জনসংযোগের নতুন কৌশল— মুষ্টিভিক্ষা।
ভিক্ষাং দেহি্! মাধুকরীর ঝোলা কাঁধে বর্ধমানের এক গ্রামে বাড়ি বাড়ি হাত পাতবেন বিজেপি-র শীর্ষনেতা জেপি নড্ডা। চাল-ডাল তো নেবেনই, সঙ্গে কৃষকদের বাড়ি থেকে সব্জি নিয়েও ঝোলায় ভরবেন। সাধারণ মানুষের বাড়িতে ভোজনের রীতি আগেই দেখিয়েছেন বিজেপি নেতারা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে নড্ডা— সকলেই সেই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এ বার দেখা যাবে জনসংযোগের নতুন কৌশল— মুষ্টিভিক্ষা।
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি মাঝেমধ্যেই প্রকাশ্যে ‘মুষ্টিযোগ’-এর কথা বলে থাকেন। অর্থাৎ, ক্ষমতায় এলে অত্যাচারী পুলিশদের তাদের জায়গা দেখিয়ে দেওয়া হবে বা তৃণমূল একটা মারলে তাঁরা পাল্টা দু’টো মারবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু নড্ডা হাঁটছেন একেবারে ভিন্নপথে। মুষ্টিযোগ নয়। মুষ্টিভিক্ষা।
বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি নড্ডার শনিবার বঙ্গসফরে আসার কথা। তিনি একটি সমাবেশ করবেন পূর্ব বর্ধমানের দাঁইহাটে। সেখানেই নিজে ভিক্ষা চেয়ে রাজ্যে শুরু করবেন এক নতুন কর্মসূচি। ‘বাড়ি বাড়ি মুষ্টি’ নামে ওই কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবেই ভিক্ষাগ্রহণ। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত যা ঠিক হয়েছে, তাতে কাটোয়ার দাঁইহাটে জগদানন্দপুর গ্রামের পাঁচ কৃষক পরিবারে যাবেন নড্ডা। সেখান থেকে ভিক্ষাসংগ্রহের পরে এক কৃষকের বাড়িতেই দ্বিপ্রাহরিক পিত্তরক্ষা করবেন।
দাঁইহাটে জগদানন্দপুর গ্রামে চলছে নড্ডার ‘বাড়ি বাড়ি মুষ্টি’ কর্মসূচির প্রস্তুতি।
নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নাজেহাল কেন্দ্রীয় সরকার। প্রবল সমালোচিত বিজেপি। এমনই এক পরিস্থিতিতে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে রাজ্যে কৃষিপ্রধান জেলা পূর্ব বর্ধমান থেকেই কৃষকদের কাছে টানার নতুন কর্মসূচির সূচনা হতে চলেছে। তবে নড্ডা একাই ভিক্ষা করবেন না। বিজেপি-র কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষ জানিয়েছেন, এটা সূচনা। এর পর এই কর্মসূচি চলতে থাকবে। ভিক্ষার চাল-ডাল-সব্জি নিয়ে কী হবে? তারও পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। কৃষ্ণের কথায়, ‘‘নড্ডাজি বাড়ি বাড়ি গিয়ে এক মুষ্ঠি করে যে চাল-সব্জি ইত্যাদি সংগ্রহ করবেন, তা জমিয়ে রাখা হবে। দলের অন্যান্য নেতা-কর্মী পরে ওই কাজ চালিয়ে যাবেন। এর পরে গ্রামে গ্রামে ‘সহভোজ’ হবে।’’
‘সহভোজ’ পরিকল্পনার ব্যাখ্যা করে কৃষ্ণ বলেন, ‘‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করা চাল-সব্জি দিয়ে রান্না করে বিজেপির উদ্যোগে হবে পিকনিক। গ্রামের সকলে একদিন এক সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করবেন। সেটা কোথায় কবে হবে, তা এখনও ঠিক না হলেও শনিবার নড্ডার সফর থেকেই ‘মুষ্টিভিক্ষা’ শুরু হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে তার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে কাটোয়া বিজেপি। আগামিদিনে রাজ্যের অন্যান্য কৃষিপ্রধান এলাকাতেও এই কর্মসূচি শুরু করতে চায় বিজেপি।
আরও পড়ুন: ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা, সংঘর্ষে মৃত ৪, উত্তাল আমেরিকা
আরও পড়ুন: প্রেসিডেন্ট ভোটে বাইডেনের জয় অনুমোদন কংগ্রেসের, মানলেন ট্রাম্পও
অমিত শাহ প্রতিটি বঙ্গসফরেই রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কাছে একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, শুধু ‘হাওয়ায়’ ভর করে নির্বাচনে জেতা যাবে না। বাড়ি বাড়ি যেতে হবে নেতা-কর্মীদের। সেই কারণে কেন্দ্রীয় বিজেপি-ই ঠিক করে দিয়েছে কর্মসূচি। যার নাম ‘গৃহসম্পর্ক অভিযান’। ছোট-বড় সমাবেশ যতই করা হোক না কেন, বাড়ি বাড়ি যাওয়ার উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন অমিত। সেই মতো গোটা রাজ্যে কর্মসূচি চালাচ্ছেন বিজেপি নেতারা। শুধু রাজ্যের নেতারাই নন, বাংলার নির্বাচনে তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা ভিনরাজ্যের মন্ত্রীরাও ‘গৃহসম্পর্ক অভিযান’-এ অংশ নিচ্ছেন। এ বার তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ‘বাড়ি বাড়ি মুষ্ঠি’ এবং ‘সহভোজ’ কর্মসূচি। যা সবই আদতে জনসংযোগের নানা কৌশল।
শুধু বাড়ি বাড়ি যাওয়াই নয়, বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ— সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গেও দলের নেতা-কর্মীদের যোগাযোগ করতে হবে নির্বাচনের আগে। সেইমতো কর্মসূচি নিচ্ছেন নড্ডাও। গত ডিসেম্বরে বঙ্গ সফরে এসে প্রথমদিন কলকাতায় বস্তিবাসীদের সঙ্গে এবং দ্বিতীয়দিন ডায়মন্ডহারবারে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন নড্ডা। এ বার তাঁর এবং তাঁদের লক্ষ্য কৃষক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy