জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।
দাবার বোর্ডের দু’দিকে বসে যেমন স্নায়ুর যুদ্ধ চলে, তাঁদের সঙ্গে মন্ত্রীর সে রকম স্নায়ুর যুদ্ধ চলছে বলে ইডি সূত্রের দাবি।
দু’দিন হল হাসপাতাল থেকে ইডির হেফাজতে এসেছেন রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু। বর্তমান বনমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল জানাচ্ছে, কখনও স্মিত, কখনও উচ্চকিত হাসিতে সামনে বসা মানুষকে আপন করার স্বভাবসুলভ চেষ্টা রয়েছে বালুর। তদন্তকারীদের সামনে বসেও তিনি সেই কৌশল নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে ইডি সূত্রের দাবি। তদন্তকারীদের দাবি অনুযায়ী, যত অভিযোগ আসছে, সেগুলির সঙ্গে তিনি যুক্ত নন বলে বার বার দাবি করছেন তিনি। আর তদন্তকারীরা তুলে ধরছেন বাকিবুর রহমান-সহ তাঁর ঘনিষ্ঠদের লিখিত বয়ান এবং অন্য ‘প্রমাণ’। ইডি সূত্রের দাবি, যার বেশিরভাগ জুড়ে রয়েছে ‘মন্ত্রীর নাম’।
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, এখনও পর্যন্ত যে ২০টি মোবাইল উদ্ধার হয়েছে, তার হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা তদন্তের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেই সব বার্তা মন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হলে তিনি ‘চুপ’ করে যাচ্ছেন বলে ইডি সূত্রের দাবি। দফায় দফায় বাকিবুরের কাছ থেকে মন্ত্রী নগদ টাকা নিয়েছিলেন— এমন অভিযোগের সপক্ষে নথিও তাঁর সামনে পেশ করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রের দাবি।
ইডির এক কর্তা জানিয়েছেন, মন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের শিলং, মরিশাস এবং আমেরিকা ভ্রমণের টিকিটের ব্যবস্থা যে বাকিবুর করতেন, তা প্রাথমিক ভাবে মন্ত্রী মানতে না-চাইলে তাঁর সামনে সংশ্লিষ্ট ভ্রমণ সংস্থার মালিকের লিখিত বয়ান-সহ ‘প্রমাণ’ তুলে ধরা হয়েছে। ইডি সূত্রের অভিযোগ, রেশন দুর্নীতির কালো টাকায় সেই ভ্রমণের খরচ দেওয়া হয়েছে। তবে আমেরিকা যাওয়ার টিকিট বাতিল করা হয় বলেও লিখিত বয়ান দিয়েছেন ওই ভ্রমণসংস্থার মালিক।
বুধবারও মন্ত্রীর আপ্ত সহায়ক অমিত দে তদন্তকারীদের কাছে বয়ান লিপিবদ্ধ করেছেন। ইডি সূত্রের দাবি, অমিতকে মন্ত্রীর মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
কোথায়, কখন, কোন জায়গায় মন্ত্রী বাকিবুরের সঙ্গে বৈঠক করে সংস্থা খোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার দিন ও তারিখ উল্লেখ করে মন্ত্রীরই এক আপ্ত সহায়ক লিখিত বয়ান দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। ওই বয়ানও মন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হয়েছে বলে ইডি সূত্রের দাবি।
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, বাকিবুরের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ ছিল না, বরং এক আপ্ত সহায়কের সঙ্গে বাকিবুরের ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে জেরার প্রথম পর্যায়ে দাবি করছিলেন বালু। কিন্তু ওই আপ্ত সহায়কের বয়ান-সহ একাধিক ‘পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ ও নথি’ সামনে নিয়ে আসার পরে মন্ত্রী কার্যত বেকায়দায় পড়ে গিয়েছেন বলে ইডি সূত্রের দাবি। ইডি সূত্রের দাবি, দুর্নীতির কালো টাকা বিভিন্ন সম্পত্তিতে বিনিয়োগ ও নানা সংস্থা খুলে কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত বাকিবুর ও মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আট জন হিসাবরক্ষকের হদিস পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনের বয়ান লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ওই হিসাবরক্ষকদের লিখিত বয়ানও মন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হয়েছে।
আদালতের নির্দেশ মতো বুধবার সকালে কলকাতার কমান্ড হাসপাতালে জ্যোতিপ্রিয়ের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। বুধবারেই সেনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে অভিযোগ করেন, ওই হাসপাতাল শুধু সেনা ও তাঁদের পরিবারের চিকিৎসার জন্য। তার উপরে রোগীর চাপ মাত্রাতিরিক্ত। ফলে মন্ত্রীর চিকিৎসা নিয়মিত সেখানে করা সম্ভব নয়। আজ, বৃহস্পতিবার ফের শুনানি রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy