জ্যোতি বসুর জন্মদিনে বইটি প্রকাশ করবেন প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি। বইয়ের নাম ‘রক্তপলাশের আকাঙ্ক্ষায়’। গ্রাফিক — শৌভিক দেবনাথ।
সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রাম নিয়ে রাজ্য জুড়ে তৈরি হওয়া সেই তুমুল বিতর্ক এবং ‘নৈরাজ্য’কালেই সিপিএমের উচিত ছিল সরকার ভেঙে দিয়ে নতুন করে জনমত নেওয়া। এটা করলে আজকের পরিণতি হত না বামেদের। রাজ্যের শিল্পপরিস্থিতিও অন্য দিকে মোড় নিত। মনে করেন সিপিএম রাজ্য কমিটি সদস্য কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। নিজের এই মতামত সে সময় দলের কাছে রাখলেও তা আমল পায়নি। সেই আক্ষেপের কথাই এ বার প্রকাশ হতে চলেছে তাঁর বইতে। বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই জ্যোতি বসুর জন্মদিনে বইটি প্রকাশ করবেন প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি। বইয়ের নাম ‘রক্তপলাশের আকাঙ্ক্ষায়’। এরই একটি অংশে উঠে আসছে সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলন পর্বের কথা।
কান্তি লিখেছেন, ‘আমার অভিমত ছিল— কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ এই স্লোগানকে সামনে রেখে রাজ্যের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে, শিল্পায়নের আগামী কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে ঘোষণা করে আমরা ২০০৬ সালে নির্বাচনে লড়াই করেছি এবং মানুষের ব্যাপক সমর্থন নিয়ে সরকারে আসীন আছি। অতএব বিরোধীদের নেতিবাচক, নৈরাজ্যের ধারাবাহিক কর্মসূচিতে যখন এত বড় শিল্প সম্ভাবনা বিনষ্ট হল— তখন বিধানসভা ভেঙে দিয়ে আমরা নতুন করে মানুষের জনাদেশ চাই।’
২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে ২৩৫ আসনে জিতে বামফ্রন্ট সপ্তমবারের জন্য ক্ষমতায় আসে। ফের একবার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার দিনেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঘোষণা করেন সিঙ্গুরে টাটাদের ন্যানো কারখানার কথা। সেই কারখানার জমি অধিগ্রহণকে ঘিরেই শুরু হয় বড় মাপের জমি আন্দোলন। সেই আন্দোলন সামলে, শুরুও হয়ে যায় কারখানা তৈরির কাজ। কিন্তু পরিস্থিতি আমূল বদলে যায় নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনে। নন্দীগ্রাম শুধু নিজের মাটিতে জমি অধিগ্রহণকেই আটকায়নি, নতুন করে চাঙ্গা করে দেয় সিঙ্গুরকেও। এর পরিণতি হয় টাটাদের বিদায়। বাংলার রাজনীতিতে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হয়ে যায় এই পর্ব।
কান্তি তাঁর বইতে লিখেছেন, সেই সময় যদি বিধানসভা ভেঙে নতুন করে জনাদেশ নেওয়ার দিকে যাওয়া হত, মানুষ তাঁদের পাশেই থাকতেন। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘আরও একবার স্পষ্ট করে যাচাই হয়ে যাক— মানুষ কী চান। মানুষ যা চাইবেন তাই মাথা পেতে নেব।’ সে কথা বইতে প্রকাশ করার পাশাপাশিই তিনি লিখেছেন, ‘আমার আজও বিশ্বাস মানুষ সেই সময় কিছুতেই এত বড় ক্ষতিসাধনকারীদের সমর্থন করতেন না।’
পার্টি তখন তাঁর মতামত মানেনি। কান্তির কথায়, দীর্ঘ ৬ দশকের পার্টি-জীবনে যে শৃঙ্খলা তিনি অনুশীলন করে এসেছেন, সেই শৃঙ্খলা মেনেই দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু আক্ষেপটা থেকে গিয়েছিল। আক্ষেপের সুরেই তিনি লিখেছেন, ‘যাই হোক, আমার প্রস্তাব গৃহীত হয়নি, কিন্তু তার জন্য কাউকে দোষারোপ করে কোনও লাভ নেই। আমাদের পার্টিতে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক কর্তব্য স্থির হয় পার্টি পরিচালনার গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের অভিমতের ওপর ভিত্তি করে।’ সেই শিল্প সম্ভাবনা ভেস্তে যাওয়া নিয়ে বর্তমান রাজ্য সরকারের দু’জন মন্ত্রী তথা তৎকালীন বিধায়কও নাকি তাঁর দফতরে এসে বলেছিলেন, “বড় ক্ষতি হয়ে গেল।” তবে ‘সৌজন্যবশত’ তৃণমূলের সেই দুজনের নাম নিজের বইতে প্রকাশ করেননি কান্তি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy