Advertisement
E-Paper

বাহিনী-জট কাটছেই না, ক্রমশ বাড়ছে পঞ্চায়েত ভোটের দফা বৃদ্ধির দাবি, বল আবার হাই কোর্টে?

আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হওয়ার পর অন্তত তেমনটাই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। তাঁদের অনেকের মতে, শেষ পর্যন্ত হয়তো পঞ্চায়েত ভোটকে একাধিক দফায় ভেঙেই সমস্যার সমাধান করতে হবে! 

Graphical representation

কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে মতবিরোধ চলছেই নির্বাচন কমিশন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৩ ২৩:৪২
Share
Save

রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের আর বাকি ১২ দিন। অথচ ভোটের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার ব্যাপারে এখনও ঐকমত্য হতে পারল না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন। বরং পঞ্চায়েত ভোটের দফা বৃদ্ধি নিয়ে যে জল্পনা গত কয়েক দিন ধরে রাজনীতির অলিন্দে ঘোরাফেরা করছিল, সেটা দাবি হিসাবে উঠে এল সোমবার। ভাঙড়ের বিধায়ক তথা ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর নেতা নওশাদ সিদ্দিকি এ ব্যাপারে কলকাতা হাই কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে আবেদন করেছেন, হয় পঞ্চায়েত ভোটে আদালতের নির্দেশ মতো পর্যাপ্ত বাহিনী আনা হোক অথবা পঞ্চায়েত ভোটের দফা বৃদ্ধি করা হোক। পাল্টা রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল বলেছে, এক দফা হলেও যা হবে কয়েক দফা হলেও তা-ই হবে। যদিও রাজ্য নির্বাচন কমিশন ভোটের দফা বৃদ্ধি করা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে তারা জানিয়েছে, কেন্দ্র ৪৮৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার ক্ষেত্রে অনুমোদন দেয়নি। সেই বাহিনী দেওয়ার জন্য আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে তারা। অর্থাৎ কম বাহিনী দিয়ে বেশি দফায় ভোট নয়, এক দফায় ভোট করানোর জন্য যে পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী আনানোর কথা বলেছিল কোর্ট, তার জন্যই চেষ্টা করে চলেছে কমিশন। পঞ্চায়েত ভোটের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে এই টানাপড়েনে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি আরও এক বার হাই কোর্টকেই হাল ধরতে হবে? সোমবার এ নিয়ে আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হওয়ার পর অন্তত তেমনটাই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। তাঁদের অনেকের মতে, শেষ পর্যন্ত হয়তো পঞ্চায়েত ভোটকে একাধিক দফায় ভেঙেই সমস্যার সমাধান করতে হবে!

পঞ্চায়েত ভোটের আগে আদালত, কমিশন এবং ভোটের নিরাপত্তা নিয়ে প্রতি দিনই কিছু না কিছু ঘটনা ঘটছে। সোমবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। কী কী ঘটল দিনভর? দেখে নেওয়া যাক—

কমিশন-কেন্দ্র চিঠিচাপাটি

আগামী ৮ জুলাই পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা এ রাজ্যে। তার আগে সোমবার ২৬ জুনও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নিয়ে চিঠি আদানপ্রদান হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের ২২টি জেলায় ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, রাজ্যের আবেদন মেনে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য আরও ৩১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে পারবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সোমবার সেই ৩১৫ কোম্পানি বাহিনী নিয়ে কমিশনকে চিঠি লিখেছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, এই বাহিনীকে কোথায় মোতায়েন করা হবে, তার চূড়ান্ত পরিকল্পনা না জানালে বাহিনী পাঠাতে অসুবিধা হচ্ছে কেন্দ্রের। যুক্তি হিসাবে কেন্দ্র বলেছে, ‘‘এই বাহিনী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাবে পশ্চিমবঙ্গে। কোথায় মোতায়েন করা হবে তা না জানানো হলে কোন স্টেশনে তাদের নামতে হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। তাই ভোটের নিরাপত্তা যাতে যথা সময়ে দেওয়া যায়, তার জন্য কমিশন যেন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়।’’ কমিশন এর জবাব দিয়েছে কি না তা না-জানালেও নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ জানিয়েছেন, ‘‘কমিশনের তরফে আলাদা একটি চিঠি পাঠিয়ে কেন্দ্রকে আবার আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী রাজ্যে পাঠানোর কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

নওশাদের জোড়া মামলা

সোমবার আদালতে দু’টি মামলা হয়েছে আইএসএফ নেতা তথা ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির তরফে। প্রথম মামলাটি ছিল নওশাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত, যেটি সোমবার দুপুরে ওঠে কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চে। প্রাণনাশের হুমকির কথা জানিয়ে জ়েড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা চেয়েছিলেন নওশাদ। বিধায়কের আইনজীবী আদালতকে জানান, তাঁকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়নি কেন্দ্র। জ়েড ক্যাটেগরি চাইলেও তাঁকে ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। আদালত অবশ্য নওশাদকে জানিয়ে দেয়, কোর্ট তাঁর নিরাপত্তায় নজরদারি করে যদি দেখে তা পর্যাপ্ত নয়, তবেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে। এর পরে সন্ধ্যায় নওশাদ একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন কলকাতা হাই কোর্টে। নওশাদ সেখানে বলেন, ‘‘আদালত বলেছিল ২০১৩ সালের মতো কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাতে। অথচ এখনও পর্যন্ত স্রেফ ৩৩৭ কোম্পানি বাহিনীর অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে। অথচ রাজ্যে গত দশ বছরে জেলার সংখ্যা বেড়েছে, ভোটার এবং বুথের সংখ্যাও বেড়েছে। তাই পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী না দেওয়া হলে ২০১৩ সালের মতোই কয়েক দফায় ভোট করানো হোক।’’ নওশাদ জানান, রাজ্যের ভোটকেন্দ্র এবং ভোটারদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই তিনি এই প্রস্তাব দিচ্ছেন। তবে নওশাদের এই বক্তব্যে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর ছায়া দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। তাঁরা বলছেন, এর আগে শুভেন্দুও এই একই যুক্তিতে কমিশনের ৮২২ কোম্পানি বাহিনী চাওয়ার বিরুদ্ধে আদালতে যেতে চেয়েছিলেন।

নিরাপত্তা চেয়ে মামলা কংগ্রেসের

ভোটের ফলপ্রকাশ হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন পঞ্চায়েতে মনোনয়ন জমা দেওয়া ১৭ জন কংগ্রেস প্রার্থী। তাঁদের অভিযোগ, প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রাণের ভয়ে তাঁরা প্রচারের কাজ করতেও পারছেন না। মালদহের মানিকচক ব্লকের ১৫ জন গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ২ জন পঞ্চায়েত সমিতি আসনের প্রার্থী নিরাপত্তার জন্য আবেদন করেন। মঙ্গলবার এই মামলা শুনবে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি মান্থার বেঞ্চ।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন নয়: কোর্ট

ভাঙড়ে যে ৮২ জন প্রার্থীর নাম মুছে গিয়েছে, তাঁদের ২৮ জুনের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে বলে জানাল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের বেঞ্চ। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এ ভাবে কোনও আসনে নির্বাচন হতে পারে না।’’ প্রত্যেকের অভিযোগ আলাদা করে খতিয়ে দেখতে হবে।

রাজীবের নিয়োগ নিয়ে মামলা

সোমবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহের নিয়োগ নিয়ে একটি মামলা হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস তাঁর ‘হতাশা’র কথা জানিয়েছেন। এমনকি, রাজীবের ওই পদে নিয়োগে ছাড়পত্র দেওয়ার পরেও তাঁর কাজে যোগদান রিপোর্ট (জয়েনিং রিপোর্ট)-এ সই করেননি রাজ্যপাল বোস। যদিও রবিবার রাজভবনে কমিশনার এবং রাজ্যপালের বৈঠক হয়। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে কমিশনারকে নিরপেক্ষ কাজ করার কথা বলেছেন রাজ্যপাল। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাজীবের নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে সোমবার একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন এক আইনজীবী।

পঞ্চায়েতে সিবিআই নয়

মনোনয়নপত্রে নথি বিকৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন বিরোধীরা। সেই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ। একক বেঞ্চের সেই নির্দেশ খারিজ করে দিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সোমবার বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, এই মামলাটি সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করছে না আদালত। বদলে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, ‘‘অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দে-র নজরদারিতে এই মামলার তদন্ত করবে রাজ্য পুলিশ। এক সদস্যের এই কমিশনকে সব রকম সাহায্য করতে হবে রাজ্যকে।’’ একই সঙ্গে তিন সপ্তাহ পরে নথি বিকৃতির অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট একক বেঞ্চে জমা দিতে হবে বলেও জানায় ডিভিশন বেঞ্চ।

WB Panchayat Election 2023 crpf CBI Calcutta High Court State Election Commission

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}