Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
BJP

বিজেপি-র গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তাল বর্ধমান, পুড়ল গাড়ি, ধুন্ধুমার আসানসোলেও

অভিযোগ, পুরনো বিজেপি কর্মীদের বাদ দিয়ে তৃণমূল থেকে আসা, দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বর্ধমানে বিজেপি-র গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে গাড়িতে আগুন।

বর্ধমানে বিজেপি-র গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে গাড়িতে আগুন। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান ও আসানসোল শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:০৮
Share: Save:

বিজেপি-র গোষ্ঠীসংঘর্ষের জেরে বৃহস্পতিবার দুপুরে অশান্তি ছড়াল দুই বর্ধমানে। বর্ধমান শহরে দলের জেলা কার্যালয়ে একটি শিবিরের সমর্থকেরা বিক্ষোভ দেখাতে বচসা শুরু হয়। আর তারপর শুরু হয় সংঘর্ষ। আগুন লাগানো হয় কয়েকটি মোটরবাইক এবং গাড়িতে। বিজেপি-র পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দীকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ।

অন্যদিকে, পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলেও বিজেপি-র অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে যুব মোর্চার বৈঠক অশান্ত হয়। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সম্পাদক তথা রাঢ়বঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন এবং স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় উপস্থিতিতেই চলে বাগ্‌বিতণ্ডা এবং বিশৃঙ্খলা। শেষ পর্যন্ত দুই নেতার চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

বর্ধমানের ঘোড়দৌড় চটির বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে দলের বিক্ষুদ্ধ গোষ্ঠীর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। এদিন পূর্ব বর্ধমান জেলার নানা এলাকা থেকে বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা জেলা কার্যালয়ে আসেন। তাঁরা জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাদের ক্ষোভ জেলা সভাপতি সন্দীপ-সহ বেশ কিছু নেতার বিরুদ্ধে। সে সময় হঠাৎ দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর সঙ্গে বিক্ষুদ্ধদের বচসা বাধে। শুরু হয়ে যায় ধুন্ধুমার। জেলা দফতরে ভাঙ্গচুর শুরু হয়। অন্যদিকে, অফিসের ছাদ থেকে ইট-পাথর-ভাঙ্গা আসবাবের টুকরো উড়ে আসতে থাকে।

এই ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে দু’পক্ষই পুলিশের উপর ইট ছোড়ে বলে অভিযোগ। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি বাইক ও দু’টি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, তাঁরা পুরনো কর্মী। দলের মার খেয়েছেন। কিন্তু যাঁদের সাথে লড়াই করে এসেছেন, তাঁদের দলে নেওয়া হচ্ছে। কোনও কথা শোনা হচ্ছে না। দলে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। তাঁরা বারবার সাংসদ থেকে দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন। কিন্তু ফল হয়নি। বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, দলীয় দফতর থেকে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী প্রথম আক্রমণ করে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় বিজেপি ততটা সংগঠিত ছিলনা। কিন্তু লোকসভা ভোট থেকে সংগঠন বাড়তে থাকে। লোকসভায় বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে জয়ী হন সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া। সম্প্রতি, বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডল বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। তা নিয়ে দলের অন্দরে ‘চোরাস্রোত’ তৈরি হয়েছে বলে খবর।

আসানসোলে বিজেপি যুব মোর্চার বৈঠকে অশান্তি।

আসানসোলে বিজেপি যুব মোর্চার বৈঠকে অশান্তি। নিজস্ব চিত্র।

পশ্চিম বর্ধমান জেলা বিজেপি-তেও মূল দ্বন্দ্ব ‘আদি বনাম নব্য’। আসানসোলে জেলা দফতরে গোলামালের সময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে বন্ধ করে দেওয়া হয় দরজা। গন্ডগোলের মধ্যেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় বিজেপি মহিলা ও যুব কর্মীদের।

বিজেপি-র আসানসোল জেলা কার্যালয়ে বরাবনি ও কুলটি বিধানসভার নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক হয়। দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বৈঠক চলাকালীন বিজেপি জেলা যুব মোর্চার সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচিকে নিয়ে আলোচনার সময় প্রথম বচসা শুরু হয়। সম্প্রতি বিজেপি জেলা যুব মোর্চার কমিটি ঘোষণা হয়েছে। তাতে বাদ পড়েছেন অনেকেই। যাঁরা বাদ পড়েছেন তাঁদের অভিযোগ, পুরনো বিজেপি কর্মীদের বাদ দিয়ে তৃণমূল থেকে আসা নিষ্ক্রিয় এবং নানা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জায়গা দেওয়া হয়েছে।

যুব মোর্চার ‘আদি’ অংশের এই অভিযোগের বিরোধিতা করেন দলে নবাগতেরা। অরবিন্দ এবং বাবুলের সামনেই যুব মোর্চার অন্তর্কলহ শুরু হয়ে যায়। গোলমালের খবর সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় যাতে ধরা না পড়ে, সে জন্য জেলা কার্যালয়ের মূল দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাংবাদিকদের ক্যামেরা বার করতে বারণ করেন জেলা বিজেপি দফতরের কর্মীরা। তারই মাঝে মাঝে ভেতর থেকে গন্ডগোলের আওয়াজ আসতে থাকে।

শেষ পর্যন্ত মাইক হাতে নিয়ে বাবুল এবং অরবিন্দ পরিস্থিতি সামাল দেন। যুযুধান দু’পক্ষকে শান্ত করে ফের বৈঠক শুরু করেন তাঁরা। বৈঠক শেষে এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে বাবুলের মন্তব্য, ‘‘সংসার বড় হলে অশান্তি ঝগড়া হয়। সেটা বড় কিছু নয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy