Advertisement
E-Paper

জয়নগরকাণ্ডে নিচুতলার ‘কমরেড’দের বার্তা শুভেন্দুর, কোন কৌশলে বামকর্মীদের আপন করে নেতাদের তোপ?

রাজনৈতিক মহলের অনেকের বক্তব্য উত্তরবঙ্গের আদিবাসী, রাজবংশী অধ্যুষিত এলাকা ছাড়া রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিজেপি এখনও ভোট-ভিত্তি তৈরি করতে পারেনি। ভরসা রেখেছে ‘পরিযায়ী’ ভোটের উপরে।

Suvendu Adhikari

শুভেন্দু অধিকারী। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:২১
Share
Save

গত কয়েক মাস ধরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিভিন্ন মন্তব্যে একটি বিষয় স্পষ্ট— বামের ভোট তিনি রামে ফেরাতে চান। জয়নগরে তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর খুনের পর শুভেন্দু ফের একবার নিচুতলার সিপিএম কর্মীদের ‘আপন’ করে নিতে চেয়েছেন। পাশাপাশিই নিশানা করেছেন বঙ্গ সিপিএমের নেতাদের। বিরোধী দলনেতাকে পাল্টা জবাব দিয়েছে সিপিএমও। কিন্তু কৌতূহলের বিষয়, শুভেন্দু কোন কৌশলে বার বার নিচুতলার বামকর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দিচ্ছেন? কেনই বা কর্মীদের লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে সিপিএম নেতাদের নিশানা করছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা?

সইফুদ্দিনকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আনিসুর রহমান লস্করকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আনিসুরের রাজনৈতিক পরিচয়, তিনি সিপিএমের কর্মী। ধরা পড়েছেন কামালউদ্দিন ঢালি নামে আর এক অভিযুক্তও। জয়নগরে খুনের ঘটনার অব্যবহিত প্রতিক্রিয়ায় ওই এলাকার সিপিএম কর্মীদের ১৬টি বাড়ি ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছিল। ঘরছাড়া হয়েছিলেন অনেকে। তাঁদের বেশিরভাগই সিপিএমের সমর্থক পরিবার। এর মধ্যে সিপিএমের প্রতিনিধিদল জয়নগরে গিয়েওছিল। কিন্তু শুভেন্দুর দাবি, ‘‘পঞ্চায়েতে যে কমরেডরা নিচুতলায় লড়াই করেছিলেন, তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না রাজ্য সিপিএমের নেতারা। তাঁরা আমায় মেসেজ (টেলিফোনে বার্তা) করছেন।’’ বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’য় সিপিএম এবং তৃণমূল একসঙ্গেই রয়েছে। তাই এখানকার নেতারা নিচুতলার কর্মীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। পাল্টা সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘প্রতি দিন শুভেন্দুর ঘর থেকে বিধায়কেরা তৃণমূলের দুয়ারে গিয়ে উঠছেন। উনি বরং তাঁদের সামলান! আমরা আমাদেরটা বুঝে নেব।’’

অনেকের মতে, শুভেন্দুর এই ‘কমরেড’দের আপন করে নেওয়ার রাজনৈতিক কৌশল হল, রামের ভোট যেন বামের দিকে না ফিরে যায়। তাঁদের বক্তব্য, ২০১৯-এর লোকসভা ভোট হোক বা ২০২১-এর বিধানসভা ভোট— দেখা গিয়েছে বামের ভোট রামের বাক্সে গিয়েছিল। তাতেই বিজেপি বঙ্গ রাজনীতির পরিসরে জায়গা করে নিতে পেরেছে। কিন্তু তার পরে ১০১টি পুরসভার ভোট বা বিস্তীর্ণ এলাকার পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামেদের ভোট কিছুটা হলেও বেড়েছে। দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় সেই বৃদ্ধি ১৩-১৪ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। তার ফলে বিজেপি দুর্বল হয়েছে। অনেকের মতে, লোকসভা ভোটের আগে সেটাতেই বাঁধ দিতে চাইছেন শুভেন্দু।

উত্তরবঙ্গের আদিবাসী, রাজবংশী অধ্যুষিত এলাকা ছাড়া রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিজেপি এখনও নিজস্ব ভোট-ভিত্তি তৈরি করতে পারেনি বলে বিভিন্ন সময়ের নির্বাচনে দেখা গিয়েছে। তার চেয়ে বরং তারা ভরসা রেখেছে ‘পরিযায়ী’ ভোটের উপরেই। অনেকের মতে, সে কারণেই নিচুতলার বামকর্মীদের মধ্যে শুভেন্দু ওই বার্তা দিতে চাইছেন। এবং তা দিচ্ছেন ধারাবাহিক ভাবে।

এর আগে ‘ইন্ডিয়া’ গঠনের সময়ে বাংলার সিপিএম এবং কংগ্রেস কর্মীদের পৃথক মঞ্চ গড়ে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছিলেন শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘সারা রাজ্যে বাম ও কংগ্রেস অত শক্তিশালী নয়। কিন্তু কিছু পকেটে তাদের নিচুতলার কর্মীরা পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলকে প্রতিরোধ করেছেন। এঁদের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সেটিং নেই। বাম ও কংগ্রেসের কয়েক জন কর্মীর প্রাণও গিয়েছে। কিন্তু তার পরেও রাহুল গান্ধী, সীতারাম ইয়েচুরি তৃণমূলের সঙ্গে মিটিং করছেন। আমি ওঁদের বলব, আমাদের সঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আসুন। যদি বিজেপির কারণে অসুবিধা হয়, তা হলে আলাদা মঞ্চ গড়ে লড়াই করুন। এই স্বৈরাচার থেকে বাংলাকে বাঁচাতে হবে।’’

তবে রাজনীতিতে এই ধরনের অবিশ্বাস, অনাস্থার বাতাবরণ তৈরি করার কৌশল নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন রাজ্যে তা দেখা গিয়েছে। শুভেন্দুও সেই কৌশলেই রামের বাক্সে আসা বামভোট অটুট রাখতে চাইছেন। তিনি সফল হলেন কি না, তা বলবে লোকসভা ভোটের ফলাফল।

Suvendu Adhikari Joynagar Murder

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}