চেন্নাই থেকে কলকাতাগামী লরিতে হানা। পশ্চিম মেদিনীপুরে লুট ১০ কোটি টাকার আইফোন। —প্রতীকী ছবি
চলন্ত লরি থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকার আইফোন লুট। ফিল্মি কায়দায় চুরি করা হয় মোবাইলগুলি। সেগুলি চেন্নাই থেকে কলকাতার দিকে লরিতে করে আনা হচ্ছিল। বাংলায় ঢোকার পরেই মোবাইলগুলি চুরি করা হয় বলে অভিযোগ। চুরির পুরো ঘটনা শুনে স্তম্ভিত কলকাতা হাই কোর্ট। এজলাসে উপস্থিত অনেকে মনে করছেন, যেন বলিউড সিনেমার গল্প বলছেন মামলাকারীর আইনজীবী। এমনকি পুলিশ জানতে পেরেছে চুরি যাওয়া অনেক মোবাইল এখন চালু রয়েছে। অর্থাৎ, দু’মাস আগে লুট হওয়া অনেক মোবাইল কালোবাজারে বিক্রিও হয়ে গিয়েছে। এই পুরো ঘটনায় জেলার পুলিশ সুপারের নজরদারিতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর চেন্নাই থেকে একটি লরি মোট ৯.৭০ কোটি টাকা মূল্যের অ্যাপলের আইফোন নিয়ে রওনা হয়। সেটির গন্তব্য ছিল কলকাতা। লরির গতিবিধির উপর নজরদারি করতে অত্যাধুনিক ‘জিপিএস সিস্টেম’ ব্যবহার করে পরিবহণ সংস্থাটি। ফলে লরিটি ৫ মিনিটের বেশি কোথাও দাঁড়ালে সতর্কবার্তা পৌঁছে যাবে পরিবহণ সংস্থার অফিসে। সেই মুহূর্তে অফিস থেকে গাড়ির চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। তাঁকে গাড়ির অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হবে অফিসকে। অভিযোগ, লরিটি রওনা হওয়ার পরের দিন তিনটি রাজ্য পেরিয়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে। অফিস জানতে পারে, ওই বছর ২৮ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের নতুন বাজার এলাকার একটি পেট্রল পাম্পে লরিটি ৫ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে রয়েছে। তখনই চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু লরির চালককে বার বার ফোন করা হলেও তিনি তোলেননি। এমতাবস্থায় ৪৫ মিনিট পরে ডেবরা থানায় খবর দেয় পরিবহণ সংস্থাটি। ঘটনাস্থলে গিয়ে লরিটি উদ্ধার করে পুলিশ। তারা গিয়ে দেখে লরিটি ফাঁকা। গাড়িতে কোনও আইফোন নেই। সেখানে চালক, খালাসি কাউকেই দেখা যায়নি। ফোন লুটের বিষয়ে এলাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি।
হাই কোর্টের ওই পরিবহণ সংস্থার আইনজীবী অপলক বসুর সওয়াল, অনুমান করা হচ্ছে চলন্ত অবস্থাতেই ওই লরি থেকে আইফোনগুলি চুরি করা হয়েছে। কারণ, তার আগে গাড়িটি কোথাও দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে পড়েনি। এ রাজ্যে ঢোকার পরে ওই লরির পাশাপাশি আরেকটি লরি চলে আসে। দু'টি গাড়ি দীর্ঘ ক্ষণ একই গতিতে পাশাপাশি এগিয়ে চলে। ওই অবস্থাতেই ফোনগুলি লুট করা হয়ে থাকতে পারে। ওই কাজটি ডেবরার টোলপ্লাজার আগে সম্পূর্ণ করা হয়েছে, যাতে টোলপ্লাজায় গাড়িগুলির যোগসাজশ শনাক্ত করা না যায়। পরিকল্পনামাফিক টোলপ্লাজা পার হওয়ার পরে গাড়িটি ফেলে রেখে চালক, খালাসি চম্পট দেয়। ওই আইনজীবীর দাবি, মূলত নিরাপত্তার উপর অনেক বেশি জোর দেয় আইফোন। লুটের পরে ফোনগুলি যাতে কালোবাজারে না যায় বার বার পুলিশকে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। তারা তা করতে পারেনি। এমনকি প্রথমে পুলিশ এফআইআর পর্যন্ত নেয়নি। পরে গত ১০ অক্টোবর ওই ঘটনায় এফআইআর দায়ের হয়। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ সঠিক ভাবে তদন্ত করছে না বলে অভিযোগ তুলে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় পরিবহণ সংস্থাটি। গত বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে তাদের আইনজীবীর বক্তব্য, সারা দেশ জুড়ে পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত ওই সংস্থাটি। ওই ক্ষেত্রে তাদের সুনাম রয়েছে। কিন্তু এই কোটি টাকার আইফোন লুট সংস্থার ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। তিন মাসের আগের ওই ঘটনায় ঠিকঠাক তদন্ত করছে না পুলিশ। এর তদন্তভার সিআইডি বা অন্য কোনও সংস্থাকে দেওয়া হোক। যদিও রাজ্য ওই দাবি অস্বীকার করে। তাদের আইনজীবী জানান, এফআইআর দায়ের হওয়ার পরে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ওই ঘটনায় অনেক ফোনের 'আইএমইআই কোড' তারা নিষ্ক্রিয় করেছে। আবার অনেক ফোন কালোবাজার মারফত বিক্রিও হয়ে গিয়েছে। দিল্লিতে কয়েকটি ফোনের সন্ধান মিলেছে। এই অবস্থায় দিল্লিতে গিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপারের পক্ষে তদন্ত করা সম্ভব নয়।
বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের নির্দেশ, আপাতত জেলার পুলিশ সুপারকে এই তদন্তে নজরদারি করতে হবে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি। ওই দিন পুলিশকে তদন্তের অগ্রগতি আদালতকে জানাতে হবে। মামলার কেস ডায়েরি নিয়ে হাজির হতে হবে পুলিশকে। তাঁর পর্যবেক্ষণ, মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy