মালগাড়ি-কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস সংঘর্ষ। উত্তরবঙ্গের রাঙাপানি স্টেশনের কাছে। —ফাইল চিত্র।
পর পর ট্রেন দুর্ঘটনায় অস্বস্তিতে রেলবোর্ড। দুর্ঘটনার উপসর্গ বুঝতে সারা দেশে সব জ়োনে ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে কোথাও ‘অস্বাভাবিকতা’ এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে কি না, তার উপর নজরদারি শুরু করল তারা। পূর্ব রেল-সহ দেশের সব কটি জ়োনকে সম্প্রতি চিঠি দিয়ে রেল বোর্ডের চেয়ার ম্যান সতীশ কুমার ‘ডেটা লগার’ যন্ত্রের রিপোর্ট দৈনিক ভিত্তিতে পর্যালোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি নির্দিষ্ট জ়োনের আওতায় থাকা ডিভিশনকে ওই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে সেখানে কোনও অস্বাভাবিকতা চোখে পড়লে তা-ও জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
রেল সূত্রে খবর, নির্দিষ্ট শাখায় সিগন্যালিং ব্যবস্থার এবং ট্রেন চলাচলের যাবতীয় খুঁটিনাটি ওই রিপোর্টে ধরা থাকে। স্টেশন মাস্টাররা কতখানি সতর্কতার সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন, তা দেখতেই ওই তৎপরতা বলে রেল সূত্রে খবর। তাঁদের ভুলে কোথাও একই লাইনে দুটি ট্রেন একই সময়ে কোনও লাইনে এসে পড়ছে কি না, তার উপরে নজরদারি করাও ওই ব্যবস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেন লাইন দিয়ে ট্রেন পারাপার করার সময় লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কোনও ট্রেনের সিগন্যাল সবুজ হয়ে যাচ্ছে কি না, তা-ও দেখা হবে। সাধারণ ভাবে স্টেশনের পরিসরের মধ্যে লুপ লাইনে কোনও ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকলে ওই একই লাইনে, একই সময়ে অন্য ট্রেন ঢোকার অনুমতি রেলের সিগন্যালিং ব্যবস্থা দেয় না। তার পরেও দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের সতর্কতা নিশ্চিত করতে চায় রেল দফতর। বিভিন্ন জ়োনের আওতায় থাকা ডিভিশনগুলি ওই রিপোর্ট ঠিক মতো যাচাই করে দেখছে কি না, তা নিশ্চিত করতে বোর্ডের পক্ষ থেকে যে কোনও সময়ে ওই রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
সিগন্যালিং এবং পয়েন্ট ব্যবস্থায় কোনও ত্রুটি থাকলে তা নিয়ে সময় মতো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না, তা-ও নিশ্চিত করা ওই তৎপরতার উদ্দেশ্য। বছর দেড়েক আগে, ওড়িশার বাহানাগা বাজারে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মেন লাইনের ট্রেন লুপ লাইনে ঢুকে পড়ে মালগাড়িকে ধাক্কা মারে। ওই ঘটনায় ২৯৫ জন যাত্রীর প্রাণহানি হয়েছিল। ওই ঘটনায় সিগন্যালিং ব্যবস্থায় উপযুক্ত নজরদারি না করার দায় স্টেশন মাস্টারের উপরেও এসে পড়েছিল। গত শুক্রবার রাতে চেন্নাইয়ে বাগমতি এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাও একই ভাবে ঘটেছে। যদিও ওই দুর্ঘটনা ঠিক কেন এবং কার ভুলে ঘটল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কয়েক মাস আগে উত্তরবঙ্গের রাঙাপানিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পরেও একাধিক অনিয়মের প্রমাণ মিলেছিল। ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের অনেকেই একাধিক সুরক্ষা বিধি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন বলে দেখা গিয়েছিল। ট্রেন চলাচল ব্যবস্থার উপর নজরদারি করার ক্ষেত্রে স্টেশন মাস্টাররা উপযুক্ত সতর্কতা বজায় রাখছেন কি না, তা দেখতেই ডেটা লগার রিপোর্ট সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে। সরাসরি দুর্ঘটনা না ঘটলেও কোথাও দুর্ঘটনা ঘটার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে কিনা তার হদিস পেতেই রেলের পক্ষ থেকে ওই উদ্যোগ বলে খবর।
তবে রেল আধিকারিকদের অন্য সূত্র বলছে, স্টেশন মাস্টার-সহ রেলের সুরক্ষা বিভাগে অন্তত ২০% পদ খালি। উপযুক্ত সংখ্যায় নিয়োগ না করায় বর্তমান কর্মীদের উপর অস্বাভাবিক চাপ পড়ছে। ভুলচুকের ঘটনা ঘটছে সেখান থেকেই। কর্মী নিয়োগ না করে নিছক নজরদারি বাড়ালে তাতে ফল মিলবে না বলেই দাবি তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy