Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

শঙ্খ-সলমনদের ডিলিট, ডিগ্রি-প্রস্তাবে রীতিমতো সংঘাত, আপত্তি সত্ত্বেও যাদবপুরে হার রাজ্যপালের

সমাবর্তনে কবি শঙ্খ ঘোষ ও প্রাক্তন বিদেশসচিব সলমন হায়দারকে সাম্মানিক ডিলিট এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধিকর্ত্রী সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিজ্ঞানী সিএনআর রাওকে সাম্মানিক ডিএসসি ডিগ্রি দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য এ দিন কোর্টের বৈঠকে ওঠে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:২৮
Share: Save:

সাম্মানিক ডিলিট এবং ডিএসসি ডিগ্রি প্রাপক বাছাই নিয়ে বিতর্ক বাধতে পারে বলে জোর জল্পনা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে। আশঙ্কা ছিল দ্বিমত পোষণেরও। সেই জল্পনা, সেই আশঙ্কা ছাপিয়ে শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের বৈঠকে আচার্য-রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে রীতিমতো সংঘাত বেধে গেল।

আসন্ন সমাবর্তনে সাম্মানিক ডিলিট এবং ডিএসসি ডিগ্রি দেওয়ার জন্য চার জনের নাম প্রস্তাব করেছিল কর্মসমিতি। কোর্টের বৈঠকে সেই সব নাম চূড়ান্ত করার কথা উঠতেই আচার্য জানান, এ বিষয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন আছে। কিন্তু কর্মসমিতির নেওয়া সিদ্ধান্তের পক্ষেই সায় দেন বৈঠকে উপস্থিত সব কোর্ট-সদস্য। ফলে রাজ্যপাল শেষ পর্যন্ত তা মেনে নিতে বাধ্য হন। শিক্ষা ও রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ এটাকে আচার্য-রাজ্যপালের হার হিসেবেই দেখছে।

সমাবর্তনে কবি শঙ্খ ঘোষ ও প্রাক্তন বিদেশসচিব সলমন হায়দারকে সাম্মানিক ডিলিট এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধিকর্ত্রী সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিজ্ঞানী সিএনআর রাওকে সাম্মানিক ডিএসসি ডিগ্রি দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য এ দিন কোর্টের বৈঠকে ওঠে। নিয়ম অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কর্মসমিতি আগেই বিষয়টি কোর্টের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল। বৈঠকে রাজ্যপাল ও কোর্টের চেয়ারম্যান ধনখড় জানান, ওই চার জনের বিষয়টি তো তিনি জানতেনই না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য, অনেক আগেই প্রস্তাবিত চারটি নাম আচার্যকে জানানো হয়েছিল। ধনখড় মন্তব্য করেন, ওঁদের চেয়ে ভাল প্রার্থী আছেন। এই বিষয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া যেত। কোর্টের এক সদস্য তাঁকে জানান, এই বিষয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার রেওয়াজ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বৈঠকে আচার্য জগদীপ ধনখড়। —নিজস্ব চিত্র।

সলমন হায়দারের জীবনপঞ্জি দেখতে গিয়ে রাজ্যপাল জানতে চান, আরবি জানাটা কোনও যোগ্যতা কি না। সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উঠতে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ইনি কে?’’ পাল্টা প্রশ্নে জবাব দেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান এবং কোর্ট-সদস্য ওমপ্রকাশ মিশ্র। বলেন, ‘‘মনমোহন সিংহ বা অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কি বায়োডেটার (জীবনপঞ্জির) প্রয়োজন হয়?’’

প্রশ্ন, পাল্টা প্রশ্নের মধ্যেই আচার্য জানান, এই ডিগ্রি প্রাপক বাছাইয়ের বিষয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন ছিল। তিনি তাঁর অভিমত রাজভবনে ফিরে গিয়ে জানাবেন। কোর্ট-সদস্যেরা জানান, নিয়মবিধি অনুযায়ী কোর্টের বৈঠকেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। রাজ্যপাল এসেছেন আচার্য হিসেবে। সাম্মানিক ডিলিট ও ডিএসসি ডিগ্রির বিষয়ে এখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। রাজ্যপাল তখন জিজ্ঞাসা করেন, ওই চার জনের বিষয়ে উপস্থিত সদস্যদের কী মত?

কোর্ট-সদস্যদের প্রত্যেকেই হাত তুলে উল্লিখিত চার জনকে ওই ডিগ্রি প্রদানের বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে দেন।

পরে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আজকের বৈঠকে কর্মসমিতির সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এই ধরনের সম্মান জানানোর আগে সবিস্তার আলোচনা করা হবে। যাদবপুরের মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যক্তিকেই এমন সম্মান দেওয়া হবে।’’

কোর্ট-সদস্যদের ভূমিকায় শিক্ষা ও রাজনৈতিক শিবির উচ্ছ্বসিত। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহ-উপাচার্য সিদ্ধার্থ দত্ত বলেন, ‘‘যাদবপুরের ঐতিহ্য মেনে কোর্ট-সদস্যেরা একযোগে যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়। আরও এক বার গণতান্ত্রিকতার প্রমাণ রাখল যাদবপুর। সিপিএম নেতা এবং যাদবপুরের প্রাক্তনী সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট-সদস্যেরা যে-সংহতি দেখিয়েছেন, তাতে আমি গর্বিত। যাদবপুর যে স্বাধীন ভাবে ভাবতে জানে, সেটা আরও এক বার প্রমাণিত হল।’’ ওমপ্রকাশবাবুর বক্তব্য, রাজ্যপাল আচার্য হিসেবে কোর্টের বৈঠকে সভাপতিত্ব করতে এসে নিজের বক্তব্য চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘কোর্টের বৈঠকে শিক্ষকেরা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার রক্ষা করেছেন। সেই জন্য তাঁদের ধন্যবাদ।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy