Advertisement
০৩ জানুয়ারি ২০২৫
Cyclone Amphan

আমপান: বছর পার, শুকোয়নি ক্ষত

শুধু প্রহ্লাদই নন, আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত সমুদ্র উপকূলবর্তী দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের বহু মানুষেরই এখন এ রকমই অবস্থা।

গত বছর আমপানের পরে সুন্দরবনের বাসিন্দাদের দুর্গতি।

গত বছর আমপানের পরে সুন্দরবনের বাসিন্দাদের দুর্গতি। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২১ ০৬:৪৮
Share: Save:

সমুদ্র ছেড়ে ২০২০ সালের ২০ মে আমপান আছড়ে পড়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর ব্লকের বোটখালি এলাকায়। সে দিন মোটা কাছি দিয়ে নিজের বাড়ি চারধার বেঁধে রেখেছিলেন প্রহ্লাদ মাল। তার পরেও খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছিল অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া সেই চিলতে ঘরটুকু। প্রহ্লাদ চাষবাস করতেন এলাকায়। নোনাজল ঢুকে সে সব গিয়েছে। তিনি এখন থাকেন ফলতায়। চাষি এখন দিনমজুর। কোভিড-পরিস্থিতিতে সেই কাজও প্রায় যায় যায়। প্রহ্লাদ বলেন, ‘‘এলাকায় কাজকর্ম নেই, চাষবাস নেই। জমিজমা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাধ্য হলাম চলে আসতে। কিন্তু এ বার কী হবে, কে জানে!’’

শুধু প্রহ্লাদই নন, আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত সমুদ্র উপকূলবর্তী দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের বহু মানুষেরই এখন এ রকমই অবস্থা। দুর্যোগের পরে প্রহ্লাদের মতোই অনেকে কাজের খোঁজে এলাকা ছেড়েছিলেন। গত বছর লকডাউনে ফিরে আসেন অনেকে। একশো দিনের কাজে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিল সরকার। কিন্ত তা যথেষ্ট ছিল না, এই অভিযোগে অনেকে ফিরে যান ভিন্‌ রাজ্যে।

অতিমারির পরিবেশের মধ্যেই ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে হাত লাগায় সরকার। স্থানীয় মানুষের মূল দাবি ছিল, কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করে সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। ২০০৯ সালে আয়লার পর থেকেই উঠছে এই দাবি। তবে অভিযোগ, আমপানের পরেও কানে জল ঢোকেনি প্রশাসনের। পাকা বাঁধ এখনও বেশির ভাগ জায়গায় তৈরি হয়নি। ফের বড়সড় দুর্যোগ হলে ভিটেমাটি হারানো আশঙ্কায় রয়েছেন অনেকেই। ভোটের পরে সদ্য সেচমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন সৌমেন মহাপাত্র। কংক্রিটের বাঁধ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্র সহযোগিতা করছে না। রাজ্যের তরফে কিছু কিছু জায়গায় কাজ হচ্ছে।’’

আমপানে যাঁদের ঘর ভেঙেছিল, তাঁদের জন্য ২০ হাজার টাকা করে সরকারি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। ওই টাকা নিয়ে দুর্নীতি, স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠতে শুরু করে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি সরগরম ছিল টানা কয়েক মাস। ক্ষতিপূরণ-দুর্নীতিকে সামনে রেখে রীতিমতো সরকার উল্টে ফেলার স্বপ্নও দেখতে শুরু করে বিরোধীরা।

প্রশাসনের কর্তারা দুর্নীতির প্রমাণও পান অনেক ক্ষেত্রে। চাপের মুখে শাসক দলের অনেকে টাকা ফেরত দেন। পূর্ব মেদিনীপুরে শাস্তির কোপ এড়াতে বহু ভুয়ো ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা ট্রেজারিতে জমা দেন। ওই বাবদ ৬০ লক্ষের বেশি টাকা রাজ্য সরকারের কোষাগারে জমা পড়ে। তবে সরকারি সাহায্য না পাওয়ার উদাহরণ বিস্তর।

নন্দীগ্রামের বাসিন্দা পিন্টু মণ্ডল জানান, বাড়ির টালির ছাউনি উড়ে গিয়েছিল আমপানে। সাড়ে তিন হাজার পাতার পানের বরজ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাঁর অভিযোগ, কোনও ক্ষেত্রেই সরকারি সুবিধা পাননি। সন্দেশখালির বাউনিয়া, বউ ঠাকুরান,
খুলনা, হাসনাবাদের খাঁপুকুর, মিনাখাঁর মোহনপুর, হিঙ্গলগঞ্জ দুলদুলি, পারঘুমটি, বাঁকড়া, সান্ডেলের বিল-সহ বিভিন্ন এলাকার বেশ কিছু মানুষ ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে নিজেদের খরচেই ভাঙা ঘর সারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, বেশ কিছু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ঠিক না থাকায় ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি।

সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় ম্যানগ্রোভের ক্ষতি হয়েছিল ঝড়ে। ম্যানগ্রোভের ঢাল না থাকলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বেশি হত বলে মনে করলেন পরিবেশবিদরা। পরবর্তী সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ অরণ্য তৈরির জন্য বিশেষ জোর দিয়েছে বলে সরকারি কর্তাদের দাবি।

তবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প আছে।

আমপানের ধ্বংসলীলায় টিনের ছাউনির বাড়ির ভিতটুকুই শুধু জেগেছিল উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার ধুলোনি গ্রামের কাকলি হালদারের। সরকারি ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন। নতুন বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন শুরু করেন। স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন কলকাতায়। জানালেন, শ্রী ফিরছে সংসারে। বেঁচে থাকার এই লড়াই-ই টিকিয়ে রেখেছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের।

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Sunderbans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy