পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।—ফাইল চিত্র।
জিএসটি ক্ষতিপূরণ নিয়ে তুঙ্গে উঠল কেন্দ্র-রাজ্য কাজিয়া। রবিবার ভিডিয়ো বৈঠক করে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের দেওয়া ক্ষতিপূরণের বিকল্প প্রস্তাব পত্রপাঠ খারিজ করে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বললেন, যে বিজেপি বলেছিল ইউপিএ জমানায় তারা জিএসটি চালুর প্রস্তাবে সায় দেয়নি এই ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে না আঁচ করে, ক্ষমতায় এসে তারা সেই বিশ্বাসই ভাঙ্গল। অমিতবাবুর হুঁশিয়ারি, কেন্দ্র সত্যিই ওই ঘাটতি না-মেটালে, ভেঙে পড়বে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো। যেখানে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে চলে যাবে। তবে তাঁর দাবি, পশ্চিমবঙ্গ একা কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না। বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্য-সহ যে ১৫টি রাজ্য কেন্দ্রীয় প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে। ওই আলোচনা আজ হতে পারে বলে ইঙ্গিত তাঁর।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছিলেন, রাজকোষে টাকা নেই। ফলে রাজ্যগুলিকে জিএসটি ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব নয়। এমনকি আগামী দিনে সেই টাকা দাবি করার সব পথ বন্ধ করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের মত তুলে ধরে তাঁর বক্তব্য ছিল, এটা দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও নেই সরকারের। রাজ্যগুলি ক্ষোভে ফেটে পড়তে শুরু করে তার পরেই। তারই মধ্যে গত শনিবার সমস্ত রাজ্যকে চিঠি দিয়ে ক্ষতিপূরণের বিকল্প প্রস্তাবের বিস্তারিত নিয়ম পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক।
হিসেব বলছে, জিএসটি চালুর দরুন এই অর্থবর্ষে রাজ্যগুলির আয় কমবে ৯৭,০০০ কোটি টাকা। আর করোনার ধাক্কায় কমবে ২.০৩ লক্ষ কোটি। অর্থাৎ মোট ৩ লক্ষ কোটি। এর মধ্যে সেস তহবিল থেকে ৬৫,০০০ কোটি ক্ষতিপূরণ দিতে পারবে কেন্দ্র। ফলে তার পরেও আয়ের ঘাটতি ২.৩৫ লক্ষ কোটি। এই অবস্থায় মোদী সরকারের প্রস্তাব, হয় ৯৭,০০০ কোটি টাকা ধার করুক রাজ্যগুলি। যার সুদ মেটানো হবে সেস তহবিল থেকে। অথবা পুরো ২.৩৫ লক্ষ কোটিই শর্তসাপেক্ষে ঋণ নিক তারা। যার সুদ রাজ্যগুলি দেবে নিজেদের তহবিল থেকে। আসল ভরা হবে সেস থেকে। অমিতবাবুর ক্ষোভ, দু’ক্ষেত্রেই ঋণের দায় আদতে রাজ্যগুলির উপরেই চাপবে। কিছু রাজ্যের আর্থিক মেরুদণ্ডটাই ভেঙে যেতে পারে এতে।
অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি
• কেন্দ্র বাড়তি ধার নিলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। রাজ্যগুলি নিলে সে আশঙ্কা কম। যে ধার কেন্দ্রকে এড়িয়ে রাজ্যের মারফত নেওয়া সম্ভব, সে পথেই এগোনো উচিত।
অমিত মিত্রের দাবি
• করোনার আগে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন্দ্র দায়বদ্ধ। এখন তাঁরাই উল্টো কথা বলছেন। এই প্রস্তাব মানা যায় না।
• জিএসটি চালুর সময় অরুণ জেটলি বলেছিলেন, আগে বিজেপি জিএসটি-র বিরোধিতা করেছিল, কারণ তারা বিশ্বাস করত না ইউপিএ সরকার ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি পালন করবে। এখন বিজেপি সরকারই বিশ্বাস ভঙ্গ করছে।
• কেন্দ্র কেন নিজে ঋণ নিচ্ছে না? তারা তো চাইলেই টাকা ছাপাতে পারে। রাজ্যের তুলনায় সুদও কম গুনতে হয় তাদের।
তাঁর অভিযোগ, বহু রাজ্য কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না, পেনশন বন্ধ। পশ্চিমবঙ্গের রাজস্ব ঘাটতি ইতিমধ্যেই ১৫,০০০ কোটি টাকা ছুঁয়েছে। আমপান ও করোনাজনিত বিপর্যয় সামলাতে লাফিয়ে বেড়েছে খরচ।
অথচ আর্থিক দায় ও বাজেট সংক্রান্ত আইনে (এফআরবিএম) রাজ্যগুলির ধারের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো হয়নি। রাজ্য তার শেষ সীমায় পৌঁছনো সত্ত্বেও। মন্ত্রীর প্রশ্ন, কেন্দ্র কেন নিজে ঋণ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে না? তারা এক দিকে যেমন প্রয়োজনে টাকা ছাপিয়ে ধার মেটাতে পারে, তেমনই কেন্দ্রের ঋণে সুদের হার রাজ্যগুলির চেয়ে কম। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও কেন্দ্রের ঋণ নেওয়ার পক্ষে বলে জানান তিনি।
মোদী সরকারের অবশ্য যুক্তি, কেন্দ্র অতিরিক্ত ধার নিলে অর্থনীতিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে সেই ভয় কম। তাই যে ধার কেন্দ্রকে এড়িয়ে রাজ্যের মারফত নেওয়া সম্ভব, সেই পথেই এগোনো উচিত। যাকে এ দিন দায় এড়ানোর কৌশল তকমা দিয়েছেন অমিত।
এ নিয়ে তোপ দেগেছেন কেরলের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া বলেছেন, মোদী সরকার এ ভাবে নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলতে পারে না। আর অমিতবাবু বলেন, বিরোধী থাকাকালীন যাঁরা রাজ্যকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না সন্দেহে জিএসটি প্রস্তাব খারিজ করেছিল, তারাই ক্ষমতার অলিন্দে বসে বিশ্বাস ভাঙছে। বিশেষত মার্চে করোনার আগেও যেখানে নির্মলা বলেছিলেন ক্ষতিপূরণ মেটাতে তাঁরা দায়বদ্ধ।
নির্মলা করোনাকে দৈবদুর্বিপাক বলেছেন। তাঁকে কটাক্ষ করে অমিতবাবু বলেন, নোটবন্দি তো তা ছিল না। অথচ করোনার মতোই অর্থনীতির ক্ষতি করেছে। তার উপরে নোট বাতিলের মাত্র সাত মাসের মধ্যে প্রস্তুতি না-নিয়েই আনা হয় জিএসটি। এতে এক দিকে যেমন বৃদ্ধির হার তলানিতে নেমেছে, তেমনই পাকাপোক্ত ব্যবস্থা না-থাকায় ৭০,০১৮ কোটির জালিয়াতি হয়েছে। যা মেনেছেন খোদ জিএসটি নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত নন্দন নিলেকানি।
কেন্দ্র-রাজ্য এই তরজার মধ্যেই অবশ্য মধ্যপন্থায় জোর দিচ্ছেন বিজেপি সমর্থিত বিহার সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী। তাঁর কথায়, কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে শুধু ‘দেওয়া-নেওয়ার’ সম্পর্ক থাকতে পারে না। পরস্পরকে সহযোগিতাও করা উচিত। করোনার জেরে রাজ্যগুলির যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনই কেন্দ্রের আয় কমছে। ফলে দু’পক্ষকে মিলেমিশেই সমাধান বার করতে হবে। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয় কি না, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy