পার্থসারথি চট্টোপাধ্যারের বাড়িতে সিবিআই হানা নিয়ে মন্তব্য দলের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের। —ফাইল চিত্র।
পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা। এ বার প্রধান বিরোধী দল বিজেপির এক বিধায়কেরও নাম জড়াল ওই মামলায়। সোমবার সকালে রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হানা দিল সিবিআই। এক সময়ে রানাঘাট পুরসভার পুরপ্রধান ছিলেন প্রাক্তন তৃণমূল নেতা পার্থসারথি। তার প্রেক্ষিতে দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জগন্নাথ সরকারের দাবি, পার্থসারথি তৃণমূলে থাকাকালীন চুরি করেছেন। এরই পাশাপাশি রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথের বক্তব্য, কেউ চুরি করে থাকলে, বিজেপির লোক বলে তাঁকে রেয়াত করা হবে না! পাল্টা তৃণমূলের দাবি, নিরপেক্ষতার নাটক করতেই বিজেপি বিধায়কের বাড়িতে হানা দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে হলে আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেফতার করা হোক বলে মন্তব্য করেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
রবিবারেই এই মামলায় রাজ্যের ন’জন নেতা-মন্ত্রীর ঠিকানা মিলিয়ে মোট ১২টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে সিবিআই। সেই তালিকায় ছিল কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের (ববি) চেতলার বাড়ি। ছিল কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের দু’টি ঠিকানা। এ ছাড়াও যাঁদের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চলেছে, তাঁদের কেউ পুরসভার বর্তমান পুরপ্রধান, কেউ আবার প্রাক্তন পুরপ্রধান। এর পর সকালেই পার্থসারথির বাড়িতে গেল গোয়েন্দা সংস্থা। বিধায়কের বাড়িতে সিবিআই কর্তারা ঢুকতেই আশপাশ ঘিরে ফেলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। সিবিআই সূত্রে খবর, পার্থসারথি পুরপ্রধান পদে থাকার সময় পুরসভায় নিয়োগ নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময় বেশ কিছু অস্থায়ী কর্মী, গ্রুপ ডি-সহ ৭২টি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা।
পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শুরু থেকেই শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের নাম জড়াতে দেখা গিয়েছে। তা নিয়ে প্রায়ই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলতে দেখা যায় তৃণমূলকে। এই প্রথম কোনও বিজেপি নেতার নাম জড়াল এই মামলায়। তা নিয়ে জল্পনার মধ্যেই জগন্নাথ বলেন, ‘‘পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় যখন তৃণমূলে ছিলেন, তখন মালিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছায় তাঁকে চুরি করতে হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে পার্থসারথি অত্যন্ত ভাল মানুষ।’’ এর পরেই জগন্নাথ বলেন, ‘‘কেউ যদি চুরি করে থাকে, আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে। বিজেপি বলে তাকে রেয়াত করা হবে না।’’ বিজেপি বিধায়কের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ‘নিরপেক্ষতা’র প্রমাণ হিসাবেই দেখছেন জগন্নাথ। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি বিধায়কের বাড়িতে সিবিআই হানার মধ্যে দিয়ে আবার প্রমাণ হল, তদন্তকারী সংস্থার নিরপেক্ষতা প্রশ্নাতীত।’’
জগন্নাথের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কুণাল বলেন, ‘‘কোণঠাসা হয়ে গিয়ে চোখে ধুলো দিতেই নাটক করছে ইডি, সিবিআই। এফআইআরে নাম থাকা শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেফতার করলে বুঝব তদন্তকারী সংস্থার নিরপেক্ষতা আছে। তার আগে এ সব ভাঁওতাবাজি করে কোনও লাভ নেই।’’
টানা ২৫ বছর রানাঘাটে পুরপ্রধান পদে ছিলেন পার্থসারথি। প্রথম ১৫ বছর কংগ্রেসের হয়ে, পরের ১০ বছর তৃণমূলের। ১৯৯০ সালে প্রথম বার পুরসভার কাউন্সিলর হন পার্থসারথি ওরফে বাবুদা। কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ডের প্রধান হন ১৯৯৫ সালে। এর পর ২০০৯ সালের শেষের দিকে অনুগামীদের নিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। ২০১০ সালে আবারও পুরপ্রধান নির্বাচিত হন। ২০২০ সালে পুরসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় শেষ মাস ছয়েক পুর প্রশাসক বোর্ডের সভাপতি পদেও ছিলেন পার্থসারথি। মাঝে পাঁচ বছর ছিলেন রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক। সে বার বিধানসভা ভোটের দেড় বছর আগে যোগ দেন তৃণমূলে। ২০১১ সালের নির্বাচনে তাঁকেই প্রার্থী করে তৃণমূল। প্রার্থিপদের বাকি সব দাবিদারকে টপকে প্রার্থী হয়ে জিতেও যান পার্থসারথি। পরের বার অবশ্য কংগ্রেসের শঙ্কর সিংহের কাছে হেরে যান। এর পর গত বিধানসভা ভোটের আগে দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল পার্থসারথির। পরে জল্পনা সত্যি করে ২০২১ সালের ভোটের আগে জানুয়ারি মাসে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবীর ঘোষাল, বৈশালী ডালমিয়াদের সঙ্গে চার্টার্ড বিমানে তিনিও দিল্লির পথ ধরেছিলেন। দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে হাতে তুলে নিয়েছিলেন পদ্ম-পতাকা। পরে বিধানসভা ভোটে রানাঘাটেই পার্থসারথিকে প্রার্থী করে বিজেপি। তিনি জিতেও যান। পার্থসারথির বাবা বিনয় চট্টোপাধ্যায়ও রানাঘাটের বিধায়ক ছিলেন এক সময়। কাকা বিমল চট্টোপাধ্যায়ও ছিলেন পুরপ্রধান পদে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy