Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Partha Chatterjee

পার্থের সংস্থার ডিরেক্টর! ইডি-র প্রশ্নে ওঁরা হতবাক

তদন্তকারীদের বক্তব্য, জালিয়াতি ও প্রতারণার জন্য গরিবদের তথ্য হাতানোর কৌশল নেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিতে মানুষ স্থানীয় বিধায়কের দফতরে যান।

রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:১৬
Share: Save:

তাঁদের কেউ দিনমজুর, কেউ বা রিকশাচালক এবং প্রত্যেকেই হতদরিদ্র আর অল্পশিক্ষিত। তাঁদের মতো দিন-আনা-দিন-খাওয়া মানুষের নাম যে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিভিন্ন সংস্থার ডিরেক্টর হিসাবে রয়েছে, ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তদন্তকারীদের কাছে তা জানতে পেরে তাঁরা আকাশ থেকে পড়েছেন।

তদন্তকারীদের অভিযোগ, পার্থের বিধানসভা কেন্দ্র বেহালা পশ্চিমের এমন অনেক দীনদরিদ্র, অল্পশিক্ষিত মানুষকে নিজের বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থার ডিরেক্টর করেছিলেন এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতি কাণ্ডে জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। ওই বাসিন্দাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। তখনই নানা সংস্থার ডিরেক্টর পদে তাঁদের নাম আছে জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেন তাঁরা। ওই সব দিনমজুর ও হতদরিদ্র মানুষের দাবি, তাঁরা যে কোনও সংস্থার ডিরেক্টর, তা তাঁদের জানা নেই। ওই সব পদের অধিকারী হিসাবে তাঁরা কখনও কোনও টাকাও পাননি। শুধু কোনও এক সময়ে তাঁদের দিয়ে এক ধরনের কাগজে টিপসই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন রিকশাওয়ালাও রয়েছেন।

তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, এমন কয়েক জনকে পাওয়া গিয়েছে, যাঁরা কয়েক মাস ধরে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। তবে সেই টাকা যে তাঁরা কোনও সংস্থার ডিরেক্টর হিসাবে পেয়েছেন, সেটা তাঁদের জানা ছিল না। তদন্তকারীদের

দাবি, ওই সব লোককে দিয়ে কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল। নেওয়া হয় তাঁদের প্যান কার্ডের সবিস্তার তথ্যও। টাকা দেওয়ার সময় তাঁদের নাকি বলা হয়েছিল, সই করেছেন বলেই টাকা দেওয়া হচ্ছে। কাউকে কাউকে বলা হয়েছে, সরকারিপ্রকল্পে টাকার একটি অংশ তাঁদের দেওয়া হল।

তদন্তকারীদের দাবি, ওই সব ভুয়ো সংস্থার ৫০ জনেরও বেশি ডিরেক্টরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কী ভাবে জালিয়াতি করে হরেক কিসিমের ভুয়ো সংস্থা খোলা হয়েছিল, সেই জিজ্ঞাসাবাদের পরেই তা স্পষ্ট হয়।

তদন্তকারীদের বক্তব্য, জালিয়াতি ও প্রতারণার জন্য গরিবদের তথ্য হাতানোর কৌশল নেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিতে মানুষ স্থানীয় বিধায়কের দফতরে যান। অনেকে হাজির হন সার্টিফিকেট নিতে। সেই সময় আধার কার্ড, প্যান কার্ড এবং অন্যান্য নথিও জমা দিতে হয়। বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক পার্থের দফতরেও স্থানীয় বহু গরিব ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের নথিপত্র জমা পড়েছিল। ইডি-র অভিযোগ, ভুয়ো সংস্থা খুলে টাকা পাচার করতে সেই সব নথিই ব্যবহার করা হয়েছে।

তদন্তে ইডি জেনেছে, এসএসসি দুর্নীতিতে সরকারি চাকরি বিক্রির কালো টাকা প্রায় ২০১টি ভুয়ো সংস্থায় বিনিয়োগ করে করে সাদা করা হয়েছিল। জেল হেফাজতে থাকা পার্থ-বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে জেরা করে ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার কৌশল জানা গিয়েছে। ভুয়ো সংস্থা মারফত শেয়ার কেনাবেচার মাধ্যমে প্রায় তিন কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

ওই সব ভুয়ো সংস্থা তৈরিতে পার্থ-ঘনিষ্ঠ কলকাতা পুরসভার এক কাউন্সিলর এবং আলিপুর আদালতের এক আইনজীবী জড়িত বলে তদন্তে জানতে পেরেছে ইডি। তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, যে-সব গরিব মানুষের প্যান কার্ড ছিল না, জালিয়াতি করার জন্য ভোটার ও আধার কার্ডের নথির ভিত্তিতে তাঁদের প্যান কার্ডও তৈরি করা হয়েছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বল্পশিক্ষিত গরিব মানুষগুলির আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি যাঁর নথিপত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তাঁর বদলে অন্য কারও আঙুলের ছাপ দিয়ে প্যান কার্ডের আবেদনের নথি প্রস্তুত করা হয়েছিল বলেও তদন্তে উঠে এসেছে। প্যান কার্ডের আবেদনে আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হলে আদালত থেকে নোটারি সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়। তদন্তকারীদের সন্দেহ, কিছু ক্ষেত্রে জাল নোটারি সার্টিফিকেট ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। তাই পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অর্পিতাকে জেরার ভিত্তিতে তদন্তকারীদের দাবি, ওই সব সংস্থার ‘মূল নিয়ন্ত্রক’ ছিলেন পার্থ। ওই সব সংস্থার লেনদেনের যাবতীয় বিষয় যে পার্থ সরাসরি দেখাশোনা করতেন, তারও প্রামাণ্য নথি মিলেছে। ওই সব ভুয়ো সংস্থার পূর্ণাঙ্গ নথির বিষয়ে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের রেজিস্ট্রার অব কোম্পানিজ় (আরওসি)-কে তাঁরা চিঠি দিয়েছেন বলে তদন্তকারীরা জানান।

ইডি-র আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র বলেন, ‘‘২০১টি ভুয়ো সংস্থার হদিস মিলেছে। আরও ভুয়ো সংস্থার খোঁজ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Chatterjee SSC recruitment scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy