মহম্মদ মানিক। নিজস্ব চিত্র।
প্রতিবারই তো যাই। কোনও দিন মনেও হয়নি, এমনটা হতে পারে। একটা নদী, যার সঙ্গে আশপাশের গ্রামের মানুষের প্রতিদিনের ওঠাবসা, যেখানে আগমনীর সুর বাজে, প্রতিমার বিসর্জন হয়, সেই নদীই এমন ভয়ঙ্কর হতে পারে!
পরিবারের সকলকে নিয়ে পশ্চিম তেশিমিলা গ্রামের থেকে এ বারও মাল নদীতে বিসর্জন দেখতে গিয়েছিলাম বুধবার বিকেলে। তখন থেকে উৎসবের আবহে নদীর চারদিকটা যেন ভরে ছিল। বিসর্জনের ঢাকের বাদ্যিতে কোথাও যেন একটা বিদায়ের সুর থাকে। প্রতিবারই আমার মন খারাপ হয়ে যায়। এ বারেও চুপ করে এক ধারে দাঁড়িয়েছিলাম। বাজনায় একটা ঘোর লেগে গিয়েছিল। সেই ঘোর ভাঙল চিৎকার আর আর্তনাদে।
দেখি, তীব্র জলস্রোত ধেয়ে আসছে উত্তর দিক থেকে। চোখের পলকে সেই স্রোত তছনছ করে দিল চরের উপরে তৈরি বিসর্জনের ঘাটকে। নিমেশে নদীতে তখন ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া বেগ। সেই স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে চলছিল বহু মানুষকে। তাঁরা
চোখের সামনে পাক খেতে খেতে তলিয়ে যাচ্ছেন। বাচ্চা, বয়স্ক— কে নেই সেখানে!
বসে থাকতে পারিনি আর। ২৫ ফুট উঁচু পাড় থেকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ি। পরিবারের কথা তখন মনে আসেনি। শুধু মনে হচ্ছিল, ওই যে হাতগুলি ডুবছে আর ভাসছে, তার ক’টাকে ধরতে পারব! নিজে ভাল সাঁতার জানি। মাল নদীর সঙ্গে ‘পরিচয়ও’ অনেক দিনের। তাই নিজের পরোয়া না করে জলে নেমে পড়লাম। কত জনকে শেষ পর্যন্ত পাড়ে তুলতে পেরেছি, মনে নেই। আফসোস একটাই, সবাইকে বাঁচাতে পারলাম না। আমার মতো আর কয়েক জন সাঁতারু থাকলে হয়তো কেউ মরতেন না। মালবাজার পুরসভার লোকজন ও পুলিশ যথাসাধ্য করেছেন। তবে হঠাৎ এই তীব্র জলস্রোতের কাছে মানুষ তো অসহায়।
আর আমার মনে হয়েছে, সবাইকে বাঁচাতে না পারাটাই আমার হার।
উদ্ধারকারী যুবক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy