এক কৃষকের বাড়িতে ভিক্ষাগ্রহণ নড্ডার।
ডায়মন্ডহারবার যাওয়ার পথে কনভয়ে হামলার ঘটনায় আগের সফরে খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর। কিন্তু শনিবারের সফরে ‘জামাই আদর’ পেলেন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। বাড়ি বাড়ি মুষ্টিভিক্ষার কর্মসূচিতে কৃষকের মন ছুঁতে চেয়েছিলেন নড্ডা। কিন্তু সেই পর্বের ছবি দেখা বোঝা গেল নড্ডার মন ছুঁয়ে নিয়েছে বাংলা। পূর্ব বর্ধমানের গ্রাম দেখিয়ে দিল বাংলার আতিথেয়তার নজির। দূরের নড্ডাকে ঘরের করে নেওয়ার জন্য কাটোয়ার জগদানন্দ গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে শঙ্খ বাজিয়ে, উলুধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানানো হল বাংলার জামাইকে।
পূর্বনির্দিষ্ট কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় সমাবেশ করেছেন নড্ডা। গত ডিসেম্বরে রাজ্যে এসে বস্তিবাসী ও মৎস্যজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করে যাওয়া নড্ডার এ বারের লক্ষ্য যে বাংলার কৃষক, তা তাঁর কর্মসূচি থেকেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। জগদানন্দপুরের মাঠে শনিবারের সমাবেশের নামও দেওয়া হয়েছিল ‘কৃষক সুরক্ষা সভা’। নড্ডার বক্তব্যেও বড় অংশ জুড়ে ছিল বাংলার কৃষকদের ‘বঞ্চনা করা’র প্রতিবাদ এবং তজ্জনিত কারণে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের নিন্দা। তার সঙ্গে ছিল বিজেপি ক্ষমতায় এলে কী কী করা হবে তার প্রতিশ্রুতির ফিরিস্তি।
কৃষকের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ নড্ডার।
নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে নিজেদের ‘কৃষকদরদী’ প্রমাণ করতে শুধু বক্তব্যেই নয়, নড্ডার জনসংযোগ কর্মসূচিতেও কৃষকদেরই গুরুত্ব দিয়েছে রাজ্য বিজেপি । আগে থাকেই ঠিক করে রাখা জগদানন্দপুর গ্রামের পাঁচটি বাড়িতে যান নড্ডা। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, রাহুল সিংহরা। পরিকল্পনা ছিল, কষক পরিবারের মহিলাদের হাত থেকে চাল ও সব্জি নেবেন নড্ডা। তাই লকেটকে সামনে রাখা হয়। বাড়িতে বাড়িতে মহিলারাই এগিয়ে আসেন নড্ডাকে বরণ করে নিতে। ফুল, প্রদীপ দিয়ে বরণ করার পাশাপাশি দেখা যায় এক বৃদ্ধা নড্ডার কপালে চন্দনের টিপ পরিয়ে দিচ্ছেন। একটি বাড়িতে নলেন গুড়ের রসগোল্লা দিয়েও স্বাগত জানানো হয় নড্ডাকে। প্রথমে নিজে মুখে পুরে তার পর নড্ডা সেই রসগোল্লা খাইয়ে দেন দিলীপ, রাহুলকে। তুলে দেন লকেটের হাতেও। তবে কোথাও মাস্ক খুলে সে ভাবে কথা বলতে দেখা যায়নি সদ্য করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া নড্ডাকে। সেই কাজটা মূলত করেছেন দিলীপ এবং লকেট।
জগদানন্দপুরে এক বাড়ির গোয়ালে নড্ডা।
সংবাদমাধ্যম ও উৎসাহীদের ভিড়ে আনুষ্ঠানিক মুষ্টিভিক্ষা গ্রহণ নিয়ে ঠেলাঠেলি হতে দেখা গিয়েছে সব বাড়িতেই। নড্ডা আসবেন শুনে অনেক বাড়িতে আগে থেকেই আত্মীয়-পরিজনরা চলে এসেছিলেন। মহিলারা এগিয়ে আসেন হাতে গামলা ভরা চাল, আলু, টমেটো-সহ নানা সব্জি নিয়ে। মুঠো ভরে মহিলারাই নড্ডার কাঁধের গেরুয়া ঝোলায় ভরে দেন ভিক্ষার দান। প্রতিদানে নড্ডা দেন বিজেপি-র প্রচার পুস্তিকা। গৃহস্থের দেওয়ালে সেঁটে দেন বিজেপি-র স্টিকার। তবে ভিক্ষাগ্রহণের আড়ালে ব্যক্তি ছাড়িয়ে পারিবারিক সম্পর্ক তৈরিই ছিল নড্ডার আসল উদ্দেশ্য। তাই কোথাও তিনি ভিক্ষাদানকারী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গ্রুপ ছবি তোলেন। কোথাও পোষা গরুকে খাওয়াতে ঢুকে পড়েন গোয়ালে।
আরও পড়ুন: ভারতে তৈরি দু’টি ভ্যাকসিন মানবজাতিকে রক্ষা করতে পারে, দাবি মোদীর
মুষ্টিভিক্ষা পর্ব সেরে নড্ডা যান ওই গ্রামেরই কৃষক মথুরা মণ্ডলের বাড়ি। সেখানেই ছিল মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা। এর আগে অমিত শাহ সাধারণের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছেন। কিন্তু শনিবার নড্ডার জন্য যে আয়োজন ছিল, তাতে বাঙালি ছোঁয়া অনেক বেশি ছিল। সম্ভবত সচেতন ভাবেই। নড্ডার স্ত্রী মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালি। সেই কথা মনে রেখেই ‘জামাই আদরের’ প্রস্তুতি ছিল। ভাতের সঙ্গে শাক, বেগুনভাজা, তরকারি ছাড়াও শেষ পাতে ছিল পায়েস। বাঙালি কায়দায় হাঁটু মুড়ে বাবু হয়ে বসেই কলাপাতায় সাদা ভাত খান নড্ডা। যদিও সে অভ্যাস যে নেই, তা দৃশ্যতই স্পষ্ট ছিল। বাঁ হাতে নড্ডাকে সামলাতে হয়েছে মুখ থেকে পড়ে যাওয়া ভাত। ‘এঁটো’ থেকে পোশাক সামলাতে কোলে পেতে নিতে হয়েছে গামছা।
আরও পড়ুন: অক্সফোর্ডের টিকা দ্রুত ব্রাজিলে পাঠাতে মোদীকে আর্জি প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি বাড়ি ভিক্ষাগ্রহণ দেখিয়ে দিয়ে গেলেন নড্ডা। এ বার এই কাজ চালিয়ে যেতে হবে বিজেপি নেতা-কর্মীদের। সংগৃহীত চাল ও সব্জি দিয়ে হবে কৃষকদেরই খাওয়ানো হবে। নড্ডাই সেই নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, আগামী ২৪ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যের ৪০ হাজার কৃষিপ্রধান গ্রামে হবে ‘কৃষকভোজ’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy