ক্যাফে-মালকিন স্বরলিপি চট্টোপাধ্যায়।
তিনি চান সুস্থভাবে জীবন কাটাতে। তিনি চান সুস্থভাবে নিজের ব্যবসা সামলাতে। চাঁদা নিতে এসে যোধপুর পার্কের এক ক্যাফের মালিককে হেনস্থার অভিযোগে ধৃত পাঁচ ব্যক্তির জামিন পাওয়ার পর শুক্রবার এটাই প্রতিক্রিয়া ওই ক্যাফে মালকিন স্বরলিপি চট্টোপাধ্যায়ের।
আনন্দবাজার অনলাইনে স্বরলিপি শুক্রবার বলেন, ‘‘আমি চাই সুস্থভাবে জীবন কাটাতে। চাই সুস্থভাবে নিজের ব্যবসা সামলাতে। কিন্তু ওই ঘটনার পর আমাকে পুলিশের তরফে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। চাওয়া হয়নি সিসিটিভি ফুটেজও। নিশ্চয়ই পুলিশ সে সব অন্য সূত্র থেকে সংগ্রহ করেছেন। তদন্ত নিজের পথে চলুক। আমি যে সমস্যার মধ্যে পড়েছি, তা যেন অন্য কারও না হয়।’’
প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে চাঁদা নিয়ে জোরজুলুমের পরই লেক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ক্যাফে-মালিক স্বরলিপি চট্টোপাধ্যায়। যার জেরে আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয় ‘যোধপুর পার্ক উৎসব’। স্বরলিপির করা অভিযোগের ভিত্তিতে মূল অভিযুক্ত-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার তাঁদের কোর্টে তোলা হলে পাঁচ জনেরই জামিন মঞ্জুর হয়। স্বরলিপি বলছেন, ‘‘আমি, আমার মেয়ে এবং বন্ধু যেন নিরাপদ জীবন কাটাতে পারি। কিন্তু এখনও পুলিশের তরফে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি।’’
২৮২, যোধপুর পার্কে স্বরলিপির একটি ক্যাফে রয়েছে। পুলিশের কাছে অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, গত বুধবার রাত পৌনে ৯টা নাগাদ স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাঁর ক্যাফেতে আসেন। যোধপুর পার্ক উৎসবের জন্য তাঁরা মোটা চাঁদা দাবি করেন। কত অঙ্ক, তা জানানো হয়নি। কিন্তু চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় স্বরলিপিকে কটূক্তি করেন চাঁদা চাইতে আসা উৎসবের উদ্যোক্তারা। সে দিন স্বরলিপি বলেছিলেন, ‘‘পৌনে ৯টার পর সাড়ে ৯টা নাগাদ আবার ১৪-১৫ জন মিলে ক্যাফেতে এসে ঝামেলা শুরু করেন। হুমকিও দেন। আমি মোবাইল বার করে ঘটনার ভিডিয়ো করতে গেলে আমার ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।’’
ওই ঘটনার পর লেক থানায় বিজয় দত্ত-সহ বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন স্বরলিপি। তিনি জানান, অভিযোগ দায়ের করে থানা থেকে ফেরার পথে দু’জন তাঁর পিছু নেন। স্বরলিপি বলেছিলেন, ‘‘আমি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। একে তোলাবাজি ছাড়া আর কী বলব! ওঁরা যা চেক চেয়েছিলেন, তা দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। তার পরেও জোরজুলুম। থানা থেকে ফেরার পথেও পিছু নিয়েছিলেন দু’জন। পুসিশের সাহায্যে বাড়ি ফিরেছিলাম।’’ স্বরলিপি বলেন, ‘‘সে দিন আমাকে পুলিশ নিরাপত্তা দিলেও, তার পর থেকে আর যোগাযোগ করেনি।’’
স্বরলিপি একা মা এবং একাই ওই ক্যাফে চালান। পাঁচ বছরের একটি সন্তান রয়েছে তাঁর।
গত বুধবার ঘটনার সময় ওই ক্যাফেতেই উপস্থিত ছিলেন সুমিতা সামন্ত। এই ঘটনাটি নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন তিনি। সেখানে সুমিতা জানান, যাঁরা চাঁদা চাইতে এসেছিলেন, তাঁরা কলকাতা পুরসভার স্থানীয় ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের অনুগামী। ফেসবুকে স্বরলিপিও লেখেন, ‘আমি প্রথম বার আমার কলকাতাকে উত্তরপ্রদেশের মতো অনুভব করলাম। সত্যি কি আমরা মহিলারা এ শহরে নিরাপদ? বিনা অনুমতিতে গায়ে হাত দিয়ে ফোন কেড়ে নিচ্ছে!’
ফেসবুক পোস্টে স্থানীয় কাউন্সিলরের নাম উঠে আসায় প্রশ্নের মুখে পড়েন মৌসুমি দাস। তিনি সদ্য নির্বাচিত হয়েছেন ওই ওয়ার্ড থেকে। মৌসুমি বলেন, ‘‘ওটা স্থানীয় ৯৫ পল্লি ক্লাবের নিজস্ব উৎসব। আমি ওঁদের সঙ্গে যুক্ত নই। উৎসব কমিটির লোকেরা টাকা তুলতে গিয়েছিলেন বলে শুনেছি। আমি উৎসব কমিটিতেও নেই। এই ঘটনা নিন্দনীয়। আমি কোনও ভাবেই সমর্থন করি না। স্থানীয় বিধায়ক দেবাশিষ কুমারের নির্দেশে এই উৎসব আপাতত হচ্ছে না।’’
বুধবার রাতেই মহিলা কমিশনে গোটা বিষয়টি জানান স্বরলিপি। তাঁকে থানায় অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দেন কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘‘এই ঘটনার নিন্দা করছি। কলকাতা মহিলাদের জন্য নিরাপদ শহর। এখানে এই সব অভিযোগ কোনও দিনই সহ্য করা হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy