জন বার্লা। গ্রাফিক — শৌভিক দেবনাথ।
দায়িত্ব পেয়েও একজন আগের মতোই আক্রমণাত্মক। পশ্চিমবঙ্গ বিভাজন থেকে ভোট পরবর্তী হিংসা, প্রায় সব বিষয়েই সুর চড়াতে পিছপা হলেন না তিনি। তুলনায় অন্য জন আজ কৌশলী, রক্ষণাত্মক। চিরাচরিত ভঙ্গিতে আক্রমণে না গিয়ে বরং প্রথম দিনটি শুরু করলেন সাবধানী ও সতর্ক ভঙ্গিতে। আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লা যখন মন্ত্রকে বসেও আগের মতো গলা তুলতে কুণ্ঠিত নন, তখন কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক সুকৌশলে এড়িয়ে গেলেন যাবতীয় বিতর্কিত প্রশ্ন। বললেন, ‘‘সদ্য তো দায়িত্ব নিলাম। আগে সব বুঝে নিতে দিন।’’
গত মাসে উত্তরবঙ্গের জন্য একটি আলাদা রাজ্যের দাবি জানিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন জন বার্লা। তাঁর রাজ্য বিভাজনের প্রস্তাব এক কথায় নাকচ করে দেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। দিলীপ ঘোষেরা জানিয়ে দেন, এ প্রস্তাব একান্তই বার্লার নিজস্ব। দলের এতে কোনও সায় নেই। তার পরেও যে নিজের দাবি থেকে তিনি সরে আসেননি, তা আজ স্পষ্ট করে দেন বার্লা। বলেন, স্থানীয় মানুষের দাবি মেনে উত্তরবঙ্গ বিভাজনের প্রয়োজন রয়েছে।
বার্লার কথায়, ‘‘উত্তরবঙ্গকে স্বাধীন রাজ্য করার দাবি প্রায় একশো বছরের পুরনো। এটা স্থানীয় জনগণের দীর্ঘ সময়ের দাবি। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলব। জনতার দাবিকে দাবিয়ে রাখা যায় না। তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ায় এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না।’’ বার্লার সতীর্থ নিশীথ কিন্তু প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে গেলেন রাজ্য ভাগাভাগির প্রসঙ্গ। তাঁর উত্তর, ‘‘আজ তো সদ্য দায়িত্ব নিলাম। আগে গোটাটা বুঝতে দিন।’’
বার্লার দাবি প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় পাল্টা বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ ভাগ করার দাবি কখনও ওঠেনি। গোটাটাই বার্লার মস্তিষ্কপ্রসূত। বরং উত্তরপ্রদেশকে চার ভাগ করা, মহারাষ্ট্র ভেঙে বিদর্ভকে আলাদা রাজ্য করা বা গুজরাত ভেঙে সৌরাষ্ট্র তৈরির দাবি দীর্ঘদিন রয়েছে। বার্লা বরং সেগুলো নিয়ে মোদী-শাহের সঙ্গে কথা বলুন!’’
বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চলতি সংঘাতের আবহে নিশীথের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদে বসা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজনীতির অনেকেরই মত, তৃণমূল সরকারকে নিত্যদিন অস্বস্তিতে ফেলতেই অমিত শাহের প্রতিমন্ত্রী পদে বসানো হয়েছে নিশীথকে। আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে নিজের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পরে নিশীথ বলেন, নরেন্দ্র মোদীর যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে, তাতে যোগ দিতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যশালী বলে মনে করছি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মতো অভিভাবকের নেতৃত্বে কাজ করার সুযোগ পেতে চলেছি।’’
কিন্তু নিশীথ আজ নীরব ছিলেন বিতর্কিত সব বিষয় নিয়েই। যেমন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)। দু’বছরেও ওই আইনের নিয়মকানুন তৈরি করে উঠতে পারেনি কেন্দ্র। এ নিয়ে মতুয়া সমাজের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সিএএ কবে কার্যকর করা হতে পারে এই প্রশ্ন করা হলে আজ সযত্নে তা-ও এড়িয়ে
যান নিশীথ।
আবার, নির্বাচনের পর থেকেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরব রয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিশেষ করে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে কেন্দ্রের কাছে একাধিক বার দরবার করেছেন বিজেপি নেতারা। এ নিয়ে সে সময়ে সরব হতে দেখা গিয়েছিল নিশীথকেও। এখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হয়ে বাংলার সন্ত্রাস প্রশ্নে তাঁর ভূমিকা কী হবে, জানতে চাওয়া হলে আজ তিনি বলেন, ‘‘এই সদ্য মন্ত্রীর আসনে বসেছি। কিছুটা সময় দিন এ নিয়ে ভাবার। প্রত্যেকটি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, গোটা দেশের জন্য ভাবব। তবে আমি যেহেতু পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছি তাই রাজ্যের জন্য বাড়তি টান তো থাকবে। একে একে সব বলব। কিছুটা সময় দিন।’’
নিশীথ যখন কৌশলী, আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে বার্লা কিন্তু বলেন, ‘‘বাংলার ভোটের পর থেকেই ভয়ের একটি বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সেখানে শান্তি ফেরাতে চাই।’’
গত কাল বার্লার নাম না করে আলিপুরদুয়ারের সাংসদ ও তাঁর দল বিজেপিকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ মমতার সেই মন্তব্য প্রসঙ্গেও বার্লা বলেন, ‘‘তৃণমূল কী ভাবল, তা নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই। পশ্চিমবঙ্গে শান্তি স্থাপন করা দলের লক্ষ্য। সংখ্যালঘু উন্নয়নে কেন্দ্র ও রাজ্যকে একযোগে কাজ করতে হবে। কেন্দ্রের একাধিক প্রকল্প পশ্চিমঙ্গে রূপায়িত হয় না।’’ ওই প্রকল্পগুলি সুষ্ঠু ভাবে রূপায়িত করার লক্ষ্যে তিনি প্রয়োজনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলেও দাবি করেছেন বার্লা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy