নন্দীগ্রামকাণ্ডে নিহতদের পরিবার।—ফাইল চিত্র।
গুলিতে জখম হয়েছিলেন। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চের সেই ঘটনার পরে কেটেছে বারোটা বছর। তবু ক্ষতিপূরণ জোটেনি। নন্দীগ্রামে গুলি চালনায় নিহত ও জখমদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে চাপানউতোর শুরু হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, নন্দীগ্রামকাণ্ডে নিহত ও আহতদের তালিকা-সহ সরকারি ক্ষতিপূরণের যাবতীয় হিসেব চেয়েছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে বিস্তারিত হিসেব দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক পার্থ ঘোষ মানছেন, ‘‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নন্দীগ্রামের ওই ঘটনায় নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণের বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছিল। আমরা রিপোর্ট পাঠিয়েছি।’’
এ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর অব্যাহত। তৃণমূল নেতা আবু তাহেরের দাবি, ‘‘আসলে বামেরা আহত ও নিহতের তালিকা নিয়ে নোংরা রাজনীতি করেছিল। তাই তালিকায় শুধুমাত্র দলের লোকজনের নামই নথিভুক্ত করা হয়।’’ সিপিএম জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির পাল্টা দাবি, ‘‘নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে আমাদের যে সব সমর্থক নিহত ও আহত হয়েছিলেন তারাই ক্ষতিপূরণ পাননি। ওই সব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে পদক্ষেপ করার আবেদন করেছিল।’’
সে দিন নিহত ১৪ জনের মধ্যে ১৩ জনের পরিচয় জানা গেলেও একজন অজ্ঞাত। হাইকোর্টের নির্দেশে নিহত ১৩ জনের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। আর আদালতের নির্দেশে আহত ১৫৯ জনকে ১ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ বরাদ্দ করেছিল। প্রশাসন সূত্রে খবর, তার মধ্যে ১৫২ জন ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। ৭ জন টাকা নেননি।
তবে কি তাঁদের জন্যই রিপোর্ট তলব করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন! জবাব মেলেনি। এই ৭ জন কারা, তা-ও স্পষ্ট নয়। ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে মিলছে না তৃণমূল নেতাদের বক্তব্যও। তৃণমূলের নন্দীগ্রাম ১ ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল বলছেন, ‘‘আহতদের মধ্যে কেউ টাকা নেননি বলে আমাদের জানা নেই।’’ তবে আহতদের কয়েকজন সরকারি ক্ষতিপূরণ পাননি বলে অভিযোগ তুলেছেন নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য-প্রাণিসম্পদ কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা স্বদেশ দাস অধিকারী বলেন, ‘‘নিহত ও আহতদের তালিকা তৈরি করেছিল তৎকালীন বাম সরকার। সেই তালিকায় আহত বেশ কয়েকজন বাদ পড়েছিলেন। তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি প্রশাসনে জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি।’’
পুলিশের গুলিতে আহত হন নন্দীগ্রামের গাংড়া গ্রামের হৈমবতী হালদার। তাঁর পেটে তিনটি গুলি লেগেছিল। দীর্ঘদিন কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। হৈমবতীর স্বামী নারায়ণ হালদারের অভিযোগ, ‘‘স্ত্রী গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি আমার চোখেও কাঁদানে গ্যাস লেগেছিল। ছেলের বুকে লেগেছিল রবার বুলেট। তবুও আমরা কেউই ক্ষতিপূরণ পাইনি।’’ গুলিতে জখম ওই গ্রামেরই মান্না পাড়ার বাসিন্দা মঞ্জুরানি মান্নার পুত্রবধূ রাধারানি মান্নাও বলেন, ‘‘শাশুড়ি গুলি খেয়েছিলেন। কিন্তু এক টাকাও ক্ষতিপূরণ পাননি।’’
কমিশনের রিপোর্ট তলবের আবহে নতুন করে উস্কে গিয়েছে এই ক্ষতিপূরণ-ক্ষোভ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy