শমীক ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
আড়িয়াদহের ক্লাবে এক জনকে হাত-পা ধরে ঝুলিয়ে তাঁকে বেদম প্রহার করছে এক দল যুবক। ঘটনার ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন দুই তরুণ। দ্রুতই তা হয়ে উঠেছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার। বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে আড়িয়াদহ ও কামারহাটির ‘ত্রাস’ জয়ন্ত সিংহ ওরফে ‘জায়ান্ট’ এবং তার শাগরেদদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু একই সঙ্গে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আনা দুই ব্যক্তিকেও হাই কোর্টে দৌড়তে হয়েছে গ্রেফতার এড়াতে!
প্রশ্ন উঠছে, অত্যাচার-অনাচারের ভিডিয়ো সামনে আনলেই কি এই রাজ্যে পড়তে হবে প্রশাসনের রোষের মুখে? চোপড়ায় কিছু দিন আগেই যুবক-যুবতীকে রাস্তায় নির্যাতনের ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়। ‘নির্যাতিতা’র অভিযোগের ভিত্তিতে সেলিম ও মালবীয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর এবং মামলা রুজু করেছে পুলিশ। আড়িয়াদহের ঘটনার পরে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ভোটে তাঁর দলের ক্ষতি করার জন্য পুরলো ভিডিয়ো প্রচার করা হয়েছে। পরপর এই দৃষ্টান্ত সামনে রেখেই বিরোধীদের প্রশ্ন, এই রাজ্যে কি তবে দূতই এখন আক্রমণের শিকার? যে ভিডিয়ো সামনে না এলে অত্যাচারের কাহিনি জানাই যেত না, সেই ভিডিয়োর জন্যই থানা-আদালতে দৌড়তে হবে নাগরিক বা রাজনৈতিক কর্মীদের? সরাসরি জবাব এড়িয়ে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য ব্যাখ্যা দিচ্ছে, ভিডিয়ো ছাড়াই দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ডে অপরাধীদের সাজা হয়েছিল!
গুজরাতে চাকরি-প্রার্থীদের ভিড়ে বারান্দার রেলিং ভেঙে পড়ার ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে দেদার ‘শেয়ার’ করে সরব হয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র তথা নেতা-সাংসদেরা। উত্তরপ্রদেশ, বিহার-সহ নানা রাজ্যের ঘটনায় হামেশাই তাঁরা তা করে থাকেন। বিরোধীদের বক্তব্য, মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে ঘোরানোর ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে এসেছিল বলেই দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। সেই ভিডিয়োও ছিল কিছু দিনের পুরনো। ভিন্ রাজ্যের ঘটনার ভিডিয়ো দিয়ে সরব হওয়া গেলে এ রাজ্যের ক্ষেত্রে অন্যথা হবে কেন, এই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধী নেতারা। বিজেপির সাংসদ ও রাজ্য দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘মণিপুর, বিহার, উত্তরপ্রদেশের ভিডিয়ো হলে আপত্তি নেই। কিন্তু এ রাজ্যে হলে ‘হইস্ল ব্লোয়ার’কে ধরে আনবে! কারণ, এখানে গণতন্ত্র নয়, রাজতন্ত্র চলছে। ভোটে জিতে যে দলটা শাসন চালাচ্ছে, তারা কোনও রাজনৈতিক দল নয়। তারা একটা স্বৈরতান্ত্রিক শক্তি।’’
প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কি ওঁর প্রশাসন এবং দলের কদর্য রূপ প্রকাশ হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমকেও আক্রমণ করছেন? অন্য কোনও রাজ্যের অনৈতিক কাজ যখন সংবাদমাধ্যম বা সমাজমাধ্যমে সামনে আসে, তখন তো আপনারা হৈ হৈ করে প্রতিবাদে নামেন! আসলে এই রাজ্যে বিচারব্যবস্থা, সংবাদমাধ্যম-সহ আপামর বিরোধীরা সার্বিক ভাবে আক্রান্ত। গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় এসে আপনি গণতন্ত্রকেই অস্বীকার করেন।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘কোনও ছবি, ব্যঙ্গচিত্র বা ভিডিয়ো শাসক দলের অপছন্দ হলেই প্রশাসনিক রোষে পড়তে হয়। অম্বিকেশ মহাপাত্রের সময় থেকে একই পরম্পরা চলছে! অন্য রাজ্যে বিজেপি যেমন অসহিষ্ণুতা দেখায়, এখানে তৃণমূলও একই পথের পথিক।’’ কার্টুন-কাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছিলেন যিনি, সেই শিক্ষক অম্বিকেশও বলছেন, ‘‘এখন সকলের হাতে ম্মার্টফোন আছে। যে কেউ কোনও ঘটনার ভিডিয়ো তুলে রাজনৈতিক বা অন্য উদ্দেশ্যে কাজে লাগাতে পারেন। তার প্রশংসা বা নিন্দা হতে পারে। কিন্তু ভিডিয়োর জন্যই অনেক সামাজিক ব্যাধি সামনে আসছে, এটা তো মানতে হবে! এখানে অপরাধী, দুষ্কৃতীরাই শাসন চালাচ্ছে। তারা যে কোনও অপকর্মই আগে আড়াল করতে ব্যস্ত!’’
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘চোপড়ার অভিযোগ তৃণমূল করেনি। নির্যাতিতা মহিলা করেছেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ পদক্ষেপ করেছে। নির্যাতিতাকে আদালতের দেওয়া আইনি রক্ষাকবচ মেনে চলা তো পুলিশের কাজ।’’ কিন্তু এই ধরনের ভিডিয়ো সামনে না এলে অভিযুক্ত গ্রেফতার হতো? জয়প্রকাশের যুক্তি, ‘‘নির্ভয়া-কাণ্ডে অপরাধীদের সাজা হয়নি? এ ক্ষেত্রেও হবে। তবে নির্যাতিতার রক্ষাকবচ অমান্য করাও তো অপরাধ। যে-ই তা করুন, তাঁকে তো আইনের সামনে দাঁড়াতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy