প্রতীকী ছবি।
নভেম্বরে বেলঘরিয়া থেকে দুই তুর্কি নাগরিক-সহ চার এটিএম জালিয়াতকে কব্জা করে ত্রিপুরা পুলিশ। তারা কি কলকাতার ফাঁকা এটিএম কাউন্টারগুলিতে ‘স্কিমিং’ যন্ত্র বসাতে এসেছিল? এটিএম জালিয়াতির তদন্তে এই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। সন্দেহভাজনদের ছবি থেকে সন্দেহ জোরালো হয়েছে। দিল্লিতে লালবাজারের ব্যাঙ্ক-জালিয়াতি দমন শাখার অফিসারেরা স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিয়ে তল্লাশি চালালেও বুধবার রাত পর্যন্ত আর কেউ গ্রেফতার হয়নি।
লালবাজারের বক্তব্য, গত বছরের মে মাসে রোমানীয় গ্যাংয়ের আট জন ধরা পড়লেও চাঁই আন্দ্রে লুল্লুর নাগাল পায়নি পুলিশ। এ বারের প্রতারণায় এক সন্দেহভাজনের সঙ্গে তার ছবির মিল আছে। ওই জালিয়াতেরা নেপাল থেকে এসেছিল কি না, তা দেখা হচ্ছে। তেলঙ্গানা পুলিশ নভেম্বরে এটিএম-কাণ্ডে ভার্জিল ও জর্জ নামে দুই রোমানীয়কে গারদে পুরেছে। দিল্লিতে একটি চিনা ই-কমার্স ওয়েবসাইটে ‘কার্ড কপিয়ার মেশিন’, ক্যামেরা এবং ব্ল্যাঙ্ক কার্ড কেনার পরে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। কেরলেও অনেকে এই জালিয়াতির শিকার। সব ক’টি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা-ও যাচাই করা প্রয়োজন।
গোয়েন্দা-প্রধান মুরলীধর শর্মা জানান, ৭০টি অভিযোগ (তার মধ্যে যাদবপুরের ৪৯টি এবং চারু মার্কেট এলাকার ১৬টি) এসেছে। কড়েয়া, পর্ণশ্রী, নেতাজিনগর, উল্টোডাঙার অভিযোগও আছে। লোপাট প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা। তবে পুলিশের বক্তব্য, এর মধ্যে সবই ‘স্কিমিং’ বা কার্ড ‘ক্লোন’ করার ঘটনা না-ও হতে পারে। বিভিন্ন নম্বর থেকে অনেকে এসএমএস পাচ্ছেন, যাতে নম্বর ভেরিফিকেশন বা সহজে ঋণ দেওয়ার নাম করে একটি লিঙ্ক থাকছে। ভুক্তভোগীরা জানান, সেই লিঙ্ক খোলার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, অনেকেই মোবাইল থেকে টাকা লেনদেন করেন। ওই লিঙ্কের মাধ্যমে জালিয়াতেরা সেই লেনদেন এবং ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত তথ্য হাতিয়ে অনলাইন মারফত টাকা গায়েব করে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: ধনখড় যাচ্ছেন বিধানসভায়, সঙ্গে কাউকে পাবেন কি?
২০১৮ সালের মে মাসে কার্ড জালিয়াতির পরে ব্যাঙ্ক ও পুলিশের বৈঠকে সুরক্ষা বিধি আরোপের কথা উঠেছিল। কিন্তু এখনও বহু এটিএম অরক্ষিত। সিসি ক্যামেরার অবস্থাও তথৈবচ। ফলে দুষ্কৃতীরা অবাধে স্কিমিং যন্ত্র বসিয়ে তথ্য চুরি করতে পারছে। প্রশ্ন উঠছে, ব্যাঙ্কগুলির বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না কেন?
সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, গ্রাহকের টাকা এবং তথ্য সুরক্ষার দায় সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের। সে-দিক থেকে ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ আইনি দায়দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।
গোয়েন্দারা জানান, এটিএম কার্ডের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র (ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ) বা চিপে ব্যাঙ্ক ও ব্যবহারকারীর তথ্য থাকে। এটিএমের যে-অংশে কার্ড ঢোকাতে হয়, দুষ্কৃতীরা সেখানে ‘কার্ড কপিয়ার’ যন্ত্র এবং এটিএমের ‘কি-প্যাডে’ খুদে ক্যামেরা বসিয়ে দেয়। এটিএমে কার্ড ঢোকালেই তার সব তথ্যের প্রতিলিপি তৈরি হয়ে যায় সেই যন্ত্রে। গ্রাহকের ‘পিন’ ধরা পড়ে খুদে ক্যামেরায়। যন্ত্র খুলে নিয়ে ল্যাপটপের সাহায্যে ফাঁকা কার্ডে সেই তথ্য ভরে এটিএম কার্ডের ‘ক্লোন’ তৈরি করা হয়। কখন কার্ডের তথ্য চুরি হয়েছে, তার সঙ্গে মিলিয়ে ক্যামেরা থেকে চিহ্নিত করা হয় ‘পিন’। তার সাহায্যে এটিএমের টাকা তুলে নেয় দুষ্কৃতীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy