Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Sabyasachi Dutta

Sabyasachi Dutta: বিজেপি-তে থাকলেও ‘আত্মিক যোগ’ ছিল না, সব্যসাচীর গেরুয়া সফর শেষ হতেই নিশানা পদ্মের

বিজেপি-র দাবি, দল ক্ষমতায় আসতে পারে অনুমান করেই এসেছিলেন সব্যসাচী। ভোটে হারার পরেই তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা শুরু করে দেন।

সব্যসাচীর গেরুয়া সফর শেষ হতেই নিশানা পদ্মের

সব্যসাচীর গেরুয়া সফর শেষ হতেই নিশানা পদ্মের

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২১ ২১:২৪
Share: Save:

সব্যসাচী শব্দের অর্থ যার দু’হাতই সমান চলে। যদিও বঙ্গ রাজনীতির সব্যসাচীর ক্ষেত্রে সেটা সত্যি নয়। তিনি যদিও দাবি করেন, ‘‘এমনিই অর্জুনের নামে নাম রেখেছিলেন বাবা-মা।’’ তবে দু’হাত এক সঙ্গে না চললেও তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যোগদানের আগে নাকি তাঁর দু’পা দু’নৌকাতেই ছিল বলে অভিযোগ তুলেছিল শাসকদল। আর বৃহস্পতিবার তিনি যাবতীয় জল্পনাকে সত্যি করে তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার পরে বিজেপি-র দাবি, গেরুয়া শিবিরে থাকার সময়েও সব্যসাচীর দু’পা দু’নৌকাতেই ছিল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নিয়ে সব্যসাচী বলেন, ‘‘কিছু ভুল বোঝাবুঝির জন্য দল ছেড়েছিলাম। আবার আমায় গ্রহণ করায় আমি কৃতজ্ঞ।’’ আর সব্যসাচীর প্রস্থান নিয়ে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে দলের কোনও আত্মিক সংযোগ ছিল না। এই সব নেতা ছাড়াই বিজেপি লড়াই করে ১৮ টা আসন জিতেছিল। যাঁরা চলে যাচ্ছেন তাঁদের অনুপস্থিতিতে দলে কোনও প্রভাব পড়বে না।”

শুধু সুকান্তই নন, বিজেপি-র অন্য নেতারাও একই কথা বলছেন। তাঁদের দাবি, বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারে অনুমান করে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন সব্যসাচী। বিধাননগরে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দেন। শুধু তাই নয়, বিজেপি নেতাদের একাংশের দাবি, তৃণমূল ছাড়ার পরেও পুরনো দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই চলেন। ক’দিন আগেই খড়দহ আসনে উপনির্বাচনের জন্য বিজেপি-র কমিটিতে ‘ইনচার্জ’ করা হয় সব্যসাচীকে। কিন্তু তার পর পরই এই ফুলবদল নিয়ে রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, ‘‘মনে মনে উনি তৃণমূলেই ছিলেন। নেতৃত্ব বুঝতে পারেননি, তাই গুরুত্ব দিয়েছেন। উনি দলবদল না করলে বিজেপি-র ক্ষতিই হত।’’

এমন সুর ছিল এ দিন সুকান্তর গলাতেও। তিনি বলেন, “সব্যসাচী কোনও দিন আমাদের দলে থেকে ভোটে জেতেননি। ওঁর মতো কিছু লোক যাঁরা এখন দল ছেড়ে যাচ্ছেন, তাঁরা থাকতে আমরা ভাল ফল করতে পারিনি। দল ওঁকে সম্মান দিয়েছিল। তিনি সেই সম্মান যে রাখতে পারলেন না সেটা তো সব্যসাচীর ব্যাপার।’’

সব্যসাচীকে দলে নেওয়ার বিষয়ে অবশ্য বিজেপি নেতৃত্বের খুবই আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। সেই দিনটা ছিল ২০১৯ সালের ৯ মার্চ। লোকসভা ভোটের আগে দলবদল নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিস্তর জল্পনা চলছে। তারই মধ্যে বিধাননগরে সব্যসাচীর বাড়িতে আচমকা দেখা যায় তৎকালীন বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে। ওই বাড়িতে বেশ কিছু ক্ষণ ছিলেন মুকুল। বেরিয়ে এসে বলেছিলেন, ‘‘সব্যসাচীর সঙ্গে দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক। লুচি-আলুর দম খেয়ে গেলাম। খিদে পেলে মাঝেমাঝেই আসি। ওর স্ত্রী খুব ভাল রান্না করে।’’ কী আলোচনা হল প্রশ্নের জবাবে মুকুল বলেছিলেন, ‘‘ক্রিকেটের অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ— আলোচনা তো কত কিছু নিয়েই হতে পারে!’’ সব্যসাচীও সেই সময় দাবি করেন, ওই ‘দেখা হওয়া’র মধ্যে অন্য কোনও ‘গন্ধ’ নেই। বলেছিলেন, ‘‘অনেক দিনের সম্পর্ক। সল্টলেকে এসেছিল মুকুলদা। এক বার ঘুরে গেল। বসে বসে অনেক ক্ষণ পুরনো গল্প হল। এর বেশি কিচ্ছু নয়।’’ সেই সাক্ষাৎ বিফলে যায়নি বিজেপি নেতা মুকুলের। তবে সময় লেগেছিল। সে বার মহালয়া ছিল ২৮ সেপ্টেম্বর। তার দু’দিন পরে ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর বিজেপি-তে যোগ দেন সব্যসাচী। ফিরে গেলেন ঠিক তেমনই এক দেবীপক্ষে। মহালয়ার পরের দিনই।

ঘাস-পদ্ম-ঘাস— দু’বছরের গেরুয়া-সফরেও অনেক বিতর্কে জড়িয়েছেন সব্যসাচী। তবে বিধানসভা ভোটের আগে গেরুয়া শিবিরে বেশ অনুগতই ছিলেন তিনি। এক বছর আগে ২০২০ সালে বিধাননগরে ধুমধাম করে দুর্গাপুজো হয়েছিল পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে (ইজেডসিসি)। আয়োজক হিসেবে বিজেপি-র সাংস্কৃতিক শাখার নাম থাকলেও আসল উদ্যোক্তা ছিলেন সব্যসাচীই। এ বারের পুজোতেও তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু বোধনের অনেক আগে শুক্লা প্রতিপদেই ফুলবদল করলেন সব্যসাচী।

বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর থেকেই রাজারহাট-নিউটাউনের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক ‘বেশি সুবিধাজনক’ ভেবে বিধাননগরে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। মেনে নেয় নতুন দল। তাঁর হয়ে অমিত শাহ প্রচারেও আসেন। কিন্তু প্রায় ৮,০০০ ভোটে তৃণমূলের সুজিত বসুর কাছে হারেন তিনি। তার পর থেকেই তিনি কার্যত ‘ঘরবন্দি’ হয়ে ছিলেন। প্রথম দিকে এক দু’বার দলের ডাকে বৈঠকে এলেও তা-ও বন্ধ হয়ে যায়। বিজেপি শিবিরের অভিযোগ ওঠে, আক্রান্ত কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হলেও তাতে নাকি তাঁকে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি, বাড়ি থেকে দলের ভার্চুয়াল বৈঠকেও যোগ দিচ্ছেন না। দেখেশুনে গেরুয়া শিবিরের একাংশ এমন প্রশ্নও তোলে যে, সব্যসাচী কি এখনও বিজেপি-তে আছেন?

জুন মাসে ভোটে বিপর্যস্ত সংগঠন মেরামতির বৈঠক ডেকেছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেখানে সরব হন সব্যসাচী। তবে ‘সময় কম’ বলে আটকে দেন দিলীপ। শেষে মনের কথা উজাড় করে বলে দেন সংবাদমাধ্যমকে। সব্যসাচী সে দিন বলেছিলেন, ‘‘ভিন্ রাজ্যের নেতারা যে ভাষায় কথা বলেছেন তা বাংলার মানুষ বুঝতেই পারেননি।’’ সংবাদমাধ্যমকে এই ধরনের মন্তব্য করাটা দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ বলেই মনে করে রাজ্য বিজেপি। এ নিয়ে দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটিতে অভিযোগও জমা পড়ে। তবে তার পরেও নিজের বক্তব্যে অটল থেকে সব্যসাচী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমি যা বলেছি ঠিকই বলেছি। এখনও বলছি, গ্রামবাংলার মানুষ ভিন্ রাজ্যের নেতাদের কথা বুঝতে পারেননি।’’

আর বিজেপি-তে থাকার একেবারে শেষ বেলায় বুধবারও দলীয় নীতির বিরোধিতা শোনা যায় সব্যসাচীর গলায়। লখিমপুর খেরির ঘটনা নিয়ে যোগী আদিত্যনাথের সরকারের পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়ে দিলীপ বলেছিলেন, ‘‘১৪৪ ধারা জারি করে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপই করেছে।’’ এরই জবাবে সব্যসাচী বলেন, ‘‘কোনও আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়া পদ্ধতি হতে পারে না। এটা গণতান্ত্রিক দেশ, এ তো তালিবান শাসন নয়।’’ বুধবার সব্যসাচী ওই মন্তব্য করার পর থেকেই জল্পনা তৈরি হয় যে, সব্যসাচীর তৃণমূলে ফেরাটা পাকা হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সত্যিই সব্যসাচী তৃণমূলে ফেরার পরে বিজেপি নেতাদের দাবি, অনেক আগেই ফেরার রাস্তা পরিষ্কার করে রেখেছিলেন। কবে তৃণমূল দরজা খুলবে সেই অপেক্ষা ছিল গত কয়েক মাস।

অন্য বিষয়গুলি:

Sabyasachi Dutta BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy