Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Anubrata Mondal

সব কি ঠিক নেই দলে, চলছে চর্চা

দলের কর্মীরা জানাচ্ছেন, জেলার প্রতিটি নির্বাচনে অনুব্রতের নির্দেশই শেষ কথা ছিল। ভোকাল টনিক থেকে শুরু করে ভোটের কৌশল নির্বারণ—সবই একা হাতে করে এসেছেন অনুব্রত।

অনুব্রত মণ্ডল।

অনুব্রত মণ্ডল। ফাইল চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২২ ০৮:০২
Share: Save:

আসানসোল আদালতের এজলাস থেকেই তাঁর স্পষ্ট বার্তা, দলে ‘গ্রুপবাজি’ চলবে না। জেলে থাকলেও জেলায় দলের হাঁড়ির খবর যে তাঁর কাছে রয়েছে, তা-ও শনিবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। গরু পাচার মামলায় জেলে যাওয়ার পরে এই প্রথম দল নিয়ে এতটা স্পষ্ট ভাবে কোনও বার্তা দিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত। প্রশ্ন উঠেছে, তার মানে কি জেলা তৃণমূলে সব ‘ঠিকঠাক’ নেই?

এ নিয়ে বিস্তর চর্চা থাকলেও জেলা সভাপতির কড়া ‘বার্তায়’ পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের কর্মীদের মনোবল বাড়বে বলেই দাবি জেলা নেতৃত্বের একাংশের। জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘সময় কারও এক থাকে না। আজ কেষ্টদা জেলে থাকলেও যে কোনও দিন ছাড়া পেতে পারেন। তিনি সে কথা শনিবার বলেওছেন। নিজের হাতে তৈরি জেলার সংগঠনের প্রত্যেক নেতা ও কাজের কর্মীদের দাদা জনে জনে চেনেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে কী হচ্ছে, তা-ও তিনি বিলক্ষণ জানেন। ফলে তাঁর কথা অমান্য করার দুঃসাহস কে দেখাবে! বরং নিচুতলার কর্মীরা চাঙ্গা হবে দাদার বার্তা জেনে।’’

দলের কর্মীরা জানাচ্ছেন, জেলার প্রতিটি নির্বাচনে অনুব্রতের নির্দেশই শেষ কথা ছিল। ভোকাল টনিক থেকে শুরু করে ভোটের কৌশল নির্বারণ—সবই একা হাতে করে এসেছেন অনুব্রত। এ বার পঞ্চায়েত ভোটের আগে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যার জন্য তাঁরা কেউই প্রস্তুত ছিলেন না। তাঁর অনুপস্থিতিতে জেলায় তাঁর পরবর্তী নেতারা সাধ্যমতো সংগঠন টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু, কর্মীদের অনেকেই মনোবল হারিয়েছেন বলে দল সূত্রের খবর। অন্তর্দ্বন্দ্বও মাথাচাড়া দিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। হয়তো সে-সব জানতে পেরেই শনিবার বীরভূম থেকে আসানসোলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া নেতাদের থেকে দলের সাংগঠনিক নানা বিষয়ে খোঁজ নেন অনুব্রত। এক কর্মী কিছু বলতেই কেষ্টকে বলতে শোনা যায়, ‘‘গ্রুপবাজি চলবে না। আমি জেলে চিরস্থায়ী থাকব না! ফেরার পরে ওখানে পৌঁছে এক ধার থেকে সকলকে ছেঁটে দেব। ভাল করে সবাই কাজ করো। সামনে পঞ্চায়েত ভোট।’’

বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, জেলার যে-সব নেতা একটু ‘বেসুরো’ গাইছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে আসছে বা যাঁরা সুযোগ বুঝে নিজেদের ‘ছায়া’ বাড়িয়ে নিতে চাইছেন, ভোটের আগে সংগঠনের স্বার্থেই তাঁদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা না-নেওয়ার কথা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন অনুব্রত। তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দলের খারাপ সময়ে যেন সকলে একত্রিত থাকেন, নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে না-জড়ান, সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন জেলা সভাপতি।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘শনিবার যে কথা অনুব্রত বলেছেন, সেটা ওঁদের সংগঠনের বিষয়। অনুব্রত নিজে কতটা বুঝেছেন জানি না, তবে তিনি ব্যবহৃত হচ্ছেন বলে আমার মত। ওঁর সাংগঠনিক শক্তি কাজে লাগাতেই পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন দলনেত্রী।’’ অন্য দিকে বিজেপি-র বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহার দাবি, ‘‘কেষ্ট মণ্ডল জেলের ভিতরে থেকেও জেলায় রাজ করতে চাইছেন। তাই এই ধরনের বার্তা। তবে উনি ঠিকই বলছেন। এ রাজ্যের জেলে তিনি বেশি দিন থাকবেন না। ওঁর শাগরেদ (সেহগাল হোসেন) দিল্লিতে ডাক পেয়েছেন। আশা করব, কান যখন টেনেছে, মাথাও তখন যাবে!’’

আসানসোল সংশোধনাগারে রবিবার বন্দিদের সঙ্গে বাইরের লোকজনের দেখা করার নিয়ম নেই। তাই এ দিন অনুব্রতের সঙ্গে কেউ দেখা করতে আসেননি।

অন্য বিষয়গুলি:

Anubrata Mondal Birbhum TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE