কলেজ স্ট্রিটে সংবর্ধনা আলেইদা গেভারাকে। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
শহরে আসা ইস্তক ছুটে বেড়াচ্ছেন চে-তনয়া আলেইদা গেভারা। সকালে গিয়েছিলেন উত্তরপাড়ায়। দুপুরে কলেজ স্ট্রিটে। সন্ধ্যায় এনআরএস হাসপাতালে বঙ্গের চিকিৎসকদের সঙ্গে এক ঘণ্টা আলাপচারিতার কথা ছিল তাঁর। প্রথম দুটি অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে উতরে গেলেও ছেদ পড়ল সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে। শ্বাসকষ্টের কারণে দশ মিনিটে অনুষ্ঠান সেরে বেরিয়ে গেলেন আলেইদা। ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস-এর তরফে অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ওঁর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আছে। কলকাতার দূষণের কারণে সেই সমস্যা বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া সত্ত্বেও উনি বক্তৃতা করেছেন।’’
এ দিন এনআরএস-এর সিস্টার নিবেদিতা সভাগৃহে মাস্কে মুখ ঢেকেই আলেইদা বলেন, ‘‘বিশ্বের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত হতে হবে। যাতে সব মানুষ সব ধরনের চিকিৎসার সুযোগ পান।’’ ভারতের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশের পাশাপাশি কিউবার স্বাস্থ্য ব্য়বস্থার কথা জানাতেও ভোলেননি তিনি। আলেইদা বলেন, ‘‘কিউবায় চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যে ভেদাভেদ করা হয় না। সকলেই একই পরিষেবা পান। ক্যানসার, টিকাকরণ এবং শল্য চিকিৎসায় কিউবায় অনেকউন্নতি হয়েছে।’’
সন্ধ্যার অনুষ্ঠান তড়িঘড়ি শেষ হলেও বাকি দু’টি অনুষ্ঠানে কিন্তু উৎসাহের ঘাটতি ছিল না। বিশেষত কলেজ স্ট্রিটে চে-র কন্যাকে ঘিরে মানুষের উৎসাহ ছিল দেখার মতো। রাস্তা জুড়ে মঞ্চ বাঁধার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। কলেজ স্কোয়্যারের দিকে পিঠ করেই শনিবার তাই এক চিলতে মঞ্চ বেঁধেছিল, চে-কন্যা আলেইদা ও তাঁর দৌহিত্রী এস্তাফানিয়া মাচিন গেভারাকে এ দেশে নিয়ে আসার আয়োজক ‘সারা ভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থা’ (এআইপিএসও)।
সেই এক চিলতে মঞ্চেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আলেইদা। এ দিকে তখন উত্তুরে হাওয়ায় হই হই করে উড়ছে দীঘল এক পতাকা। যার মাঝে কালো রেখায় আঁকা চে গেভারার চেনা ছবি। ভ্রুয়ের কাছাকাছি নেমে এসেছে টুপিটা। দু’চোখে যেন চুপ করে আছে স্থির এক সংকল্প। সেই ছবির দিকে তাকিয়ে আলেইদা বললেন, ‘‘ওই চোখে যে সংকল্প দেখছেন, ওটাই পথ। আমাদের আগামী দিন ওই চোখেই অপেক্ষা করে আছে!’’ এ দিন কলেজ স্ট্রিটে জনস্রোত দেখা গিয়েছে। হেদুয়ার বিজ্ঞান মেলাতেও গিয়েছিলেন আলেইদা। শুধু বামপন্থীরা নয়, চে গেভারার স্মৃতি বয়ে আনা মেয়েকে দেখতে এসেছিলেন বহু প্রবীণ মানুষও। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘আমাদের কলেজবেলার কথা বুঝি মনে পড়ে যাচ্ছে!’’ আলেইদাও তাই বলছেন, ‘‘এমন আবেগ আছে বলেই এ শহর আমার কাছে এত দিন পরেও খুব চেনা লাগছে। এমন উষ্ণতা আছে বলেই এ শহরকে এত ভালবাসি।’’
সকালে উত্তরপাড়ার গণভবনের দর্শকরা মজে রইলেন চে গেভারার কন্যা, কিউবাবাসী চিকিৎসক আলেইদা বলেন, ‘‘এই শহর ভালবাসার শহর। কিউবার মানুষের প্রতি এ শহরের বিশেষ এক অনুভূতি আছে। আমি মুগ্ধ, আবার আসব আমি।’’ এ দিন সারা ভারত বিশ্ব শান্তি ও সংহতি সংস্থা-সহ বিভিন্ন বাম গণ-সংগঠনের শোভাযাত্রা করে বালিখাল থেকে আলেইদাকে আনা হয় ওই প্রেক্ষাগৃহে। হুগলি জেলা আইপিটিএ-এর সদস্যরা লাতিন আমেরিকার মুক্তি সংগ্রামের উপর সমবেত কণ্ঠে একটি গণসঙ্গীত গেয়ে শোনান। কলেজ স্ট্রিটের অনুষ্ঠানে আলেইদাকে সংবর্ধনা দেয় এসএফআই, ডিওয়াইএফ, সিপিআই(এমএল)-এর পাশাপাশি সেভ ডেমোক্রেসি, জননাট্য মঞ্চ, গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের মতো বিভিন্ন গণ সংগঠনের পক্ষ থেকেও তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy