেন প্রাপকদের। এ বছর কবি শঙ্খ ঘোষ ও প্রাক্তন বিদেশসচিব সলমন হায়দারকে সাম্মানিক ডিলিট এবং বিজ্ঞানী সিএনআর রাও ও ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউটের অধিকর্ত্রী শঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাম্মানিক ডিএসসি দেওয়ার কথা। এঁদেরই ওই সম্মান জ্ঞাপনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মাসখানেক আগে কোর্টের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। এবং সেই বৈঠকেও চূড়ান্ত বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল।
আরও পড়ুন: মতুয়া এলাকায় তিন সভা করবেন মমতা
২০১৪ সালে যাদবপুরে ‘হোক কলরব’ আন্দোলনের সময় তৎকালীন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী সমাবর্তনে যোগ দিয়ে বিক্ষোভের মধ্যে পড়েন। তাঁর হাত থেকে ডিগ্রি নিতে অস্বীকার করেন গীতশ্রী সরকার নামে এক ছাত্রী। শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাইছেন না। নতুন উচ্চশিক্ষা বিধি অনুযায়ী সমাবর্তনের বিশেষ পর্ব স্থগিত রাখার কথা আচার্যকে জানানোর বাধ্যবাধকতা নেই। সরাসরি জানাতে হবে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরকে।
যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিদায়ী ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক অভীক দাস বলেন, ‘‘দেশে ছাত্রছাত্রীদের উপরে যখন আক্রমণ হচ্ছে, সেই সময় রাজ্যপাল-আচার্য ধনখড়ের তো পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানোর কথা। কিন্তু তিনি সেই ভূমিকা পালন না-করে বিজেপি-কর্মীর মতো কথা বলছেন। তাই আমরা ওঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাগত জানাতে পারছি না।’’ অভীকের মতে, কর্তৃপক্ষ যদি এই ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেন এবং সেটা যদি তাঁদের বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তা হলে ঠিক আছে। কিন্তু পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে, কর্তৃপক্ষ কিছু বললেন না এবং রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেন, সে-ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা নীরব থাকবেন, এমন মনে করার কোনও কারণ নেই।
আরও পড়ুন: হাল সামলান, এই আইন বাতিল করুন, মোদীকে বললেন মমতা
আর্টস ফ্যাকাল্টির বিদায়ী ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথ বলেন, ‘‘স্পেশাল কনভোকেশন স্থগিত রাখা হবে কি না, সেটা বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। আমাদের স্পষ্ট কথা, গণতন্ত্রের খাতিরে রাজ্যপাল আমাদের ক্যাম্পাসে আসতেই পারেন। কিন্তু এলে গণতন্ত্রের জোরেই বার বার কড়া বিরোধিতার মুখে পড়বেন। তা সে ২৪ ডিসেম্বর হোক বা অন্য কোনও দিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy