বিনীত গোয়েল। — ফাইল চিত্র।
জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সোমবার রাতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ থেকে বিনীত গোয়েলকে সরানো হবে। রদবদল করা হবে পুলিশের অন্যান্য পদেও। মঙ্গলবারই সেই সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। সেই মতো মঙ্গলবার দুপুরে নবান্নের তরফে এক নির্দেশিকা জারি করে জানানো হল, কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ থেকে সরানো হল বিনীতকে। তাঁকে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএএফ)-এর এডিজি করা হয়েছে। সেই সঙ্গেই পুলিশের শীর্ষপদে করা হয়েছে বেশ কিছু রদবদল।
কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে বিনীতকে সরিয়ে সেই জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মনোজ বর্মাকে। তিনি ছিলেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)। তাঁর জায়গায় নতুন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) করা হয়েছে জাভেদ শামিমকে। তিনি এত দিন ছিলেন রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (আইবি)-এর এডিজি। ওই পদে বসানো হয়েছে জ্ঞানবন্ত সিংহকে। তিনি এত দিন ছিলেন ডিরেক্টরেট অফ ইকোনমিক অফেন্সেস-এর ডিরেক্টর। রাজ্য পুলিশের এডিজি (এসটিএএফ) পদে এত দিন ছিলেন ত্রিপুরারি অথর্ব। তাঁকে ডিরেক্টরেট অফ ইকোনমিক অফেন্সেস-এর ডিরেক্টর পদে বসানো হয়েছে।
একই সঙ্গে কলকাতা পুলিশের ডিসি (উত্তর) অভিষেক গুপ্তকে সরিয়ে পাঠানো হয়েছে ইএফআরের সেকেন্ড ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার পদে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ যে থানার আওতায়, সেই টালার দায়িত্ব এই ডিসি (উত্তর)-র উপর। অভিষেকের জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে দীপক সরকারকে। তিনি শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) ছিলেন।
গত ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে এক চিকিৎসক পড়ুয়ার দেহ উদ্ধার হয়। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ উঠেছে। ওই দিন থেকে কর্মবিরতিতে রয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁরা পাঁচ দফা দাবি নিয়ে সরব হয়েছেন। সেই পাঁচ দফার মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল, কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ থেকে বিনীতের অপসারণ। পাশাপাশি ছিল ডিসি (উত্তর) অভিষেককেও অপসারণের দাবিও। সেই দুই দাবিই মেনে নিয়েছিলেন সোমবার জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকে মেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী।
এর আগে কমিশনার পদ থেকে বিনীতকে সরানোর দাবি নিয়ে লালবাজার অভিযান করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেখানে গিয়ে বিনীতের সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন তাঁরা। দিয়েছিলেন প্রতীকী মেরুদণ্ডও। এই আবহে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সিপি অনেক বার এসেছিলেন পদত্যাগ করার জন্য। কিন্তু তিনি তা করতে দেননি। কেন, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘সামনে পুজো রয়েছে। আপনারাই বলুন, যিনি দায়িত্বে থাকবেন, তাঁকে তো আইনশৃঙ্খলা জানতে হবে। কিছু দিন ধৈর্য ধরলে কী মহাভারত অশুদ্ধ হয়!’’
বিনীত যদিও আরজি কর কাণ্ডের আবহে বার বার দাবি করেছিলেন, কলকাতা পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপ করেছে। তিনি জানিয়েছিলেন, গোটা ঘটনায় তিনি ‘ক্রুদ্ধ’। বলেছিলেন, “কলকাতা পুলিশ কী করেনি! আরজি করের ঘটনার তদন্তের জন্য পুলিশ সব কিছু করেছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে এই কথা বলছি। আমার সহকর্মীরা দিন-রাত এক করে দিয়ে এই তদন্তের কিনারা করার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা প্রমাণ সংগ্রহে কোনও রকম ত্রুটি রাখেননি। ইতিমধ্যেই মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা পরিবারের ওই চিকিৎসকের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। নানা রকম গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও ১৪ অগস্ট মেয়েদের রাতদখলের কর্মসূচি ঘিরে যে ‘হিংসা’র ঘটনা হয়েছিল, সেই নিয়ে ব্যর্থতা মেনে নিয়েছিলেন তিনি। ১৬ অগস্ট সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি জানিয়েছিলেন, স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কোনও জমায়েত হলে, তা নিয়ন্ত্রণ করা তুলনামূলক কঠিন হয়। কারণ, সেখানে কোনও নেতা থাকে না। সারা শহর জুড়ে সে দিন নানা রকম জমায়েত হয়েছিল। সর্বত্র নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে হয়েছিল পুলিশকে। কিন্তু আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে শহরজোড়া এই জমায়েত শান্তিপূর্ণ হবে বলেই মনে করেছিল পুলিশ। সিপি জানান, আন্দোলন যে হিংস্র হয়ে উঠবে, তা পুলিশ আন্দাজ করতে পারেনি। তাঁর কথায়, ‘‘একে আমাদের ব্যর্থতা বললে বলতে পারেন।’’ এ বার আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের দাবি মেনে কলকাতার কমিশনার পদ থেকে সরানো হল বিনীতকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy